পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૨ ঘুমের রাজ্যের মাধামাঝি। ল্যাম্প-পোষ্টের আলোতে একটা টাকা ও দুটে সিকি ঠিক উঠল কিনা দেখচি—হঠাৎ ওপরের দিকে নজর পড়ল । কোচম্যানের বয়স হ’বে ষাটের কাছাকাছি—মুখটা লম্বা, শীর্ণ। ঝুলে-পড়া পাক৷ গোফ-জোড় ও লম্ব দাড়ি তার জীর্ণ নীল কুৰ্বার কলারের ওপর হেলে পড়েচে । সবচেয়ে চোখে পড়ে তার গালের দুটি গৰ্ত্ত—গভীর যেন অতল—মুখটায় যেন খালি হাড় অণর হাড়-মাংস ঘেন সঘত্বে তাদের সংস্পশ এড়িয়ে চলেচে । চোখদুটি যে কোথায় ঢুকে গেছে— মনে হয় একেবারে মৃত ; জ্যাস্ত মাতুষের দৃষ্টির ঔজ্জল্য কই ওখানে ? তার জায়গাটিতে সে বসে আছে—চুপচাপ নিম্পন্দ । ঘোড়ার লেজের দিকে নিবদ্ধ ওর দৃষ্টি। ...আর যা খুচরো রেজকি ছিল সেই দেড় টাকার সঙ্গে তা দিয়ে দিলাম—নিজের অজ্ঞাতেই যেন । পেতে সে নিল—কথা বলল না কিছুই । তারপর যেই আমরা বাগানের গেটে পা দিয়েচি শুনলাম সে বলচে-“আমার জান বাচালেন, হুজুর !” হাত এই আকস্মিক উচ্ছ্বাসের উত্তর কি দেব ? গেট বন্ধ ক’রে আবার গাড়ীটার কাছে ফিরতে হ’ল কাজেই— a"কেন, দিনকাল কি খুবই খারাপ ?” সে বললে, তা ছাড়া আর কি ! তাদের রুটি উঠল এবারে-কেউই চায় না তাদের । চাবুকটা তুলে তারপর সে গাড়ী ষ্টাকাবার উদ্যোগ করলে । “কতদিন ধ’রে তোমাদের এ দুরবস্থা ?” আবার সে হাত নামাল—ভারি একটা আরামের সঙ্গেই যেন । ভাঙা ভাঙা উত্তর দিল-গাড়ী ইাকাচ্ছে সে কি আজ থেকে—পয়ত্রিশটি বছর ধরে তার এই কাজ– তারপর হঠাৎ সেই ঘোড়ার লেজের দিকে তাকিয়ে নিৰ্ব্বাকৃ হ’য়ে গেল । ওর ষে এ অভ্যাসটি আছে তা’ ও জানে না দেখচি । অনেক প্রশ্নের পর আবার তার কথা জোগাল, ন কারুকেই দুষছি না আমি-ট্যাকৃসিকেও না কারুকেই না। আমাদের তকৃদিরেই করেছে সব – সকালে বেরোলাম যখন পরিবারের হাত থালি একেবারে । এই কালই সে বলছিল আমাকে —‘এই যে চার মাস গেল তার মধ্যে কামালে কত ? এই ধর হপায় টাকা-চারেক’ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড —“ন, পাঁচ টাকাই হ’বে --আচ্ছা ন হয় তাই-ই হ’ল'-- “তোমরা তা হ’লে পেট ভরে খেতেও পাও না ?” কোচ ম্যান হাস্ল একটু—তার গণ্ডের দুই কোটরের মাঝখানে এই যে হাসি—তেমন বিচিত্র ভয়াবহ হাসি মানুষের মুখে বোধ হয় দেখেনি কেউ । ঘাড় নেড়ে বললে---“প্রায় তাই আর কি। এই দেখুন না—আপনাদের আগে মাত্র একটা বারো আনার ভাড়া খেটেচি–কালকের রোজগার মাত্র দেড়টি টাকা। এর অৰ্দ্ধেক আবার যাবে গাড়ীর মালিকের পকেটে—তবুও ত কম । অনেক মালিকের অবস্থা ও এই আমাদেরই মত—আবিকল । কাজেই ছাড়তে হয় সস্তায় -” আবার সেই অদ্ভুত হাসি । বলে—কষ্ট হয় তাদের জন্তাপ্ত—আর ঘোড়া বেচারীদের মধ্যে বোধ হয় এই জানোয়ারগুলোই আছে ভাল সব চেয়ে | জন্ম ও—তবু তাদের আমার সঙ্গীটি পাবলিককে উদ্দেশ ক’রে কি-একটা বললেন । শুনে কোচ ম্যান মুখ ফেরাল— অন্ধকার উত্তীণ হয়ে কোথায় যেন তার দৃষ্টি ! “পাবলিক ?”— গলার স্বরে ক্ষীণ বিস্ময়ের রেশ ত সব চায় ট্যাক্সি । চাইবেই ত । জলদি পৌছে দেবে---সময়ের দাম ত আছে । সাত ঘণটা বসে থেকে তবে আপনাদের ভাড় পেলাম অপর তাও ত আপনার ট্যাকৃসিই খুজিছিলেন । আমাদের গাড়ীতে যারা আসে, তারা আসে উপায় নেই বলেই—কাজেই তাদের খুশী থাকে না । আর আছে দু’চারজন সেকেলে লোক—যারা মোটর চাপতে ভয় পায়, কিন্তু তাদের হাত দিয়ে পয়সা গলান কি সোজা কথা ?” আমরা বললাম তোমাদের দুরবস্থায় সবাই ভারি দুঃখিত...আমাদের উচ্ছ্বাসের ধারা বন্ধ হ’য়ে গেল তার কথায়—সে বললে, “কথায় ত চিড়ে ভিজবে না।...কেউ কিন্তু এ সব কথা জানতে চায়নি আগে।” শীর্ণ মুখটি ও-পাশে ফিরিয়ে নিয়ে বললে, “কবৃবেই বা কি লোকে ? তার ত আর বসিয়ে বসিয়ে তোমায় খাওয়াতে পারে না। শুধু জিজ্ঞেস ক’রেই বা লাভ কি ? ত’ জানে তারা—তাই করে না । আমার মত তাঁর “ভার! মেজাজ ও