পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছাত্রান্ন ‘গোধৰ্ম্ম” বর্তমান বর্ষের মাঘ সংখ্যায় শ্ৰীযুক্ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের “দ্বীপময় ভারত” প্রবন্ধের ৫৩৬ পৃষ্ঠায় দেখিলাম — “ত্যাদিপর্বের ‘গোধৰ্ম্ম বলে কি অংশ আছে,-কথাটী আমরা ভাল বুঝতে পারলুম না—সে বিষয়ে প্রশ্ন করলেন।” উক্ত বিষয় মহাভারতের, আদিপর্কে আছে —vপ্রতাপচন্দ্র রায়ের সম্পাদিত মূল, ১.৪ অধ্যায়, শ্লোক ২৪ ; শ্রদ্ধাস্পদ পণ্ডিত শ্ৰীহরিদাস সিদ্ধাস্তবাগীশ মহাশয়ের সংস্করণ, ৯৮ অধ্যায়, ২৫ শ্লোক। এই স্থলে নীলকণ্ঠ-কৃত "ভারত ভাবীপ টীকা" ও সিদ্ধাস্তবাগীশ মহাশয়-কৃত "ভারতকৌমুদী টকা” উক্ত কথার অর্থ দিয়াছেন । ঐবিমলাচরণ দেব মণিপুরী ও কুকি জাতি বৰ্ত্তমান বর্ধের ভাদ্রসংখ্যার প্রবাসীতে শ্ৰীযুত লালতুদাই রায় মহাশয় লিথিয়াছেন—“কুকি, লুসাই ও মণিপুরী একই জাতি । শারীরিক গঠনের কথা ছাড়ির দিলেও ভাষাতে এত সাদৃশ্ব আছে যে, তাহাতে স্পষ্টই উক্ত সিদ্ধান্তে পৌছান যায়।” শারীরিক গঠন সম্বন্ধে রায় মহাশয়ের এরূপ উক্তি সমুদয় মণিপুরী গতির প্রতি প্রযোজ্য নহে। মণিপুরীর। মিশ্র জাতি ; তাহদের মধ্যে যেমন অনার্ধ্য আছে, সেরূপ আৰ্য্যও অনেক আছেন । ঐতিহাসিক ব্রাউন সাহেব বলেন-মণিপুরীদের মধ্যে কেহ কেহ অনেকট। কাৰ্য্য ছাচের চেহারাবিশিষ্ট ; ইউরোপীয়দের শারীরিক গঠন যেরূপ বিভিন্ন প্রকারের, মণিপুরী স্ত্রী-পুরুষের শারীরিক গঠনও সেরূপ বিভিন্ন প্রকারের ; কাল-পিঙ্গল রঙের চুল, পিঙ্গল চক্ষু, করস। রং, উন্নত নীল ও গোলাপী গণ্ডবিশিষ্ট। স্ত্রীলোক প্রায়শঃ দেখা যায় ।” এরূপ মন্তব্যদ্বারা বুঝা যাইতেছে যে, মণিপুরীদের মধ্যে আর্য্য ছাচের চেহারাবিশিষ্ট অনেক লোক আছেন ; কিন্তু কুকি লুসাইদের মধ্যে এরূপ চেহারার লোক সচরাচর দেখা যায় না। সুতরাং লালতুদাই রায় মহাশয়ের এরাপ মস্তৃত্বা অtংশিক সত্য মাত্র । তিনি ধরিয়া লইয়াছেন-মণিপুরীদের মধ্যে মাত্র একটি ভাষা প্রচলিত ; কিন্তু আমরা যতদূর জানি তাহদের মধ্যে প্রধানতঃ দুইটি ভাষা প্রচলিত, যথা—মৈত্তেয় ভাষা ও বিষ্ণুপুরী ভাষা। মৈতের ভাষা রাজভাষী ও অধিকাংশ মণিপুরীর ঐ ভাষাতেই আলাপ করে ; বিদেশীরা ঐ ভাষাকে মণিপুরীদের একমাত্র ভাষা মনে করিয়া নানা প্রকার অঙ্গীতিকর মন্তব্য প্রকাশ রাখিয়া থাকেন। কিন্তু তাহারা যদি つ老 ు Ø £1. ವಾಣಿ $ } ৯/ o #{\'|క్ష বিষ্ণুপুরী ভাষা সম্বন্ধে একটু অনুসন্ধান করিতেন, তবে দেখিতেন— বাংলা তথা সংস্কৃতের সহিত ঐ ভাষার কতদূর সাদৃপ্ত। বলা বাহুল্য ঐ ভাষার জননী সংস্কৃত বা প্রাকৃত এবং উহা বাংলা ও অসমীয়া ভাষার ভগিনী । মৈতের ভাষা সম্বন্ধে বিদেশীদের মন্তব্য ভ্রম-প্রমাদশূন্ত নহে। এই ভাষায় যতগুলি পাৰ্ব্বত্য ভাষার শব্দ আছে, তদপেক্ষা অনেক যেণী সংস্কৃত ও প্রাকৃত শব্দ আছে। উহার কাঠামে। সংস্কৃত ব। প্রাকৃত—নাগা কুকির ভাষা নহে। সুতরাং এই ভাষার সহিত লুসাই বা কুকি ভাষার কতক সাদৃহ থাকিলেও মুলে উহা অনাৰ্য্য তাষ। নহে–চারিদিকে নাগাজতির অবস্থানহেতু পাৰ্ব্বত্য ভাষার অনেক শব্দ উহাতে প্রবেশ করিয়াছে মাত্র । অতএব ভাষার দিক দিয়াও মণিপুরীদিগকে কুকি-লুসাইর জাতি বল যুক্তিযুক্ত নহে । ঐযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল লিখিয়াছেন—“মণিপুরীর এক সময়ে বোধ হয় বৌদ্ধমতাবলম্বী ছিলেন। পরে বৈষ্ণব হইয়া যান ।... তাহাদের বর্তমান স্বভাব, প্রকৃতি ও রীতিনীতি দৃষ্টি মনে হয় যে, ইহাদের এমন কতকগুলি বিশেষত্ব পুরুষ-পরম্পরায় ফুটিয়া উঠিয়াছিল যাহাতে মহাপ্রভুর অনর্পিতচর" উন্নভোম্বল রসস্ত্রী ভক্তিলাভে ইহাদের বিশেষ অধিকার ছিল। রসের অনুশীলন মণিপুরীদের সহজসিদ্ধ। মনে হয়, ইহারা চিরদিন এমনই সহজ সৌন্দর্ঘ্যের উপাসক ছিলেন '* উপরোক্ত মন্তব্য হইতে বুঝা যায়, মণিপুরীর এক সময়ে বৌদ্ধ ছিল এবং মহাপ্রভুর ধৰ্ম্মগ্রহণের পূর্বে শিক্ষাদীক্ষা ও আধ্যাত্মিকতায় বিশেষ উন্নত ছিল। তাহদের নিজস্ব লিপি ও “পুরাণ" নামক অতি প্রাচীন সাহিত্য উক্ত ধৰ্ম্মগ্রহণের পূর্বেও ছিল। সার্বজনীন শিক্ষা চিরদিনই প্রচলিত। সুতরাং মহাপ্রভুর ধৰ্ম্মগ্রহণের পূৰ্ব্বেও কুকিলুসাইদের চেয়ে শিক্ষাদীক্ষায় তাহার ঢের বেশী উন্নত ছিল। তবে বিকৃত বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে তাহারা পূৰ্ব্বে হিন্দু আচার-ভ্ৰষ্ট হইয়াছিল এবং বাঙালী প্রভৃতি প্রতিবেশীদের চক্ষে হেয় ও অসভ্য পদবাচ্য হইয়াছিল । এই কারণেই বিদেশীরা ঐ সময়ের ইতিহাস স্ত্রমবশতঃ মীবর্ণে চিত্রিত করিয়াছেন। লালতুদাই রায় মহাশয়ও যে ঐ ভ্রমে পতিত হইয়াছেন এবং বৈষ্ণবধর্শ্ব গ্রহণের ফলেই যে কুকি-লুসাই অপেক্ষা মণিপুরীরা বেশী উন্নত হইয়াছে বলিয়াছেন, তাহা আশ্চর্ব্যের বিষয় নহে । শ্ৰীমহেন্দ্রকুমার সিংহ

  • “সত্তর বৎসর"-প্রবাসী, আধাঢ়, ১৩৩৪ ।