পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২২ কেবল আমাদের হতভাগ্য দেশে দেখি মাটির প্রদীপে যে আলো একদিন এখানে জলেছিল তাতেও আজ বাধা পড়ল। আজ আমাদের দেশের ডিগ্রিধারীর পল্লীর কথা যখন ভাবেন তখন তাদের জন্যে অতি সামান্য ওজনে কিছু করাকেই যথেষ্ট ব'লে মনে করেন। যতক্ষণ আমাদের এই রকমের মনোভাব ততক্ষণ পল্লীর লোকের আমাদের পক্ষে বিদেশী । এমন কি, তার চেয়েও তার বেশি পর, তার কারণ এই,—আমরা স্কুলে কলেজে যেটুকু বিদ্যা পাই সে বিদ্যা যুরোপীয়। সেই বিদ্যার সাহায্যে যুরোপীয়কে বোঝা ও যুরোপীয়ের কাছে নিজেকে বোঝানো আমাদের পক্ষে সহজ। ইংলণ্ড ফ্রান্স জাৰ্ম্মানির চিত্তবৃত্তি আমাদের কাছে সহজে প্রকাশমান,—তাদের কাব্য গল্প নাটক যা আমরা পড়ি সে আমাদের কাছে হেঁয়ালি নয়—এমন কি, যে কামনা যে তপস্যা তাদের, আমাদের কামনা সাধনাও অনেক পরিমাণে তারই পথ নিয়েচে । কিন্তু যারা মা ষষ্ঠ মনসা ওলাবিবি শীতল ঘেটু রাহু শনি ভূত প্রেত ব্রহ্মদৈত্য গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা পাণ্ড পুরুতের আওতায় মাকুষ হয়েচে তাদের থেকে আমরা খুব বেশি উপরে উঠেচি তা নয়, কিন্তু দূরে সরে গিয়েচি, পরস্পরের মধ্যে ঠিকমত সাড়া চলে না। তাদের ঠিকমত পরিচয় নেবার উপযুক্ত কৌতুহল পৰ্য্যস্ত আমাদের নেই। আমাদের কলেজে যার ইকনমিক্স, এথনোলজি পড়ে তারা অপেক্ষা করে থাকে যুরোপীয় পণ্ডিতের—পাশের গ্রামের লোকের আচারবিচার বিধিব্যবস্থা জানবার জন্যে । ওরা ছোটলোক, আমাদের মনে মামুসের প্রতি যেটুকু দরদ আছে তাতে ক'রে ওরা আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। পশ্চিম মহাদেশের নানাপ্রকার ‘মুভমেণ্টের" পূৰ্ব্বাপর ইতিহাস এরা পড়েচেল,—আমাদের জনসাধারণদের মধ্যেও নানা মুভমেণ্ট চলে আস্চে, কিন্তু সে আমাদের শিক্ষিতসাধারণের অগোচরে । জানবার জন্যে কোনো ঔংস্থক্য নেই—কেন-ন তাতে পরীক্ষাপাসের মার্ক মেলে না। দেশের সাধারণের মধ্যে আউল বাউল কত সম্প্রদায় আছে সেটা একেবারে অবজ্ঞার বিবঘ্ন নয় ; ভদ্রসমাজের মধ্যে নূতন নূতন ধৰ্ম্মপ্রচেষ্টার চেয়ে তার মধ্যে অনেক বিষয়ে গভীরতা আছে,—সে সব সম্প্রদায়ের যে সাহিত্য তাও শ্রদ্ধা ক'রে রক্ষা করবার যোগ্য—কিন্তু প্রবাসী—ফাঙ্কন, ১৩৩৭ [ ७०* ७*, २ग्न ५७ ওরা ছোটলোক। সকল দেশেই নৃত্য কলাবিদ্যার অন্তর্গত,—ভাবপ্রকাশের উপায়রূপে শ্রদ্ধা পেয়ে থাকে। আমাদের দেশে ভদ্রসমাজের তা লেপি পেয়ে গেছে ব’ল আমরা ধরে রেখেছি সেটা আমাদের নেই। অথচ জনসাধারণের মৃত্যকলা নানা আকারে এখনও আছে— কিন্তু ওরা ছোটলোক। অতএব ওদের যা আছে সেটা আমাদের নয়। এমন কি, মৃন্দর সুনিপুণ হলে ; সেটা আমাদের পক্ষে লজ্জার বিষয় । ক্রমে হয়ত এ সমস্তই লোপ হয়ে যাচ্চে-কিন্তু সেটাকে আমরা দেশের স্মৃতি বলেই গণা করি নে—কেন-না, বস্তুতই ওর আমাদের দেশে নেই। কবি বলেচেন, "নিজ বাসভূয়ে পরবাসী হ’লে ।” তিনি এই ভাবেই বলেছিলেন যে, আমরা বিদেশীর শাসনে আছি। তার চেয়ে সত্যতর গভীরতর ভাবে বলা চলে যে, আমাদের দেশে আমর পরবাসী—অর্থাৎ আমাদের জাতের অধিকাংশের দে• আমাদের দেশ নয়। সে দেশ আমাদের অদৃশ্ব অস্পৃশ । স্বৰ্থন দেশকে মা ব'লে আমরা গল! ছেড়ে ডাকি তখন মুখে ধাই বলি মনে মনে জানি সে ম গুটিকয়েক আদুলে ছেলের মা । এই ক’রেই কি আমরা বঁচিব ? শুধু ভোট দেবার অধিকার পেয়েই আমাদের চরম পরিত্রাণ ? এই দু:খই দেশের লোকের গভীর ঔদাসীন্যের মাঝখানেই সকল লোকের আল্পকৃল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে এখানে এই গ্রাম কয়টির মধ্যে আমরা প্রাণ উদ্বোধনের যজ্ঞ করেচি। র্যার কোনো কাজই করেন না তার অবজ্ঞার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করতে পারেন এতে কতটুকু কােজই বা হবে ? স্বীকার করতেই হবে তেত্রিশ কোটিব ভার নেবার যোগ্যতা আমাদের নেই। কিন্তু তাই ব'লে লজ্জা করব না। কৰ্ম্মক্ষেত্রের পরিধি নিয়ে গৌরব করতে পারব এ কল্পনাও আমাদের মনে নেই াকন্তু তার সত্য নিয়ে যেন গৌরব করতে পারি। কখনও আমাদের সাধনায় যেন এ দৈন্ত না থাকে যে, পল্লীর লোকের পক্ষে অতি অল্পটুকুই যথেষ্ট। ওদের জন্যে উচ্ছিষ্টের ব্যবস্থা ক’রে যেন ওদের অশ্রদ্ধা না করি। শ্রদ্ধয়া দেয়ং-পল্লীর কাছে আমাদের আত্মোৎসর্গের যে নৈবেদ্য তার মধ্যে শ্রদ্ধার যেন কোনো অভাব না থাকে।