পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া স্ত্রীসীতা দেবী ( २७ ) ষ্টীমারের পথটা মায়ার প্রতিদ্বন্দ্বী নানা ভাবনার মধ্য দিয়া কাটিয়া গেল। ইন্দুর পীড়ার ভাবনা সারাক্ষণই প্রায় তাহার মনকে ভারাক্রাস্ত করিয়া রাথিত বটে, কিন্তু মাঝে মাঝে ইহারই মধ্যে অকারণেই তাহার মনটা প্রফুল্ল হইয়া উঠিত। তরুণের ধৰ্ম্মই ভাবনাকে ঝাড়িয়া ফেলিবার চেষ্টা করা । মায়ার মনে হইত পিসীমা নিশ্চয়ই কিছু ভাল আছেন, না হইলে প্রথম সেই টেলিগ্রামের পর আরও টেলিগ্রাম আসিত । টাকা পাইয়া কাকার নিশ্চয়ই পিসীমাকে কলিকাতায় লইয়া আসিয়াছে, চিকিৎসা শুশ্ৰiযা সেখানে ভালমতেই হইতেছে। বহুকাল পরে সে আত্মীয়-স্বজনদের দেখিবে, মনে করিতে বেশ খানিকটা আনন্দ পাইত । পিসীমা যদি ভালয় ভালয় সারিয়া ওঠেন, তাহা হইলে বাবাকে বুঝাইয়া পড়াইয়। সে গ্রামেও এক বার বেড়াইয়া আসিতে পারে। প্রথম যখন ব্রহ্মদেশে আসে তখনকার ষ্টীমার যাত্রা অার এবারকার তফাৎ দেখিয়া মধ্যে মধ্যে তাহার হাসি পাইত। সেবারও চারিদিকের মেচ্ছ কাণ্ডকারখানা দেখিয়া সে ঘৃণায় সঙ্কোচে একেবারে পাগল হইয়া উঠিবার জোগাড় করিয়াছিল। আর এখন এই-সব সাহেবীয়ানার মধ্যেই কত নোংরামী, কত বেআদবী আবিষ্কার করিয়া সে বিরক্ত হইতেছে। মানুষের চিন্তার ধারার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর চেহারাই বদলাইয়া যায়। গ্রামে যাইতে পারিলে সেখানটাও না জানি তাহার কেমন লাগিবে। আগেকার সেই প্রবল টান এখন নাই বটে, তবু তাহার বাল্যের লীলাভূমির প্রতি মমতা একেবারে যায় নাই । তাহার মাতার স্মৃতির সহিত এই গ্রামখানির স্মৃতি অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মায়ের স্মৃতিরক্ষার্থে গ্রামে একটা জনহিতকর . প্রতিষ্ঠান করিবার ইচ্ছা বহুদিন হইল মায়া মনে মনে পোষণ করিতেছে, কিন্তু কেমনভাবে কি করিবে, তাহ । এখনও স্থির করিয়া উঠিতে পারে নাই। বাপের সঙ্গে *এ বিষয়ে কথা বলিতে তাহার সঙ্কোচ বোধ হইত। স্থির করিয়া রাখিয়াছিল ইন্দু ভাল হইয়া উঠিলে তাহারই সঙ্গে পরামর্শ করিয়া দেখিবে। টাকার ভাবনাটা অঁাসল ভাবনা নয়, যাহা সংগ্রহ করা মায়ার পক্ষে বিশেষ শক্ত হইবে না । তাহার হাতখরচের টাকা সে সব খরচ করিয়া উঠিতে পারে না, জমা থাকে বেশ খানিকটাই। গহনাও তাহার প্রচুর জমিয়া উঠিয়াছে, সগ করিয়া গড়ায় বটে, তবে প্রায় সে কিছুই পরে না । তাহারও দু একখানা বিক্ৰী করিয়া দেখা যাইতে পারে । * একখানা ডেক চেয়ার টানিয়া বসিয়া মায়া এই সব ভাবনাই ভাবিতেছিল। নিতান্ত ঘুমানোর সময় ভিন্ন অন্য সময় সে কেবিনে থাকিতেই পারিত না । তাহার দুইটি সহযাত্রীর ভিতর একটি বাঙালী, একটি গুজরাটি, কাহারও সঙ্গে তাহার বিশেষ ভাব হয় নাই। বাঙালী বধুটিকে দেখিয় তাহার নিজের কয়েক বৎসর আগেকার কথা মনে হইতেছিল। সেই খাওয়া ছোওয়া লইয়৷ বিচার, সেই সব বিষয়ে খুৎখুতানি, সেই সব বিষয়ে সন্দেহ। এক রকম না খাইয়াই তাহার, দিন কাটিতেছিল। সঙ্গে একটি ছোট মেয়ে, তাহারও প্রায় সেই অবস্থা। কোনোমতে টিনের দুধ একটু করিয়া খাইয়া সে বেচারী প্রাণধারণ করিয়া ছিল । মায়ার সঙ্গে ফল মিষ্টান্ন প্রভৃতি প্রচুর ছিল, মেয়েটিকে দিতে তাহার ইচ্ছা করিত, কিন্তু পাছে মেয়ের মা বিরক্ত হয়, এই ভয়ে সে লোভ সংবরণ করিয়া চলিত। ভদ্রমহিলা মায়াকে মেমসাহেবের কাছাকাছিই একটা কিছু মনে করিয়াছিলেন, তাহার সম্বন্ধেও তাহার ছোয়াছুয়ির বিচারের অস্ত ছিল না ।