পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দ্বীপময় ভারত 》e업 করবার সময়ে এরা এ বিষয়ে সংযত হয়, তখন উত্তরীয়ের আবেষ্টন দ্বারা বক্ষোদেশ আবৃত ক’রে থাকে, কিন্তু অংসদেশ অনাবৃত রাখে। দেবমন্দিরে প্রবেশের সময়ে বা দেবতার সামনে পূজা-অৰ্চনার সময়ে এরূপ ব্যবস্থা হ’ল কেন ? এটা কি আর্য্য মনোভাবের প্রভাবেই ঘ’টেছে, যে প্রভাব ভারতের ব্রাহ্মণ্যের মধ্য দিয়ে কাৰ্য্যকর হয়েছিল ? অথচ প্রাচীন ভারতের দেবদেবীদের মূৰ্ত্তি কল্পনায় অঙ্গাবরণ বস্ত্র সম্বন্ধে আধিক্য দেখা যায় না। প্রাচীন ভারতের রাজা রাজড়ারা খালি গায়েই থাকতেন,— ছবি আর খোদিত মূৰ্ত্তি দেখে রাজান্তঃপুরিকাদের সম্বন্ধেও ওই কথাই বলা যায়। তামিল দেশে তো জামা গায়ে দেওয়া প্রাচীনকালে সৈনিক কিংবা ভূত্যেরই পরিচায়ক ছিল —বলিদ্বীপের প্রাচীন প্রথায়, কেবল চরিত্রহীনা সাধারণী স্ত্রীদেরই দেহ পূর্ণভাবে আবৃত রাখতে হত, সদ্বংশীয় কন্যা বধূ গৃহিণীরা বক্ষোবাস বিষয়ে নিবাবরণ হ’য়েই থাকতেন। এখন অবশু সৰ্ব্বত্রই মালাই “কাবায়া’ বা লম্বা ঢিলা জামায়ু চল বেড়ে যাচ্ছে। প্রাচীন বাঙলার লক্ষ্মণ সেন মহারাজার সভার কবি ধোয়ী মেঘদূতের অনুকরণে রচিত তার পবনদূত’ কাব্যে লিখেছেন— গঙ্গাবীচিপ্লুতপরিসরঃ সৌধমালাবতংসো যাস্যতুচ্চৈস্তুয়ি রসময়ে বিস্ময়ং স্বহ্মদেশঃ। শ্ৰোত্রাক্রীড়াভরণপদবীম্‌ ভূমিদেবাঙ্গনানাং তালীপত্ৰং নবশশিকলাকোমলং যত্র যাতি ॥ ২৭ ॥ এই শ্লোক থেকে গঙ্গার ধারের স্বন্ধদেশে অর্থাৎ দক্ষিণ রাঢ়ে—আজকালকার হুগলি জেলায়—ভূমিদেব অর্থাৎ রাজার ঘরের মেয়েদের কানে তালপাতার গহনা পরার কথা পাওয়া যাচ্ছে । এখনও মালাবারে আর ভারতের অন্যত্র কানে তালপাতার গোজ প’রে থাকে । কুমারী মেয়েদের কানে পাকানো তালপাতার গোজ এদেশে খুবই প্রচলিত। প্রাচীনে ভারতে যেমন, তেমনি এখানেও নাক-ফেঁাড়বার বর্বর প্রথা নেই। আর কি পুরুষ কি মেয়ে কানের পাশে দুএকটা ফুল পরে,— চাপা, গন্ধরাজ, জবা ; আর পুরুষেরা প্রায়ই মাথার রুমালের নীচে কপালের ঠিক উপরে একটা ফুল গুজে রাখে । বাঙলির পথে আমরা এই সব দৃপ্ত দেখতে দেখতে চললুম। এই রকম মেয়ে আর পুরুষের দল দেখে— দলের মধ্যে নানা রঙের ছাতা নিয়ে আবার চলেছে, এ ছাতা হালের লোহার সিকওয়াল বিলিতি ফ্যাশানের ছাতা নয়, পুরাতন ছাদের তালপাতার ছাতা, সাদা লাল নানা রঙের কাপড় মোড়—দেখে মাঝে মাঝে মনে হতে লাগল, এ কি একি স্বপ্ন দেখছি! এ অজণ্টা আর বাঘ গুহার দেয়ালে তাক আর প্রাচীন ভারতের মন্দিরের গায়ে খোদা স্ত্রীলোক আর পুরুষেরা হঠাৎ কোনও যাদুকরের স্পর্শে প্রাণ পেয়ে শিল্পের চিরস্থির কল্পলোক থেকে অবতীর্ণ হ’য়ে, এই বলিদ্বীপের মনোহর প্রাকৃতিক পট-ভূমিকার সামনে জীবন্ত হয়ে যেন চলে ফিরে বেড়াচ্ছে ! এরা ভারতীয়দের মতন শু্যামবর্ণ নয়, আর গায়ে অলঙ্কারের প্রাচুর্য্য নেই—এই যা পার্থক্য। এর আপন মনে চলেছে, চকিত দৃষ্টিতে আমাদের তিনখানি মোটরের সারির প্রতি তাকিয়ে দেখছে—প্রথমটতে উপবিষ্ট রবীন্দ্রনাথের প্রশান্ত জ্ঞানোজ্জল-দৃষ্টিমণ্ডিত মুখের প্রতি কেউ কেউ সম্ভ্রমের সঙ্গে নেত্র-পাত ক’রছে বটে— কিন্তু এই সব বলিদ্বীপের জনপদগণ অল্পমানও ক’রতে - পারছে না, কতদূর থেকে আমরা ক’জন ভারতবাসী এসেছি, তাদেরি মধ্যে আমাদের পিতৃপুরুষদের জ্যোতি দেখতে পাবো ব’লে আশা ক’রে এসেছি,—আর তাদেরি মধ্যে এমনি অনপেক্ষিত স্বন্দর ভাবে তাদের বাহ জীবনের স্রোতের একটা পরিদৃশুমান প্রবাহ দেখতে পেয়ে আমরা কতটা পুলকিত হচ্ছি! বাঙালি গ্রামের যত কাছে গিয়ে পড়ছি, উৎসবমুখী জনতা ততই বাড়ছে । শেষটা রাস্তায় ভীড় এত বেশী হতে লাগল, যে আমাদের গাড়ী আস্তে আস্তে চলতে বাধ্য হ’ল, শেষটায় যেন ভীড়ের স্রোতে বাহিত হয়েই আমরা চললুম। লোকেদের গায়ের রঙে, আর কি মেয়ে কি পুরুষ সকলকার দৈহিক সৌন্দর্য্যে, তাদের রঙীন কাপড়ে, তাদের কানে আর মাথায় পরা