পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রুসেলে শতবার্ষিকী উৎসব ঐবিনয়েন্দ্র সেন এই উৎসবের কথা বলিতে হইলে আমাকে প্রথমত বেলজিয়মের ইতিবৃত্তের গোড়ার কয়েকটি কথা সংক্ষেপে বলিতে হইবে । খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে পঞ্চম চার্লস, স্পেনের রাজ ও জাৰ্ম্মেনীর সম্রাটরূপে সমস্ত ইউরোপখণ্ডে প্রভূত পরাক্রমশালী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি বলিয়৷ সুপরিচিত ছিলেন । তাহার রাজত্বকালে বেলজিয়মকে “প্রভাস বেলজিক্‌” বলা হইত। পঞ্চম চার্লসের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারস্থত্রে উহ। অষ্ট্রয়ার অস্তভূক্ত হয়, কিন্তু তাহার পরে আবার ফরাসীদের অধিকারে চলিয়া যায় । তার পর ওয়াটালুর যুদ্ধে নেপোলিয়ানের পরাজয় হইলে বেলজিয়ম নেদারল্যাণ্ডস, অর্থাং হল্যাণ্ডের অধীনে আসে । সেপ্টেম্বর মাসে হল্যাণ্ড-রজি উইলিয়মের জন্মোৎসব উপলক্ষো বেলজিয়মের ১৮৩০ খৃষ্টাব্দের প্রধান নগৰী ক্রসেলে খুব বিরাট আয়োজন হয় । কিন্তু বেল জয়মের জনসাধারণ হল্যাণ্ড-রাজের শাসনে অসগুষ্ট হুইয়। র্তাহার ‘বরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র করিতে’ছল। আর্থিক ও ব্যবসায় বাণিজ্যের শোচনীয় অবস্থা এবং উচ্ছ জ্বল-শাসনই এই রাজদ্রোহিতার কারণ। যড়যন্ত্রকারিগণ পকাশ্বাভাবে রাজদ্রোহিত কবিবার জন্য একটা উপলক্ষ্য মাত্র খুজিতেছিল এবং এই জন্মোৎসব ব্যাপারই উহা যোগাইয় তাহাদের বাসন পূর্ণ করিবার সুযোগ প্রদান করিল। দুইদিনব্যাপী উৎসবের কথা জনসাধারণে প্রচারিত হইয়াছিল, কিন্তু উৎসবের প্রথম দিন আর একটি নূতন বিজ্ঞাপনের উপর জন-সাধারণের দৃষ্টি পতিত হইল। প্রতি রাস্তায়, আলোকস্তম্ভ-সমূহে, বৃক্ষশাখায়, অট্টালিকার প্রাচীরে বড় বড় অক্ষরে লিখিত সেই রঙীন বিজ্ঞাপন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। তাহাতে লেখা ছিল – Aujourd’hui-grandial. Demain–feu d’artifice Apres demain– revolution.” অদ্য বল-নাচ ; আগামী কল্য বাজি-পোড়ান ; পরশ্ব বিপ্লব । , উৎসবের দিন এই অদ্ভুত বিজ্ঞাপন যদিও জনসাধারণের ও রাজকৰ্ম্মচারীদের মনে বিশেষ কোনো সন্দেহ আনিতে পারে নাই এবং যদিও রাজকৰ্ম্মচারীরা ইহাকে পাগলের বা দুষ্ট লোকের কাজ বলিয়া প্রচার করিয়াছিলেন, তবুও অধিকাংশের মনেই একটু ভীতির সঞ্চার হইয়াছিল । কিন্তু তাহা ক্ষণকালের জন্য । সকলে তখন উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা—নাচ, গান, আমোদ-আহলাদ সর্বত্র অফুরন্তভাবে চলিতে লাগিল । অপূৰ্ব্ব আলোকমালায় বিভূষিত সমস্ত শহরের কোথাও বিষাদের ছায়া পৰ্য্যন্ত প্রবেশ করিতে পারিল ন। প্রথম দিন বেশ কাটিয় গেল । দ্বিতীয় দিনও ভাল ভাবেই গেল। তার পর তৃতীয় দিনও যখন নিৰ্ব্বয়ে কাটিয়া গেল, তখন মানুষের মনে বিন্দুমাত্রও যা সন্দেহ ছিল তাহও দূর হইয়া গেল। ক্রমে চতুর্থ দিন, পঞ্চম দিন, যষ্ঠ দিন, এক সপ্তাহ সম্পূর্ণ নিরুপদ্রবে কাটিয়া গেল ; তখন ঐ অদ্ভুত বিজ্ঞাপন প্রচার নিশ্চয়ই কোনো পাগলের কৰ্ম্ম ব’লয়া সকলের ধারণ হইল এবং অবশেষে উহার আলোচনা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া গেল । । কিন্তু ইহার কিছুদিন পরেই ২১এ সেপ্টেম্বর সকলের ভীতি জন্মাইয়া সকলকে বিম্মিত করিয়া বিপ্লবীদের কামান রয়েল পার্কে গর্জিয়া উঠিল। ২১এ হইতে ২৩এ পৰ্য্যস্ত ঐ পার্কে ভীষণ যুদ্ধ হর এবং ইহারই কয়েকদিন পরে অ্যাণ্টোয়াপে আর একটি খণ্ডযুদ্ধে ডাচ-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে পরাভূত হইয়। বেলজিয়ম হইতে বিতাড়িত হয়। এই যুদ্ধই বেলজিয়মের স্বাধীনতা আনয়ন করে । অতঃপর ন্যাশনাল কাউন্সিল কর্তৃক রাঞ্জপদে নির্বাচিত হইয়া প্রথম লিওপোল্ড বেলজিয়মের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন । ইনিই বেলজিয়মের প্রথম স্বাধীন রাজ । লিওপোল্ড রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হইবার পর বেলজিয়ম অধিকার করিবার জন্ত "ডাচ-সৈন্ত আবার চেষ্ট করিয়াছিল এবং ক্রমাগত অগ্রসর হুইয়া ব্রুসেলের অতি এবং