পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রকৃতি ও মুসলমান মোতাহের হোসেন, বি-এ > প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একটা নিবিড় সম্বন্ধ আছে, সে সম্বন্ধ অস্বীকার করা আর আত্মহত্যা করা একই কথা। ঋতুপৰ্য্যায়ের মধ্য দিয়ে বার বার একটি অতিথি আমাদের দুয়ারে এসে হাজির হচ্ছে, তাকে বরণ ক’রে নেওয়ার উপরই নির্ভর করছে আমাদের জীবনের সত্যিকার আনন্দ । কিন্তু, মানুষ আজ এতটা বস্তুতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে যে, প্রকৃতির স্পর্শ এখন আর তার অস্তরে কোনো স্থরসঙ্গতি স্থষ্টি করতে পারে না। প্রকৃতি তার কাছে এখন একটা মৃত জড়পিণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই, মানুষের সমাজের দিকে চাইলে আজ স্বতঃই মনে হয়, আকাশের আলো, বনানীর শুামলিমা, আর কুসুমের লালিমা বিধাতার এক বিরাট ব্যর্থ হুষ্টি । প্রকৃতির অন্তর-তলে ফন্তুধারার মত প্রবাহিত যে গোপন প্রাণ-গঙ্গ-ধারা, তারই তরঙ্গের তালে যে মানুষের হৃদয়-গঙ্গাও আন্দোলিত, সে কথা আমরা একেবারে বিস্তৃত হয়েছি। পূর্ণিমার চন্দ্র আমাদের সুপ্তপ্রেমকে জাগ্রত করে না, শ্রাবণ শৰ্বরী হৃদয়ের ক্ৰন্দসীকে ব্যথিরে তোলে না, আর বসন্তের দখিণ হাওয়াকে দক্ষিণ না পেয়েই আমাদের নিকট হ’তে বিদায় নিতে হয় । এমনি চরম বস্তুতান্ত্রিকতার দিনে যদিও আয়োজনের মাত্র প্রয়োজনের চাইতে ঢের বেশী বেড়ে যাচ্ছে, তবুও মানুষের প্রাণের আনন্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে না মোটেই । কেন ন, মানুষ ভুলে গেছে, আনন্দ অস্তরের জিনিষ, বাইরের সরঞ্জাম তা বৃদ্ধি করতে পারে মাত্র, স্বষ্টি করতে পারে না । অন্তরকে আনন্দিত ও সরস রাখবার একমাত্র উপায় হচ্ছে বিশ্বের কীট-পতঙ্গ, তৃণ-লতা, সমস্ত কিছুর সঙ্গে একটা নিগূঢ় আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করা । তা করলেই দেখতে পাব, চন্দ্র-স্থৰ্য্য-গ্ৰহ-তারা প্রভৃতির আনন্দোৎসবে আমাদেরও নিমন্ত্রণ আছে, আর সেই নিমন্ত্রণে আমাদের হৃদয়ও আনন্দের অতিশয্যে আত্মহারা হয়ে নৃত্য করছে। সমস্ত জিনিষের মধ্যে হৃদয় প্রসারিত ক’রে দিয়ে ত৷ থেকে রস যেন মানতে পারছিনে ব’লেই আজ আমরা দীন-আনন্দহীন, আর আমাদের অস্তরের দীনতা ও আনন্দহীনতাই বাইরে নানা আকারে প্রকটিত । তাই, বাইরের দিক থেকে এই দৈন্ত দূর করবার চেষ্টা বৃথা, চেষ্টা করতে হ’বে অস্তরের দিক থেকে । এই অনস্তযৌবন! উৰ্ব্বশীর প্রণয়-প্রসাদ লাভ করতে পারলে, হয়তো শত দুঃখের মাঝেও, আমাদের অস্তুর-লোকে আনন্দের কমল ফুটে উঠত—যে আনন্দ ধূলায় গড়াগড়ি দিয়েও সার্থক, যার জন্য মুখ-আরামের পেলব শয্যার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আজকার যুগে এসব কথা বলা আর মস্তিষ্কের স্বস্থতা সম্বন্ধে শ্রোতার মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলা একই কথা । R অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ও উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ইংলণ্ডের ঘোরতর বস্তুতান্ত্রিকতার যুগে একদিন কবি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন, “The world is too much with us; late and soon, Getting and spending, we lay waste our powers: Iittle we see in Nature that is ours: We have given our hearts away, a Sordid boon.” কালধৰ্ম্মে আজ সমস্ত জগতই বস্তুতান্ত্রিকতার দিকে ঝুকে পড়েছে। কিন্তু বাংলার মুসলমান-সমাজ বস্তুহীন হ’য়েও এই বস্তুতান্ত্রিকতার দিকে যতটা এগিয়ে গেছে, যা এদেশের অন্য কোন সমাজই ততটা পারে নি। কি ধৰ্ম্মব্যাপারে, কি সমাজ-ব্যাপারে, কি জীবনের ভোগবিলাসিতায়, আমরা সৰ্ব্বদাই স্থূলতার পূজা করে আসছি। ধৰ্ম্ম আমাদের অনুভূতিহীন পদ্ধতি-সৰ্ব্বস্ব ;