পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ— বস্ত্রশিল্প রক্ষা ও উন্নতির উপায় 〉やか○ হইবে ১২০ । ইহা অবশ্ব কাল্পনিক দৃষ্টান্ত । এরূপ ঘটিলে জাপানী কাপড় বাজার হইতে নিশ্চয় দূরীভূত হইবে ; বিলাতী দূরীভূত না হইলেও তাহার কাটতি কমিবে। মোটামুটি বলা যাইতে পারে, যে, শুষ্ক বসাইবার দরুন জাপানীর দাম সকলের চেয়ে বেশী হইবে এবং বিলাতী ও দেশীর দাম সমান সমান হইলে ও দেশী কাপড় টিকিয়া থাকিতে পারে। কিন্তু শুস্ক বসান সত্ত্বেও যদি বিলাতী ও জাপানী কাপড় দেশী অপেক্ষা সামান্য সস্তা থাকে, তাহা হইলে দেশী কাপড়ের টিকিয়া থাকা কঠিন হইবে । বিলাতী ও জাপানী কাপড় শুল্ক সত্ত্বেও দেশী অপেক্ষা সস্ত করিবার নানা উপায় থাকিতে বা হইতে পারে, যাহ অব্যবসায়ী আমাদের অজ্ঞাত। বস্ত্রবয়ন প্রণালীর উন্নতি ও দ্রুতত সাধন একটা উপায়। যে-সব জাহাজ ভারতবর্য হইতে জাপানে তুলা লইয়া যায়, এবং জাপান হইতে ভারতবর্ষে কাপড় লইয়া আসে, তাহাদিগকে জাপানী গবন্মেণ্ট যথেষ্ট বাউন্ট ( বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য অর্থসাহায্য ) দিয়া যদি জাহাজভাড় খুব কম করিয়া দেন, তাহ হইলে জাপানী কাপড় এদেশে আরও সস্ত হইতে পারে। কাপসে ভেজাল এবং কাপড়ে বেশী মণ্ড দিয়া খেলে জিনিষ দেখিতে সরেসের মত করিলেও আপাততঃ সস্তায় দেওয়া যায়। জাপানীরা শিল্পনৈপুণ্য ও ব্যবসাবুদ্ধির প্রভাবে বিলাতে পৰ্য্যস্ত কোন কোন কাপড় ও গেগ্নী প্রভৃতি বিলাতী অপেক্ষ সস্তায় বেচিতেছে। তাহারা সহজে পরাস্ত হইবে না। জয় পরাজয় যাহারই হউক বা না হউক, শুন্ধের জন্য কাপড়ের দাম বাড়িবে এবং সেই বৰ্দ্ধিত দাম ভারতীয় ক্রেতাদিগকে দিতে হইবে। যদি শুল্কের দরুন বিলাতী ও অন্য সব বিদেশী কাপড়ের দাম দেশীর তুলনায় এত বেশী হইয়া যায়, যে, তজ্জন্য বিদেশীর কাটতি না থাকায় তাহার আমদানীই বন্ধ হয়, তাহা হইলে অবশ্ব ভারতীয়দিগকে বেশী দাম দিয়া বিদেশী কাপড় কিনিতে হইবে না। কিন্তু সেরূপ অবস্থাতেও নিশ্চিন্ত হইবার জে থাকিবে না। . বিদেশী কাপড়ের প্রতিযোগিতা না থাকিলে দেশী কলওয়ালারা তাহাদের কাপড়ের দাম বাড়াইয়া দিতে পারে। তাহা হইবার খুবই দম্ভাবনা । কারণ, এখন ভারতবর্ষের যত কাপড় দরকার হয়, দেশী মিলে ও হাতের র্তীতে তত কাপড় উৎপন্ন হয় না । স্বতরাং বাজারে শুধু দেশী কাপড় থাকিলে তাহার চাহিদা অপেক্ষ যোগান কম হওয়ায় তাহার দাম বাড়িবে। কোন প্রকাব শুল্ক না বসিলেও, স্বদেশীর প্রতি ভারতীয়দের অনুরাগ বশত ও বিদেশী কাপড় বাজার হইতে দূরীভূত হইতে পারে। কিন্তু এই অমুরাগের মাত্রা এপর্য্যন্ত যথেষ্ট হয় নাই। যথেষ্ট হইলেও মূল্য সম্বন্ধে সুবিধা ন হইতে পারে। তাহ বঙ্গবিভাগজনিত আন্দোলনের সময় দেখা গিয়াছিল। যখন ঐ আন্দোলন প্রযুক্ত বঙ্গের বাজার হইতে বিদেশী কাপড় অনেকট বহিস্কৃত হইয়াছিল এবং দেশ মিলের কাপড়ের কাটতি বাড়িয়াছিল, তখন সেই সুযোগে বোম্বাইয়ের কলওয়ালার তাহাদের কাপড়ের দাম খুব বাড়াইয়াছিল এবং জাপানী ও বিলাতী কাপড় দেশী বলিয়। চালাইয়াছিল। মানুষের নৈতিক উন্নতি ন হইলে কেবল বাহ উপায়ে কখনও জাতীয় কল্যাণসাধন ও সুবিধাবৰ্দ্ধন করা যায় না। বস্ত্রশিল্প রক্ষা ও উন্নতির উপায় ইংলণ্ডে ও জাপানে তুলা উৎপন্ন হয় না। এই দুই দেশ ও ইটালী চেকোস্লোভাকিয়া প্রভৃতি দেশ অন্য দেশ হইতে তুলা লইয়া গিয়া স্বতা ও কাপড় তৈয়ার করে। মিহি সুতা ও কাপড়ের জন্য আমেরিকা ও মিশর দেশ হইতে এবং অন্য রকম স্বতা ও কাপড়ের জন্য প্রধানতঃ ভারতবর্য হইতে তাহাদিগকে তুলা লইয়া যাইতে হয়। তাহাদিগকে সেই তুলার জিনিষ ভারতবর্ষে বিক্ৰী করিবার নিমিত্ত দুবার জাহাজ ভাড়া দিতে হয়—তুলা লইয়া যাইবার জন্য এবং কাপড় ও স্বতা এদেশে পাঠাইবার জন্য । তাহা সত্ত্বেও তাহারা ভারতীয় মিলগুলিকে প্রতিযোগিতায় পরাস্ত করে । তাহার অনেক কারণ আছে। যথা— ক্রয়বিক্রয়ের উৎকৃষ্ট বন্দোবস্ত, কলের উন্নতি সাধন ও উৎকৃষ্টতম কল ব্যবহার, শিক্ষার দ্বারা কারিগর মজুরদের নৈপুণ্য বৃদ্ধি, শ্রমিকদিগকে যথেষ্ট বেতন দিয়া ও তাহাদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বন্তি বৃদ্ধির বন্দোবন্ত করিয়া তাহদের শ্রমশক্তি ও পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইত্যাদি।