পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা] भॆशॆभोंझ। ১২৭ নিরঞ্জন মেয়ের পাশে আসিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “এত কি ভাবছ ?” মায়া বলিল, “পিসীমাকে নিশ্চয়ই কাকার কলকাতায় নিয়ে এসেছে, না বাবা ?” নিরঞ্জন বলিলেন, “আনারই ত সম্ভাবনা । যাক, শুধু শুধু ভেবে লাভ কি ? আর কয়েক ঘণ্টা পরে সব জানাই যাবে। মাঝে এই রাত্রিটা বই ত নয় ?” মায়া বলিল, “জিনিষগুলো সব গুছিয়ে রাখতে হবে । সব চারিদিকে ছড়িয়ে আছে।” ষ্টীমারের শেষের রাত্রিটা বড়ই বিরক্তিকর । সময় আর যেন কাটিতেই চায় না । মায়া যে কতবার উঠিল, বসিল, ঘড়ি দেখিল, তাহার ঠিকানাই নাই। অবশেষে কোনোমতে রাত কাটিয়া ভোরের আলো দেখা দিল । একলা মানুষ, গুছাইতে তাহার বেশী সময় লাগিল না। চা খাইয়া, ডাঙ্গায় নামিবার কাপড়-চোপড় পরিয়া, সে বসিয়া বসিয়া সঙ্গিনীটির কাণ্ডকারখানা দেখিতে লাগিল। র্তাহার কাজ আর ফুরাইল না, একটা বাক্স দশবার খোলেন আর বন্ধ করেন । মেয়েটিকে একবার এক জামা পরাইলেন, আবার কি কারণে সেটা পছন্দ । না হওয়ায় খুলিয়া রাখিলেন। মেয়ে তারস্বরে আপত্তি জানাইতে লাগিল । দেখিয়া দেখিয়া আর যখন তাহার ভাল লাগিল না, তখন মায়া উঠিয়া ডেকে চলিয়া গেল। নিরঞ্জনও ডেকেই ছিলেন। বলিলেন, “যে কারণেই আসি, অনেক কাল পরে বাংলা দেশের মাটি দেখে ভারি আনন্দ হচ্ছে।” মায়া বলিল, “আমার কেবলি মনে হচ্ছে বাবা, পিসীমা অনেকটা ভাল আছেন। তা না হলে আমার মন এত হাল্কা লাগত না ।” নিরঞ্জন হাসিয়া বলিলেন, “মন কি আর সব সময় সত্যি কথা বলে মা ? আমরা যা চাই, মন সেটাতেই সায় দেয় বেশীর ভাগ সময়ই ।” sta কলিকাতার ঘাটে জাহাজ লাগিতেই মহা কোলাহল মুরু হইয়া গেল। নিরঞ্জন বলিলেন, “খোকার মত একটা কাকে দেখা যাচ্ছে যেন ?” মায়া ভাল করিয়া দেখিয়া বলিল, “হ্যা ছোটকাকাই ত । এ দিকের লম্বা ছেলেটা বিজয় বলে মনে হচ্ছে, বাবাঃ, কম লম্বা হয়নি ত, অজয়কেও ছাড়িয়ে গেছে।” নিরঞ্জন বলিলেন, “ভাল, লম্বা চওড়া হলে তবু একটু আশা থাকে যে বাপের মত অকালমৃত্যু হবে না।” নামার গোলযোগে খানিকক্ষণ কাটিয়া গেল। কাঠগড়া পার হইবার পর খোকা এবং বিজয় তাড়াতাড়ি আসিয়া হাজির হইল। মায়াকে দেখিয়া দুজনে ত একেবারে অবাক! এই নাকি সেই মায়া ! মায় কিন্তু আগেকারই মত ছুটিয়া গিয়া তাহদের কাছে দাড়াইল, ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “পিসীমা এখন কেমন আছেন, ছোটকাক ?” খোকা বলিল, “নাড়ানাড়িতে একটু যেন খারাপই মনে হচ্ছিল, কিন্তু কাল থেকে আবার বেশ খানিকট ভালই মনে হচ্ছে।” মায়া খুসি হইয়া বলিল, “দেখলে বাবা, মন মাঝে মাঝে সত্যি কথাও বলে ।” আধ ঘণ্টার মধ্যে তাহারা বাড়ী আসিয়া পৌছিল। ইন্দুর অবস্থা এখন আর বিশেষ আশঙ্কাজনক নয়। তবে বেশী কথাবার্তা বলিতে বা উত্তেজিত হইতে ডাক্তার তাহাকে বারণ করিয়া রাখিয়াছেন । সে মায়াকে এবং নিরঞ্জনকে দেখিয়া একটু হাসিল মাত্র। মায়ার জ্যাঠাইমা বলিলেন, “নাওয়া-খাওয়া করে, তারপর এসে একটু বসিস্। এখন ত তবু কিছু ভাল, যা দশায় নিয়ে এল আমরা ত ভয়েই মরি।” মায়া জ্যাঠাইমার সঙ্গে সঙ্গে বাহির হইয়া আসিল । যাইবার সময় ইহাকে দেখিয়া গিয়াছিল, চওড়া লালপেড়ে শাড়ী পর, হাতে গলায় গহনা, কপালে ও সীমস্তে উজ্জল, সিন্দুরবিন্দু। আসিয়া দেখিল নিরাভরণ। শুভ্ৰবসন৷ বিধবার মূৰ্ত্তি । তাহার বুকের ভিতরটা ব্যথায় মোচড় দিয়া উঠিল । জগতে সবই পরিবর্তনশীল, স্বথও থাকে না, দুঃখও থাকে না, স্মৃতিও দেখিতে দেখিতে মলিন হইয়া আসে। জননীর বিয়োগ দুঃখ সে কবে ভুলিয়৷ গিয়াছে, জীবনের আনন্দে সে এখন ভরপুর। জ্যাঠাইমাকে দেখিলেও ত মনে হয় না শোকের আগুন তাহাকে নিরস্তর দগ্ধ করিতেছে, অথচ কয়েকটা বৎসর আগে