১ম সংখ্যা ] আমাদের কথা めRめ ভার-স্বরূপ হইয়া রহিয়াছে, সেই ভার নামাইয়া মানুষ যখন মুক্তি পায় তখনই তাহার মোক্ষলাভ। ভগবান বুদ্ধের সেই সৌভাগ্যের দিন একদিন আসিয়াছিল। এই মহাপুরুষদিগের জীবনের পরিচয়ের ভিতর আমরা এই জ্ঞানলাভের স্বযোগ পাই যে, দুঃখ-শোক, সুখ-ঐশ্বৰ্য্য, প্রলোভন যাহা কিছু, আমাদের দেহ মনের উপর তাহাদিগের প্রভাব বিস্তার করিতেছে, সকলকে জয় করিবার একটি মাত্র উপায় সেই সৰ্ব্বদু:খহারী যিনি আমাদিগের মধ্যে নিয়ত বিরাজমান তাহারই করুণার আশ্রয়লাভ। মৃত্যুর জন্যই জন্ম, এবং জন্মের জন্যই মৃত্যু, ইহাই যুগে যুগে ইতিহাসে লক্ষিত হইয়া আসিতেছে। ইহারই কারণে শোক দুঃখ অনুতাপ যাহা কিছু সবেরই উৎপত্তি। জহুরী যেমন কষ্টিপাথরে ঘষিয়া সোনা রূপার খাটি রূপটি চিনিয়া লয়, সেইরূপ আমাদের মনকে দুঃখরূপ কষ্টিপাথরে আঘাতের দ্বারা অলক্ষ্যে বিধাতাপুরুষ অহরহ যাচাই করিয়া লইতেছেন। আমরা শোকে এতই অভিভূত হইয়া যাই, ভাল মন্দ বিবেচনা করিবার জ্ঞান শক্তিকে তখন হারাইয়া ফেলি। সেই দারুণ দুঃখের ভিতরেও যদি আমাদের মনের স্থিরতা, সহিষ্ণুতা আনিয়া দেয়, তবে ইহার ভিতরেও র্তাহার মঙ্গল ইচ্ছা ও অসীম মেহের পরিচয় পাইতে পারিব । অগ্নির জলন্ত শিখাগুলিকে যেমন বারিধারায় মুহূৰ্ত্তের মধ্যে শীতল করিয়া নির্বাপিত করে, তেমনি শোকের বহ্নি যখন হৃদয়ের চারিপাশে জলন্ত শিখা বিস্তার করিয়া দগ্ধ করিতে থাকে তখন সেই করুণারূপ বারিধারা অজস্রধারায় ঝরিতে থাকিয়া সব জালা দূর করিয়া দেয়। দেহুমন যখন শোকে নিতান্তই অভিভূত, কিছুতেই মন শান্তি লাভ করিতেছে না, তখন ভগবানের দর্শনলাভের জন্য আমার মন ব্যাকুল হইয়া উঠিল, সেই ব্যাকুলতার আবেগে দিবারাত্রি যখনই তাহার চিস্তায় নিমগ্ন থাকিতাম, তখনই ধ্যানের মধ্যে বলুর মুখখানি দেখিতে পাইতাম। একদিকে বলু, একদিকে তিনি, এই দুইয়ের যোগে আমার যোগসাধন সমাপন;হইত। রবি বলুকে খুবই ভালবাসিতেন। আমার এই অবস্থার ভিতর এই সময়ে তিনি একদিন গীত হইতে একটি উপযোগী সুন্দর শ্লোক পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন। সেই শ্লোকটি কি এখন আমার ঠিক মনে নাই, তবে তাহার কথাগুলি আমার প্রাণে আসিয়া বাজিয়াছিল। উহ শুনিয়া একই আত্মা সৰ্ব্বভূতে বিরাজমান, বলুর ভিতর যে আত্মা, সেই আত্মা সব মানুষের মধ্যে রহিয়াছেন, এই কথাটিই তখন আমার বারংবার স্মরণ হইতে লাগিল। সেই জ্ঞান যখন উদয় হুইল তখন বলুর স্বরূপ সকলের ভিতর দেখিবার আকাঙ্ক্ষা ও কৰ্ম্মের দ্বারা সেবাই আমার পরম লক্ষ্য হইল। কৰ্ম্মের ভিতরে সাহস বল ভরসা আনিয়া দিতে লাগিল, ভাঙা মনকে জোড়া দিয়া তাহারই কাৰ্য্য সাধন করিবার পথ খুজিয়া পাইলাম । চরাচরবেষ্টিত সমস্ত পদার্থ ও তাহাদের কার্য্যসকল সবই অনিত্য, কিছুই চিরদিন থাকিবে না ; নিত্য সেই, যার পরিবর্তন নাই, চিরদিনই সমানভাবে জন্ম মৃত্যুর অতীতরূপে বর্তমান । শোককে অতিবিভীষিকার হ্যায় মনে করি বলিয়া ইহার উপকারিত উপলব্ধি করিতে আমরা অক্ষম, কিন্তু দুঃখশ্লোক যদি জগতে না থাকিত, কেবল স্বর্থের তরঙ্গে ভাসিয় বেড়াইতাম তবে বোধ হয় তেমন ভাবে অমৃতের সন্ধান পাইবার প্রবল ইচ্ছা জাগিয়া উঠিত না বা মনের ভ্রম দূর হইত না। যে পরশমণির পরশ লাভের জন্য মানুষ পথের ভিখারী হইয়। শূন্তমনে অন্ধের ন্যায় চরাচরকে শূন্ত দেখিতে থাকে, জীবনের কোনও এক সময় সেই শুভ মুহূৰ্ত্ত আসে যখন সে তাহাকে পাইয়া নিজেকে ধন্য মনে করে। বিশ্ব নিজেই এক অপরূপ রূপে তাহার নিকট প্রকাশিত হন। তাহারই প্রেরণায়, যতটুকু সাধনা তিনি আমার এই ক্ষুদ্র শক্তির দ্বারা করাইয়। লইয়াছেন, সেই আলোকে আমি আমার বলুকে সকলের ভিতর দেখিবার স্বযোগ লাভ করিয়াছি। মনে হয়, সে আঙ্গিনায়, সেই পূর্বের মত হাসিয়া খেলিয়া বেড়ায়, পূৰ্ব্বাকাশে ভোরের আলোতে তাহারই মুখখানি জল জল করে, স্বৰ্য্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সেও যেন ঘুমের অচেতনে আমার কোলে ঢলিয় পড়ে। আমার বলুকে আমি হারাইয়াও হারাই নাই, বরং তাহাকে আরও নিকটে পাইয়াছি বলিয়া মনে হয়, এক সে আমার বহু হইয়া অহরহ আমার সম্মুখে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, আজ
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।