পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দ্বীপময় ভারত > e@r তো রঙীন লুঙ্গাই আমাদের পোষাক হ’য়ে দাড়াবে, আর এই রকম ক’রে আমাদের পরিধেয়ে একটু নোতুনভাবে বর্ণ-বৈচিত্র্যের সমাবেশ ঘ’টুবে। এই বর্ণ প্রতিটুকু শীতের কাপড়ে শাল-র্যাপারে এখনও যা একটু বজায় আছে। গুজরাটের বহু স্থল বাঙলার মতনই সবুজ, কিন্তু সেখানকার মেয়ে আর পুরুষদের পরিধেয়ের বর্ণবিন্যাসের সৌন্দৰ্য্য সৰ্ব্বজনবিদিত । বর্ণপ্রিয়তার সঙ্গে দেশের প্রকৃতির অবস্থার কোনও যোগ আছে ব’লে মনে হয় না । বেশী দিনের কথা নয়, অষ্টাদশ শতকে ইংলণ্ডের পুরুষেরাও মেয়েদের মতন লাল নীল সবুজ প্রভৃতি নানা রঙের কোট জামা প’ৰ্বত ; চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ, সপ্তদশ শতকে রঙের বাহার আরও বেশী ছিল ; আর এখন ইউরোপ কালো রঙই গ্রাহ, রুমালে মোজায় আর টাইয়ে যা একটু রঙ এখন চলে । শিক্ষা, রুচি, অর্থ,—এই গুলির উপর বর্ণপ্রিয়তা নির্ভর করে । বাঙালী জা’তের রুচি গিয়েছে, শিক্ষা ভালে৷ নেই, অর্থ তো নেইই । যাকৃ—বলিদ্বীপের মেয়ে পুরুষে আগে এ দেশেই তৈরী ছাপা বা ছোবানো কাপড় পারত, এখন বেশীর ভাগ বিলিতি কাপড়ই পরে, কিন্তু এই কাপড়ে খুব নকৃশ কাটা থাকে, ফুল আর পাতার বিচিত্র নক্শাই বেশী । মেয়েদের চেয়ে পুরুষেরাই যেন নকৃশা-করা ছাপা কাপড় একটু বেশী পছন্দ ক’রে ব’লে মনে হ’ল । তিন খানা কাপড় হ’লে তবে বলিদ্বীপের পরিধেয় সম্পূর্ণ হয়—প্রাচীন বাঙলা বইয়ে যেমন আছে— “একখান কাছিয়া পিন্ধে, একখান মাথায় বান্ধে, আর খান দিল সৰ্ব্ব গায়”—ধোত্র, উষ্ণীয, উত্তরীয় । আজকাল যবদ্বীপের আর আধুনিক সভ্যতার প্রভাবে একটা করে জামাও গায়ে চ’ড়ছে, হয় ইউরোপীয়দের মতন গলা আঁটা সাদা জীনের কোট, নয় মালাইদের যতন ঢিলা কোৰ্ব্ব । খালি পা-ই আগে রেওয়াজ ছিল, কচিং চাপলি পারত, কিন্তু ইউরোপীয় জুতো আর মোজা অনেকের পায়ে উঠছে। মোটের উপর, বলির সাবেক পুরুষদের পোষাক বেশ . ছিল, বেশ স্বৰ্দুগু, লোকগুলির চেহারার সঙ্গে মুন্দর মানাত —বলির পুরুষের পোষাককে সম্পূর্ণ করতে হ’লে আর একটা জিনিসের দরকার হ’ত—একখানা $ 8 ৰড় ছোরা, বা তলওয়ার, যাকে ‘ক্রীস বলে। হাতলে সোনার রাক্ষস-মূৰ্ত্তি-ওয়ালা এই বিদ্যুৎ-লতানে বাক৷ তলওয়ার এরা পিঠে বাধত, সামনে বা পাশে ঝুলিয়ে রাখার রেওয়াজ ছিল না।—বলিদ্বীপের মেয়েদের পোষাক শীঘ্র শীঘ্র অপ্রচলিত হ’য়ে প’ড়বে, আর প’ড়ছে, যত বেশী ক'রে ও-দেশে বিদেশীর আমদানী হচ্ছে। মেয়েদের পরণে তিন খণ্ড বস্ত্র থাকে—একখানা ছোট ভিতর বস্ত্ৰ ; তার উপরে কোমর থেকে পায়ের পাতা পৰ্য্যস্ত দুই আড়াই ফের দিয়ে জড়ানো আর কাপড়ের সরু কটিবন্ধ দিয়ে বাধা একখান বস্ত্র, যাকে ‘কাইন বা কাপড় বলে—এর সারং বা লুঙ্গীর মত সেলাই করা কাপড় পরে না—এই কাইনের দ্বারা উদ্ধাঙ্গ আবৃত হয় না ; তার জন্য তৃতীয় আর একখানা কাপড় থাকে, খুব কম চওড়া একখানা চাদরের মতন,—এই উত্তরীয় আবার প্রায়ই নেটের বা জালের কাপড়ের হয় ; বলির মেয়েরা কিন্তু এই চাদর খুলে গায়ে মুড়ি দিয়ে পরে না, হয় কাধে ফেলে রাখে নয় কোমরেই জড়িয়ে রাখে। পরিচিত অপরিচিত সকলের সামনে এইরূপে নিরাবরণ-বক্ষে চলাফেরা করা এই দেশের রীতি। কিন্তু এই রীতি যে সত্যযুগের উপযুক্ত ছিল, সে সত্যযুগ আর এখন থাকছে না। উত্তর বলি বহুদিন থেকে ডচেদের অধীনে আছে ; সেখানে সভ্যতার সংস্পর্শে আসায় জামা এখন মেয়েদের পোষাকের একটি অপরিহার্য্য অঙ্গ হ’য়ে দাড়িয়েছে। মধ্য আর দক্ষিণ বলিতেও আস্তে আস্তে এখন জামা প্রতিষ্ঠা লাভ ক’রছে । মেয়েদের এইরূপ পোষাক, বা পোষাকের অভাব,—যা আধুনিক রুচি অনুসারে বর্জনীয়,—ত এক সময়ে আমাদের ভারতবর্ষেও সাধারণ ছিল । মালাবারের পল্পী-অঞ্চলে নায়র আর অন্য জাতীয় স্ত্রীলোকদের মধ্যে এই রীতি এখনও প্রচলিত। দেহ যাতে সুসমাবৃত হয়, মেয়েদের এইরূপ পোষাক আমাদের ভারবর্ষে ঠাণ্ডাদেশের অধিবাসী আৰ্য্যেরাই আনে ব’লে অকুমান হয়। ঈরানে খ্ৰীষ্টপূৰ্ব্ব পঞ্চম শতকে পাথরে খোদাই করা ঈরানী আৰ্য্য মেয়েদের যে প্রতিকৃতি পাওয়া গিয়াছে, তা থেকে অবগুণ্ঠনবতী আবৃতদেহ আর্য্য রমণীর পরিচ্ছদের ধারণা করতে পারা যায়। ভারতের অনাৰ্য্য ভ্রাবিড়, কোল