পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরাণে কাল শ্ৰীযোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি ১ । পুরাণ-পাঠের প্রয়োজন আমি পুরাণ পড়িতে পড়িতে এক একবার ভাবি, সংস্কৃত বহু গ্রন্থ লুপ্ত হইয়াছে, যদি মহাভারত ও পুরাণও লুপ্ত হইত, ভারতী প্রজা কি রসদ্বারা জীবিত থাকিত । “মানব জমীন” অন্নপান দ্বারা সরস হয় না। যে-জাতির পুরাবৃত্ত অজ্ঞাত, সে-জাতির স্থিতি-রক্ষার উপায় কি থাকে যাহারা স্বকৃষ্টি ত্যাগ করিয়। পরকৃষ্টি গ্রহণ করে, তাহার কেমনে স্বর্থী হয় ? যে-গাছের মূল ছিম, উৎপাটিত, সে-গাছ কিসে বঁাচে ? কে জানে । বৈদিক পণ্ডিত বলিবেন, “কেন, বেদ থাকিলেই সব থাকিত। বেই পুরাবৃত্ত।” কিন্তু বেদ যত মহামূল্য হউক, তিন প্রধান কারণে ইহার দ্বারা পুরাণের অভাব পুরণ হইত না। (১) বেদ বোধগম্য নয় ; যত মুনি তত বেদ হইয়া দাড়াইয়াছে । ইহার কারণ বুঝি । এক কালে ও এক দেশে বেদ প্রণীত হয় নাই। সেরূপ হইলে নূতন নূতন ব্যাখ্যা হইতে পারিত না । (২) একদেশে ও কালে প্রণীত হইলেও কেবল অতি-প্রত্ন বলিয়াও ব্যাখ্যা সোজা হইত না। অন্য দেবদেবীর কথা থাক, বেদের ইন্দ্র কে, অদ্যাপি বুঝিতে পারি নাই । আমি বেদ পড়ি নাই, বেদপাঠ আমার সাধ্য ছিল না। কিন্তু, যাহারা সারা জীবন পড়িয়াছেন, বুঝাইয়াছেন, তাইাদের ব্যাখ্যাও বুঝিতে পারি না । পুরাণে আছে, “যিনি বেদাঙ্গ ও উপনিষদ সহ চারি বেদ পড়িয়াছেন,কিন্তু, পুরাণ পড়েন নাই, তিনি বিচক্ষণ হইতে পারেন না। ইতিহাস (মহাভারত) ও পুরাণ হইতে বেদজ্ঞান বৃদ্ধি করিবে। যিনি অল্পশ্রত, তাইকে বেদ ভয় করেন, যেন প্রহার করিতে আসিতেছে।” (৩) বেদ যে বহু পূৰ্ব্বকালে উচ্চারিত হইয়াছিল। কেহ বেদের আদিকাল বলিতে পারিবে না। যে যে মন্ত্র আধুনিক সেও ষে তিন চারি সহস্ৰ বৎসরের পুরাতন ! মধ্যের যোগ-সূত্র ন পাইলে বেদ ইতিবৃত্ত হইতে পারে না । মহাভারত ও পুরাণ সে স্বত্র টানিয়া আনিয়া ব্যবধান হ্রাস করিয়াছে । কিন্তু প্রাচীন যোগ-স্বত্র বলিয়াই মহাভারত ও পুরাণও সব বুঝিতে পারি না । সমগ্র মহাভারত বুঝাইয়া বলিবার পাণ্ডিত্য দেখিতে পাই না। সেকালের অষ্টাদশ বিদ্যায় পারগ ন হইলে মহাভারত বুঝিতে পারা যায় না। পুরাণ বুঝিতেও অত বিদ্যাই চাই। প্রত্যেক পুরাণ-আরম্ভে, “নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্। দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততো জয়মুদীরয়েৎ I” নারায়ণ বুঝিলাম, সরস্বতী বুঝিলাম । কিন্তু "নরোত্তম নর” কে ? এক মতে নর ও নারায়ণ নামে দুই ঋষি ছিলেন ; এক মতে নর-অজুন ; নারায়ণ—শ্ৰীকৃষ্ণ ; এক মতে নর-নারায়ণ দুই দেব, দুই পূর্ব-দেব। এক মতে নর-নর-রূপী নারায়ণ, প্রত্যেক মানুষে যে নারায়ণ বিদ্যমান । বোধ হয়, ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ও বাগ দেবী, এই তিনের জয় উচ্চারণ করিতে হইবে। কিন্তু, “বঙ্গবাসী” প্রকাশিত পুরাণের মহামহোপাধ্যায় সম্পাদক ও বঙ্গানুবাদক নারায়ণ, নর, নরোত্তম, দেবী, সরস্বতী, এই পাচকে পৃথক প্রণাম করিতে বলিয়াছেন। নারায়ণ কখনও মনিরুপ, কখনও বরাহকৃপ, কখনও নৃসিংহরূপ, আর কখনও বা গোপীবল্লভপ ধরিয়াছেন,—সব বুঝিতে পারি না। যদি বলি, পুরাতন কালের লোকগলা অতিপ্রাকৃত রহস্তে বিশ্বাস করিত, তাহা হইলে পুরাণকারকে অবিবেচক বলিতে হয়। তিনি বহুস্থানে বলিয়াছেন, “আমি এইরুপ শুনিয়াছি। কোথাও লিথিয়াছেন, “দেখিয়াছি।” পুরাণ ধমশাস্ত্রের শাখা, একথা বিস্মৃত হইতে পারা যায় না । i আরও সোজা কথায় আসি । পুরাণকারের যুগ ও ময় স্বারা বৎসর সমষ্টি করিতেন। কিন্তু, সে যুগ ও মন্থ