➢ዓb” প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড দাগের মধ্যে বি-এন-অার এবং জি-আই-পি রেলবাহিনীর হৃৎস্পন্দন দুই দীর্ঘ দিন ধরে চিহ্নিত হয়ে গেছে। এই কাজটা খুব ভালো লাগছিলো। আমার নিশ্চিস্ত বিশ্বাস মহাভারতের অতি বিপুলতা থেকে আমি তার যে সারভাগ উদ্ধার করেছি সেটা অতি উত্তম হয়েচে । আশা করি ওটা ছাপানো হবে। বাকি সময়টা আমার দীর্ঘকাল সঞ্চিত রুদ্ধচিন্তা নির্জন অবকাশের উপর দিয়ে উদ্বেল হয়ে চলেছে। আজ পচিশ বছর থেকে যে কাজ বহু দুঃখে বহন করে এসেছি তার পরিশিষ্ট্রভাগের অনেক গভীর বেদনা সূৰ্য্যাস্তকালের প্রলয়চ্ছটার মতো অন্তর থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে উঠছিল। লোক-ব্যবহারে তোমরা আমাকে অনেকে নিৰ্ব্বোধ বলেই জানো—আমার সেই নিৰ্বদ্ধি বেকেচুরে নানা আকারে জেগে ওঠে, যে হেতু আমি সাহস করে কাজ করি। কৰ্ম্মে যদি প্রবৃত্ত না হতুম তা হলে আমার বুদ্ধিভ্রংশতার পরিচয় কেউ পেত না। কিন্তু তবুও ব্যবহারিক অবিবেচনা সত্ত্বে কেবলমাত্র ভাবের জোরে নানাবিধ ভাঙাচোরা ভুলত্রুটির উপর দিয়েও কিছু স্বষ্টি করতে পেরেচি। কেবলমাত্র কৰ্ম্মকুশল বুদ্ধি দিয়ে কেউ হৃষ্টি করতে পারে না, ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু স্বষ্টির বাইরেকার যে ব্যবস্থা তার খুব বেশি দাম নয়, বড়ো দুঃখের মধ্যে দিয়েও এ গৰ্ব্ব আমি করতে পারি। একটা ধারা রয়েচে, সে ধারা দুর্গম নির্জন উপরের শিখর থেকেই অবতীর্ণ—সেই ধারাকে স্রোতহীন বালুকাস্তপে আবদ্ধ করতেও পারে—সেই বালিকে জমতে দেখেচি—তবু অব্যক্ত যদি কোনো এক সময়ে ব্যক্ত হয়ে থাকে সেও কম কথা নয়। প্রথম দিনের ভোজ থেকে কল্পনা কোরো না দ্বিতীয় দিনে আমাদের আহাৰ্য্যে কিছু কৃপণতা ঘটেছিল। যাকে ইংরেজি ভাষায় বলে, লাঞ্চ, বলে ডিনার, বলে টি, তারি রেলগাড়ীর মূৰ্ত্তিমান বিগ্রহ যথাসময়ে ক্ষণে ক্ষণে আমার কামরায় আবিভূত হয়েচে । তাতে গ্রহণের চেয়ে বর্জনই বেশি ঘটল। সেজন্তে দুঃখ কোরো না-সমস্তই যদি অঙ্গীকার করতুম, তাহলেই অনেক বেশি অনুশোচনার কারণ ঘটত। অবশেষে বোম্বাই ষ্টেশনে প্রাতঃকালে গাড়ি এসে থামল। ইতিমধ্যে আমার অভিভাবক আমাকে সুসজ্জিত করবার অভিপ্রায়ে সন্ধান করতে গিয়ে আবিষ্কার করলে চাবি নেই। আমার প্রসাধনের পেটিকায় সৌভাগ্যক্রমে একটা সাধুবেশ ছিল। সেইটে পরে নিলুম। অম্বালাল এসে আমাকে অধিকার করে তাজমহল হোটেলে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়েই চাবি তৈরির ব্যবস্থা করা গেল। ইতিমধ্যে রুটি টোষ্ট্র ও কফি খেয়ে জানালার কাছে একটি আরাম-কেদারায় নিবিষ্ট হয়ে বসূলুম। অদূরে ক্ষীণ কুহেলিকার আভাসে অনতিস্পষ্ট আকাশের নীচে নীল সমুদ্র দেখা যাচ্চে—স্বৰ্য্যদেব তখনো ওঠেন নি । ক্লাস্তি-সমুদ্রের সাত বাও জলে তখন ডুবে আছি। আগের রাত্রে কয়েকটি অত্যন্ত নিম্প্রভ লোকের সঙ্গে ডিনার খেয়ে দেহমনপ্রাণ অবসাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। শুতে যাবার সময় চৌকি থেকে বিছানায় যেতে মনে হচ্ছিল যেন পৰ্ব্বত লঙ্ঘন - কবৃতে যাচ্চি। একে একে সকলেই শুত গেল – আমিও বহুকষ্টে শয্যা আশ্রয় করে রাত্রিযাপন করুলুম। সকালে সহযাত্রীরা বাজার করতে বেরলেন। ফিরে এসে অপূৰ্ব্ব গৰ্ব্বোৎসাহে উৎফুল্ল হয়ে জানালেন যে, তিনি আমার জন্তে আশ্চৰ্য্য সস্তাদামে একটি কুশন কিনেচেন । একাত্তর টাকা তার মূল দাম-নিতান্তই কেবল নিজের বুদ্ধিকৌশলে সেটাকে নামিয়ে সাঁইত্রিশ করেচেন । আমি শাস্তিরক্ষার অভিপ্রায়ে তার বুদ্ধিকৌশলের সম্বন্ধে কোনো মত প্রকাশ করলেম না । ক্লাস্তিভার ও দেহভার একসঙ্গে বহন করে শুভ পয়লা মার্চ তারিখে শুক্রবাসরে অপরাহ্ল চতুরটের সময় জাহাজে ওঠ গেল। যখন ষ্টুয়াড দেখা দিলে প্রকাশ পেলে এ আমার পূর্ব-বন্ধু। মোরিয়া জাহাজে এ দুই যাত্রায় আমার সেবা করেছিল। নীলমণির বদলে শ্বেতমণিকে পেলুম । তার পরে দিনমণি অস্তাচল-চুড়াবলম্বী। অকস্মাৎ, অপূৰ্ব্ব চমকে উঠে খবর পেলে ডিনারের সময় সমাগত। দুই বন্ধু তাড়াতাড়ি ক্যাবিনে প্রবেশ করলে। ডিনারের সময় অতিবাহিত হতে চলল। এরা ক্যাবিনে প্রবেশ
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।