পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| - ১ম সংখ্যা ] আমাদের কথা ) లి আসেন। সেই সময় আমার শরীর নানা চিন্তার মধ্যে বড়ই খারাপ হইয়াছিল, তার কথা ভাবিতে ভাবিতে আমার অধিকাংশ সময় কাটিয়া যাইত, মনে কিছুতেই আনন্দ পাইতাম না । পাগলাগারদ হইতে ফিরিয়া আসিবার কিছুদিন পরে বলুর ( বলেন্দ্রনাথের ) জন্ম হয় । তার জন্মের পূর্বে একদিন স্বপ্ন দেখিলাম যে, একটি মেয়ে লাল শাড়ী পরিয়া একমাথা সিদুর মাখিয়া একটি সরাতে রক্তমাখা ছাগমুণ্ড হাতে লইয়া আমার কাছে দাড়াইয়া আছে । আমি স্বপ্নের কথা আমার দিদিশাশুড়ীর কাছে সব খুলিয়া বলিলাম। তিনি বলিলেন যে, “এ স্বপ্ন শুভ হইবে।” তারপরই বলুর জন্ম হয় । ১২৭৭ সাল ২১শে কীৰ্ত্তিক রবিবার বিকাল ৫টায় তার জন্ম হইয়াছিল । সে ভূমিষ্ঠ হইবার পর কিছুক্ষণ পৰ্য্যন্ত একেবারেই কোনও কান্নার শব্দ পাওয়া যায় নাই, নিস্তেজ অবস্থায় পড়িয়াছিল । তাহার পর ডাক্তারেরা নানা উপায়ে তাহাকে কাদাইতে সক্ষম হন । আমারও সেই সময় খুবই অস্বথ। নাড়ী ছাড়িয়া কয়েক দিন অজ্ঞান অবস্থায় পড়িয়াছিলাম। আমার নানারকম মনের অশান্তির মধ্যে ওর জন্ম হইয়াছিল বলিয়া তাহারও শরীরটা তেমন মুস্থ ছিল না, দুটি পা-ও একটু বাক৷ মতন হইয়াছিল । তাহার দরুণ অনেক দিন পর্য্যন্ত পা ঘসিয়া ঘসিয়া চলিত। সে যখন ছয় দিনের, তখন অামার বড় ভাস্কর ( দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ) উপাসনা করিয়া বলুকে একটি গিনি দিয়া আশীৰ্ব্বাদ করেন। আট দিনের দিন, আমার শ্বাশুড়ী, ছেলের পরমায়ুবৃদ্ধির জন্য বাড়ীর যত দাসদাসী ছিল সকলকেই তেল দিয়া এক একটি কাসার বাটি দান করেন। শ্বাশুড়ী বলুকে বড় ভালবাসিতেন। বলু যথন ছোট ছিল তখন আমার শ্বশুরের চলার নকল করিত, আমার শ্বাশুড়ী তাই দেখিতে খুব ভালবাসিতেন এবং তাহাকে ডাকিয়া আনিয়া দেখিতেন । বলু যখন সাড়ে চার বছরের, তখন আমার কাছেই তাহার হাতে খড়ি হয় । তখন হইতে পাচ বছর পর্য্যস্ত আমি নিজেই তাকে অল্প অল্প পড়াইতাম । ছয় বছরের সময় তাকে সংস্কৃত কলেজে ভৰ্ত্তি করিয়া দিয়াছিলাম। সে 34 তার মামাতো ও জ্যেঠতুতো ভাইদের সঙ্গে আমাদের সরকারি গাড়ীতে করিয়া পড়িতে যাইত, কিন্তু তার পায়ের দোষ থাকায় অন্ত ভাইরা ঠাট্টা করিত। এই কথা শুনিতে পাইয়া আমি প্রিয়নাথ ডাক্তারের গাড়ী কিছুদিনের জন্য ভাড়া করিয়া পাঠাইতে লাগিলাম। তাহার পর তার জন্য ঘোড়াগাড়ী কিনিয়া দিয়াছিলাম, সে তাহাতে করিয়া যাইত । বার বছর বয়সের সময় সে হেয়ার স্কুলে ভৰ্ত্তি হয় ও পনের বছর বয়সে এণ্টে ক্ষ পরীক্ষা দেয়। যে বছর বলু বিদ্যালয়ে যায় সেই বছরে আমার শ্বাশুড়ীর মৃত্যু হইয়াছিল। বলুর বিদ্যালয়ে যাইবার সংবাদ আমার কাছে পাইয়া, তিনি খুবই খুলী হইয়াছিলেন। আমার শ্বাশুড়ীর মৃত্যুতে আমি চারিদিক অন্ধকার দেখিতে লাগিলাম । শ্বাশুড়ীর মত শ্বাশুড়ী পাইয়াছিলাম । তার মতন সৌভাগ্যবর্তী, পতিভক্তিপরায়ণ স্ত্রীলোক এখনকার দিনে খুব কমই দেখিতে পাওয়া যায়। র্তাহার সৌভাগ্যের জোরে দ্বারকানাথ ঠাকুরের ব্যবসাবাণিজ্যে যথেষ্ট শ্ৰীবৃদ্ধি লাভ হইয়াছিল। শ্বাশুড়ীর কাছে শুনিয়াছিলাম যে, তাহারই জন্য র্তাহার শ্বশুর খুলী হইয়া, তাহাকে একলক্ষ টাকার হীরা, পান্না, মোতি বসানো খেলনা কিনিয়া দিয়াছিলেন। ধৰ্ম্মে মতি র্তার যথেষ্ট ছিল। কেহ যদি তাহার সাক্ষাতে পুত্রকন্যাদের প্রশংসা করিত, তখনই তিনি মাথা নত করিয়া থাকিতেন, পাছে র্তার মনে অহঙ্কার আসে। সেই সময় আমাদের বাড়ীতে পূজা বন্ধ হইয়া গিয়াছিল । আমার শ্বশুর যখন পুজার দালানে বসিয়া উপাসনা করিতেন,তখন তিনিও অধিকাংশ সময় তাহার পাশে বসিয়া উপাসনায়ু যোগ দিতেন । তাহ ছাড়াও জপ করিতেন দেখিয়াছি। অত বড় বৃহৎ পরিবারের সমস্ত সংসারের ভার তাহারই উপর ছিল, তিনি প্রত্যেককে সমানভাবে অাদর যত্বে অতি নিপুণভাবে সকলের অভাব, দুঃখ, দূর করিয়া চলিয়া গিয়াছেন । কাহাকেও কোনও বিষয় হইতে . বঞ্চিত করিয়া মনে ব্যথা দিবার কখনও চেষ্টা করিতেন না। তার মনটি শিশুর মত কোমল ছিল । এত বড় লোকের পুত্রবধু এবং গৃহিণী হওয়া সত্বেও তার মনে কোনরকম জাক, বা বিলাসিতার ছায়া স্পর্শ করিতে