পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] পড়লেন, তা ঠিক জানি না। বোধ হয় আমি ডাকাতে ভয় পেয়েছিলেন ।” নিরঞ্জন একটু ইতস্ততঃ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রভাস সেখানে ছিল ?” দেবকুমার সংক্ষেপে বলিল, “ই।” নিরঞ্জন জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কোথায় গেল ?” দেবকুমার বলিল, “তা বলতে পারি না, আমি তখন মায়াকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।” নিরঞ্জন চুপ করিয়া রছিলেন । দেবকুমার বলিল, “আমায় একটু পৌছে দিয়ে আসতে হবে, আপনার ড্রাইভারটাকে বলে দেবেন। এত রাত্রে আর বাস বা টেক্সি কিছুই পাওরা যাবে না।” নিরঞ্জন বলিলেন, “রাত্রে আর নেই বা গেলে ? আমি তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি । ডাক্তার আসুক, সে আবার কি বলে দেখি । যা অস্বাভাবিক অসুখ, কখন কি টার্ণ নেবে তার ঠিকানাই নেই। হয়ত বায়েই জ্ঞান হবে, তখন তোমায় দরকার হতে পারে।” দেবকুমার বলিল, “বেশ, আমি তাহলে বাবাকে ফোন করে দিই, বলিয়। বাহির হইয়া গেল । নিরঞ্জন বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন প্রভাস সম্বন্ধে কি করা যায় । সে যাহাই করিয়া থাকুক, সে র্তাহার গৃহে অতিথি এবং এক দেশের এক গ্রামের মানুষ । সে কোনো অপরাধ করিয়াছে বলিয়াও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নাই । তাহার কন্যাকে সে ভালবাসে, মায়া অন্যের বাগদত্ত জানিয়াও ভালবাসে, ইহাই তাহার অপরাধ। কিন্তু এই ধরণের অপরাধ অনেক মান্থযেই করে এবং তাহার জন্তু তাহার শাস্তি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পায় না । কিন্তু দেবকুমারকে তিনি কিঞ্চিৎ ভয় করিতেন । সে যে প্রকৃতির ছেলে, তাহাতে এখনই প্রভাসকে তাহার সাম্নে আসিতে দেওয়া সুবিবেচনার কাজ হুইবে না । বাড়িতে একটা কুরুক্ষেত্র বাধিয়া গেলে সেটা অত্যন্তই অশোভন ব্যাপার হুইবে । দেবকুমারের দৃঢ়বিশ্বাস যে প্রভাস অপরাধী । সে যে অপরাধী নয়, তাহা প্রভাল স্বয়ং বা নিরঞ্জন কেহই প্রমাণ করিতে পারিবেন না। পারে মহামায়া 이 《: একমাত্র যে, ভগবান তাহার জ্ঞান হরণ করিয়া লইয়াছেন, কোনোদিন সে জ্ঞান পূর্ণভাবে ফিরিবে কি-না তাহ কেহই বলিতে পারে না । কিন্তু এই জনহীন প্রাস্তরে সমস্ত রাত ছেলেট কি করিয়া থাকিবে ? তাহার একেবারে খোজ না করাটা বড়ই অমানুষের কাজ হইবে । কাল সকালে ত সে যাইবেই, এই রাত্রির কয়েকট। ঘণ্ট। তাহাকে কি কোথাও আশ্রয় দেওয়া যায় না ? প্রভাসকে তিনি শৈশবাবধি দেখিতেছেন, সে যে কোন কু-অভিসন্ধিতে মায়াকে লেকের ধারে ভুলাইয়া লইয়া গিয়াছিল, তাহা তাহার বিশ্বাস হইতেছিল না। তাহা ছাড়া মায়ার সহিত দেখা করিবারও ত তাহার কোনো উপায় ছিল না, সে এসব অভিসন্ধি করিবে কিরূপে ? অনেক ভাবিয়া তিনি বাহির হইয়া গেলেন এবং নিজের ড্রাইভারকে ডাকিয়া পাঠাইলেন । সে আসিয়া উপস্থিত হইলে তাহকে গাড়ী লইয়া আবার লেকের ধারে যাইতে বলিলেন । প্রভাসকে যদি পাওয়া যায়, তাহা হইলে তাহাকে একেবারে শহরে তার আপিস-গৃহে পৌছাইয়া দিতে বলিলেন। তাহার জিনিষপত্র সকালে সেখানে পাঠাইয়। দিলেই চলিবে । ড্রাইভার গাড়ী লইয়া বাহির হইয়া গেল । দেবকুমার এই সময় ফিরিয়া আসিল । বসিয়া বলিল, “ডাক্তারের ত এতক্ষণে আসা উচিত ছিল।” নিরঞ্জন বলিলেন, “এখনই এসে পড়বে, এতখানি দুর আসবে, এক মিনিটের নোটিসেই ত আসতে পারে না ? বেশী ব্যস্ত হবার কারণ নেই, সেবারেও অজ্ঞান হয়ে অনেকক্ষণ ছিল ।” দেবকুমার চুপ করিয়া রহিল। সেই অসহনীয় পুলকময় দিন, সেই অসহ যন্ত্রণাময় রাত্রির স্থতি তাহার চিত্তকে আলোড়িত করিয়া তুলিল। পৃথিবীর মানুষ হইয় সে সেইদিনটাতে অমরাবতীর স্বাদ পাইয়াছিল, নরকের স্বাদও পাইয়াছিল । জীবনের শেষ পৰ্য্যন্ত এই দিনট কখনও তাহার স্বতি হইতে মুছিয়া যাইবে না। বাহিরে মোটরের হর্ণের শব্দ শুনিয়া নিরঞ্জন উঠিয়৷ পড়িলেন, বলিলেন, “এল বোধ হয়, দেখি।” দেবকুমারও তাহার পিছন পিছন বাহিরে জাসিয়া দাড়াইল ।