পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉〉や করিতে হইত। আমি তখন নতুন বে, কাজেই আমারও অবস্থা নিতান্ত মন্দ হয় নাই । গলায়—চিক, ঝিলদানা ; হাতে—চুড়ী, বালা, বাজুবন্ধ ; কাণে-মুক্তার গোচ্ছ, বিরবেলি, কাণবালা ; মাথায়—জড়োয় সিথী ; পায়ে— গোড়ে, পায়জোড়, মল, ছানলা চুটুকী । এই ছয়সাত সের ওজনের গহনা পরিয়া চলাফেরা করিতে হইত, না বলিবার উপায় ছিল না। গয়নার ভারে কোনরকমে বাকিয়া চুরিয়া চলিতাম, তাহাতে বাহিরের ' লোকেরা মনে করিত যে, আমি গহনার জাকে ও গুমরে ঐৰূপ ভাবে চলিতেছি, কিন্তু আমার যা অবস্থা হইত তাহা আমিই জানিতাম । ইহা ছাড়াও দশ ভরির গোট কোমরে পরিবার নিয়ম ছিল ।

  • * * আমাদের এই সব মুখ-দুঃখের ভিতর দিয়া বলু বড় হইতেছিল।

বাপের ওই রকম অবস্থা হওয়াতে তার মনে তখন হইতেই একটা বড় হুইবার প্রবল আকাজক্ষ হইয়াছিল। যখন আট নয় বছরের, সেই সময় আমাকে প্রায় বলিত যে, সে লেখাপড়া শিখিয়া ইঞ্জিনিয়ার হইবে। লেখাপড়া তার নিকট একটা প্রিয় বস্তু ছিল, কোনও দিন তাহাতে অবহেলা করে নাই। যখন ওর তের বছর বয়স সেই সময় আমরা একবার শ্রীরামপুরে যাই । সেখানে থাকিবার সময় একদিন একটা মাঝি নৌকায় চড়িয়া গান গাহিতে গাহিতে যাইতেছিল “আমার খুড়োখুড়ী পায় না মুড়া” ইত্যাদি। এই গান শোনার পর হইতেই ওর মনে কি এক রকম ভাব উপস্থিত হয়, তখন হইতে সে প্রায়ই এক একটা প্রবন্ধ লিথিয়া আমাকে শোনাইত। বুঝিবার মত লেখাপড়া যদিও আমার তেমন জানা ছিল না, কিন্তু তবুও শুনিয়া ভালই লাগিত। তখন হইতেই সাহিত্যের প্রতি তাহার দিন দিন অনুরাগ বুদ্ধি পাইতে লাগিল । বলুর যখন ছাব্বিশ বছর বয়সু সেই সময় ডাক্তার ফকিরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা সাহানা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়। বিবাহে খুবই ঘট হইয়াছিল। বিবাহের যত রকম আয়োজন করিবার সবই আমার মেজ জ৷ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ ৩•শ ভা, ১ম थ७ করিয়াছিলেন । আমার ছোট জল ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ) মৃণালিনী দেবীও সঙ্গে যোগ দিয়া নানা রকম ভাবে সাহায্য করেন। তিনি আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে লইয়া, নানা রকম আমোদ-আহলাদ করিভে ভালবাসিতেন। মনটি খুব সরল ছিল, সেইজন্য বাড়ীর সকলেই তাকে খুব ভালবাসিতেন। আমার সব জায়েরাই আমাকে নিজের বোনের মতন মনে করিয়া স্নেহ ভক্তি করিতেন। মুণালিনী, যশোহর জেলার বেণীমাধব রায়ের কন্যা । বলুর বিবাহ ১৩০২ সালে ২২শে মাঘ হয়। বউ যখন ঘরে আসিল তখন এত কষ্টভোগের পর মনে বড় আহলাদ হইল, ভাবিলাম এইবার ঈশ্বর আমাকে একটু বুঝি স্বখের মুখ দেখাইলেন। সাহানার যখন বিবাহ হয় তখন তাহার বয়স বার পূর্ণ হইয়া তের বছর। দেহের রং যদিও তামবৰ্ণ, কিন্তু চেহারা খুবই স্বত্র ছিল । স্বভাবটি সরল শিশুর মত, যে যাহা বলিত বা ঠাট্টা করিত, সে তাহাই সত্য বলিয়া ধারণা করিয়া লইত। আমার কন্যা হয় নাই, সে আমার কন্যার স্থান অধিকার করিয়া লইয়াছিল । আমি যখন খাইতে বসিতাম সেই সময় সেও আহলাদ করিয়া আসিয়া আমার সঙ্গে খাইতে বসিত। তাহার যখন বিবাহ হয়, তখন বাড়ীতে অনেক গুলি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছিল । তাহীদের সঙ্গে সেও ছোটাছুটি-খেলাধূলা করিত। বলুও অনেক সময় তাহার সঙ্গে খেলা করিত। সে বাড়ীর বউ হওয়ার জন্য, তাহাকে সেইভাবে বদ্ধ অবস্থায় বা কোনও রকম নিয়মের বাধনে রাখি নাই । একবার আমাকে বলুকে সঙ্গে লইয়া কোন একটি আত্মীয়ের দুটি কন্যার বিবাহ স্থির করিবার জন্য র্তাহাদের যাড়ীতে যাইতে হইয়াছিল। যখন বাড়ীতে ফিরিলাম তখন রাত্রি হইয়া গিয়াছে। পথের মধ্যে হঠাৎ শুনিলাম যে,মুসলমান এবং ইংরাজদের ভিতর ভীষণ রকম মারামারি আরম্ভ হইয়াছে। মুসলমানেরা ইংরাজ দেখিলেই তাহাকে অতি ভয়ানক রকমে মারিতেছে। রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের জমীর উপর একটা মসজিদ ছিল, সেই মসজিদটি ইংরাজের সাহায্যে তিনি ভাঙিয়া