পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br8 [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মিঃ দত্ত বলিলেন – স্কুল লাইব্রেরীর ‘লে মিজারেবলথানা তুমি খুব ভালবাসতে—ওখানা তোমাকে দিয়ে দিচ্চি, আমি আর একখানা কিনে নেবো । তাপু বেশী কথা বলিতে জানে না—এখনও জানে না— মুখচোরার মত খানিকক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া হেড মাষ্টারের পায়ের ধূলা লইয়া প্রমাণ করিয়া বাহির হইয়া আসিল । হেন্ড মাষ্টারের মনে হইল তাহার দীর্ঘ ত্রিশ বৎসরের শিক্ষক-জীবনে এ রকম আর কোনো ছেলের সংস্পর্শে তিনি কখনও আসেন নাই—ভাবময়, স্বপ্ন-দর্শী বালক, জগতে সহায়ীন, সম্পদহীন হয়তো একটু নিৰ্ব্বোধ, একট অপরিণামদশী...কিন্তু উদার, সরল, নিষ্পাপ, পিপাস্ত্র ও জিজ্ঞাসু । মনে মনে তিনি বালককে বড় ভালবাসিয়াছিলেন । তাহার জীবনে এই একটি আসিয়াছিল, চলিয় গেল । ক্লাশে পড়াইবার সময় ইতার কৌতুহলী ডাগর চোখ ও আগ্রহোজ্জল মুগের দিকে চাহিয়া ইংরেজির ঘণ্টায় কত নতুন কথা, কত গল্প, ইতিহাসের কাহিনী বলিয়া যাইতেন--ইহার নীরব, জিজ্ঞাস্ব চোখ দুটি তাহার নিকট হইতে যেরূপ জোর করিয়া পাঠ আদায় করিয়া লইয়াছে সেরূপ আর কেহ পারে নাই, সে প্রেরণা সহজ লভ্য নয় তিনি তাহ জানেন । গত চার বৎসরের কত স্মৃতি-জড়ানো দেওয়ানপুর হুইতে বিদায় লইবার সময়ে অপুর মন ভাল ছিল না । দেবত্রত বলিল - তুমি চলে গেলে অপূৰ্ব্ব-দ, এবার আমি পড়া ছেড়ে দেবো । আমি আর এখানে থাকতে পারবো না । নিৰ্ম্মলার সঙ্গে বাহিরের ঘরে দেখা । ফাঙ্কন মাসের অপূৰ্ব্ব, অদ্ভুত দিনগুলি। বাতাসে কিসের যেন মৃদ্ধ, স্নিগ্ধ, অনির্দেশু সুগন্ধ । আমের বউলের স্ববাস সকালের রৌত্রকে যেন মাতাল করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু অপুর আনন্দ সে সব হইতে আসে নাই—গত কয়েক দিন ধরিয়া সে রাইডার হাগার্ডের ‘ক্লিওপেট্রা পড়িতেছিল । তাহার তরুণ কল্পনাকে অদ্ভুত ভাবে নাড়া দিয়াছে বইখানাতে। কোথায় এ হাজার হাজার বৎসরের পুরাতন সমাধি—জ্যোৎস্না-ভরা নীলনদ, বিশ্বত ‘রা দেবের মন্দির ...ওঁপন্যাসিক হাগার্ডের স্থান সমালোচকের মতে যেখানেই নির্দিষ্ট হউকৃ, তাহাতে আসে যায় না - তাহার নবীন, অবিকৃত মন একদিন যে গভীর আনন্দ পাইয়াছিল বইখানা হইতে—এইটাই বড় কথা তাহার কাছে । নিৰ্ম্মলার সহিত দেখা অপুর মনের সেই অবস্থায়, অপ্রকৃতিস্থ, মত্ত, রঙীন—সে তখন শুধু একটা স্বপ্রাচীন রহস্যময়, অধুনালুপ্ত জাতির দেশে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে ! ক্লিওপেট্রা ? হেীন তিনি সুন্দরী—র্তাহাকে সে গ্রাহ করে না। পিরামিডের অন্ধকার গর্ভগৃহে বহু হাজার বৎসরের সুপ্তি ভাঙ্গিয়া সম্রাট মেঙ্কাউ-রা গ্রানাইট পাথরের সমাধিসিন্দুকে যখন রোযে পার্শ্বপরিবর্তন করেন— মহুয্য স্তষ্টির পূৰ্ব্বেকার জনহীন, আদিম পুথিবীর নীরবতার মধ্যে শুধু সিহোর নদী লিবীয় মরুভূমির বুকের উপর দিয়া বহিয়া যায়—অপূৰ্ব্ব রহস্য ভর মিশর ! অদ্ভুত নিয়তির অকাট্য লিপি ! তাহার মন সারা দুপুর আর কিছু ভাবিতে চায় না। গরম বাতাসের দমকা ধূলাবালি উড়াইয়া আনিতে ছিল বলিয়া অপু দরজা ভেজাইয়া বসিয়াছিল নিৰ্ম্মলা দরজা ঠেলিয়া ঘরে আসিল । অপু বলিল—এস এস, আজ সকালে তো তোমাদের স্কুলে প্রাইজ হোল—কে প্রাইজ দিলেন মুন্সেফ বাবুর স্ত্রী না ? ঐ মোটামত যিনি গাড়ী থেকে নামূলেন, উনি তো ? —আপনি বুঝি ওদিকে ছিলেন তখন ? মাগে, কি মোট —আমি তো কখনো—পরে হঠাৎ যেন মনে পড়িল এই ভাবে বলিল, তার পর আপনি তো যাবেন, আজ না দাদা ? —হ, দুটার গাড়ীতে যাবো—রামধারিয়াকে একটু ডেকে নিয়ে এস তো—জিনিষপত্তরগুলো একটু বেঁধে দেবে। —রামধারিয়া কি আপনার কাজ চিরকাল করে দিয়ে এসেছে নাকি ? কই, কি জিনিষ আগে বলুন না। দুইজনে মিলিয়া বইয়ের ধূলা ঝাড়িয়া গোছানো, বিছানা বাধা চলিল। নিৰ্ম্মলা অপুর ছোট টিনের তোরঙ্গটা খুলিয়া বলিল- মাগো ! কি করে রেখেছেন যে