পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] অামাদের কথা > > o ফেলেন। তারই জন্য ইতাদের আক্রোশ । আগে জানিতাম না, রাস্তার মাঝে অসিয়া এই ব্যাপার দেখিলাম—আমাদের ঘরের গাড়ী ছিল, আমরাই এক ডাক্তার নন্দাইয়ের গাড়ীতে সেদিন গিয়াছিলাম। তাহারা কোচম্যানকে প্রথমে কার গাড়ী জিজ্ঞাসা করাতে সে অত বিবেচনা না করিয়া বলে যে "সাহেবের। এই কথা বলিবামাত্র অজস্র ধারায় ইট লাঠি সমানে গাড়ীর উপর পড়িতে লাগিল। গাড়ীর র্কাচ ভাঙিয়া চারিদিকে ছিটকাইয়া পড়িল। আমি বলুর মাথাটা আমার বুকের কাছে টানিয়া আনিয়া তাহাকে বাচাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম। আমার পিঠের উপর অনেক ইট আসিয়া পড়িয়াছিল। আমাদের যখন এই অবস্থা, তখন কোচয়ান চীৎকার করিয়া বলিতে লাগিল,“এ গাড়ী বাঙ্গালীবাবুর— সাহেবের নয়।” তাহারা গাড়ীর নিকটে যখন আসিয়া দেখিল সত্য সত্যই ইহা বাঙ্গালীর গাড়ী তখন নিরস্ত হইল। আমরাও কোনরকমে প্রাণটুকু হাতে লইয়া বাড়ী ফিরিলাম। বাড়ী আসিয়া তিন চার দিন প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় দুজনে পড়িয়াছিলাম। সারা দেহে অসহ্য রকম বেদনা এবং তার দরুণ যন্ত্রণায় আমার সর্বশরীর নীলবর্ণ হইয়া গিয়াছিল। ডাক্তার আসিয়া ওষুধপত্তর ব্যবস্থা করিবার পর ক্রমশঃ আরাম পাই। বলুর কপালের ভিতর একটি ছোট কাঠের টুকরা বিধিয় অনেক দিন পর্য্যন্ত ছিল, তারপর আপনা হইতেই সেটা বাহির হইয়া যায়। - পঞ্চাবে আৰ্য্যসমাজের সহিত আমাদের ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে যাহাতে মিলন স্থাপন হয় সেইজন্য তাহার প্রাণের প্রবল ইচ্ছা ছিল এবং তাহারই জন্য বলু, আৰ্য্যসমাজে যাতায়াত করিতে থাকে, তাহারাও তাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিতেন। র্তাহাদের মধ্যে যদি কখনও বিবাদ উপস্থিত হইত, তাহা হইলে বলুকে মীমাংসা করিয়া দিবার জন্য আহবান করিতেন, এবং সে গিয়া তাহাদের মধ্যে বিবাদ মিটাইয়া মিলন স্থাপন করিয়া আসিত । তাহার এই ইচ্ছা পূর্ণ করিবার স্বযোগ আর জীবনে ঘটিয়া উঠিল না। দ্বিতীয়বার যখন সে তাহদের টেলিগ্রাম পাইয়া চলিয়া যায়, সেইদিন আমার মেজ জায়ের কন্যা ইন্দিরার ফুলশয্যা। সেইজন্ত সকলেই তাকে যাইতে বারণ করিলেন, কিন্তু র্তাহাদের টেলিগ্রাম পাওয়াতে পাছে কৰ্ত্তব্যের অবহেলা হয় বলিয়া নিষেধ সত্বেও সে চলিয়া গেল। সেখান হইতে ফিরিয়া আসিবার পথে মথুরা, বৃন্দাবন, এলাহাবাদ এবং কাছাকাছি অনেক তীর্থস্থান দর্শন করিয়া আসিল । সীতাকুণ্ডতে স্নান করিবার পর তার কানে খুব যন্ত্রণ হয় এবং তাহ লইয়াই বাড়ীতে ফিরিয়া আসে। বাড়ী আসার পর নানারকম সেবাযত্নে কানের যন্ত্রণা অনেকটা কমিয়া আসিতেছিল, কিন্তু সেই সময় ঠাকুর কোম্পানীর হিসাবপত্তর চুকাইবার জন্ত তাহাকে শিলাইদহে জমীদারিতে যাইতে হয়। সাহানা ওখানে আমার ছোট জায়ের কাছে ছিল, তাহাকে সেই সময় ওখানে একজন ইংরাজ মাষ্টার পড়াইত। সারা দিনরাত হিসাবপত্র লইয়া বলু এত ব্যস্ত থাকিত যে, সময় মত স্নানাহার তাহার হইত না, কখনও বা বেল তিনটায় কখনও বা পাচটায় খাইত, এইরূপ অনিয়ম হওয়াতে পুনরায় কানের যন্ত্রণ খুব বাড়িয়া উঠে। সে যখন শিলাইদহে, তখন একুদিন স্বপ্নে দেখিলাম যে, বলু আমার কাছে দাড়াইয়া বলিতেছে, ”ম,আমার শরীর ভাল নাই।” ইহার পর আমার মন তাহার জন্য আরও অস্থির হইতে লাগিল । আমি সাহানাকে লিখিলাম যে, তাহাকে আমার কাছে শীঘ্র পাঠাইয়া দাও, আমি এইরূপ স্বপ্ন দেখিয়াছি । সে যখন ফিরিয়া আসিল তখন তাহার শরীরের অবস্থা দেখিয়া আমার চিন্তার অবধি রহিল না, কিসে সে আরাম হইবে এই কেবল ভাবিতে লাগিলাম। অঘোর ডাক্তার, উমাদাস বাড়য্যে, ডাক্তার সালজার এই তিনজনে দেখিতে লাগিলেন। তারা আমাকে বলিতেন, যে, ভয়ের কোনও কারণ নাই, ভাল হইয়া যাইবে, কিন্তু আমি কিছুতেই সে ভরসা পাইলাম না । বাড়ীর সকলে আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, আমি কোনও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাইতে চাই কিনা, আমার তখন ভাবনা-চিস্তায় মনের এমন অবস্থা হইয়াছিল যে হিতাহিত জ্ঞান একেবারেই হারাইয়া ফেলিয়ছিলাম, কিছুই বলিতে পারিলাম না। র্তাহারাই তখন সাহেব ডাক্তারকে আনাইয়া দেখান। বলুর অবস্থা