পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ক্যানাডার পথে ১৭৯ করার বিষ্ঠে শিখেচে, বেরোবার বিষ্ঠে শেখেনি। তখন টাকারকে নিয়ে আমি নিঃসহায়ভাবেই ভোজনশালায় গেলুম। তখন অৰ্দ্ধেক ডিনার শেষ হয়ে গেছে। এরা দুজনে যখন এল তখন ডিনার চন্দ্রমার পূর্ণগ্রাসের কেবল এক কলা বাকি। তারপরে ট্যাজিডি কি রকম জম্ল বলবার সময় নেই। আজ সকালে জাহাজের প্রকাশ্ব স্থানে নোটিশ প্রচার করা হয়েছে, আরোহিগণ দয়া করে ডিনার টেবিলে আধঘণ্টার বেশি দেরী যেন না করেন। পি-এও-ও জাহাজের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। ૨ মানুষ মাকড়সারই মত। সে নিজের অন্তর থেকেই হাজার হাজার সূক্ষ্ম সূত্র বের করে জাল বাধে, নিজের অব্যবহিত পরিবেশের সঙ্গে নিজের বিশেষ সম্বন্ধ ধ্রুব করতে চেষ্টা করে । যখন সেই বাসা বাধে, গ্রস্থি এমন পাকা করে আঁটতে থাকে যে, ভুলে যায় যে বারে বারে এগুলো ছিন্ন করতে হবে। এইজন্যেই যখন দূরে যাত্রা করবার সময় আসে তখন খোটা ওপড়ানো ও রসি টেনে ছেড়া এত কঠিন হয়ে ওঠে। মানুষ যখন বাড়ি তৈরি করে তখন নিজেকে মনে মনে আপন স্বদূর ভাবীকালে বিস্তার করে দেয়—যে কালের মধ্যে তার নিজের স্থান নেই। তাই পয়লা নম্বরের ইট ও সেরামার্কার দামী সিমেন্ট ফরমাস করে—তা’র নিজের ইচ্ছের কঠিন স্ত পটাকে উত্তরকালের হাতে দিয়ে যায়,— সেই কাল সেটার গ্রন্থি শিথিল করতে লেগে যায় নয়তো নিজের চলতি ইচ্ছের সঙ্গে সেই স্থাবর ইচ্ছেটার মিল করাবার জন্যে নানাপ্রকার কসরৎ করতে থাকে। বস্তুতঃ মামুষের বাস করা উচিত সেই তাবুতে যে র্তাবুর ভিং মাটিকে প্রাণপণে আকৃড়ে ধরে ন এবং পাথরের দেয়াল উচিয়ে মুক্ত আকাশকে মুষ্টিঘাত করতে থাকে না। আমাদের দেহটাই যে আলগা বাসা, আমাদের যাযাবর আত্মার উপযোগী, যাত্রা করবার সময় এলে সেটাকে কাধে করে নিয়ে যেতে হয় না। অনেকবার পরামর্শ দিয়েচি ইটকাঠের বঁাধন দিয়ে অচল ডাঙার উপরে বাড়ি তৈরি কোরো না,ম্রোতের উপর সচল বাসার ব্যবস্থা কর—যখন স্থির থাকতে চাও একটা নোঙর এইজন্যেই আমি তোমাকে- . নিজের ধ্যানমন্দির পাকা করুক । নামিয়ে দিলেই চলবে—আবার যখন চলতে চাও তখন নোঙরটা টেনে তোলা খুব বেশি কঠিন হবে না। আমাদের কালস্রোতে-ভাসা জীবনের সঙ্গে আমাদের বাসাগুলোর সামঞ্জস্ত থাকে না বলেই টানা ছেড়ায় পদে পদে দুঃখ পেতে হয়। আমাদের বাসাগুলোর মধ্যে দুটো তত্ত্বহ থাকা চাই—স্থাবর এবং জঙ্গম । থাকবার বেলা থাকৃতে হবে ফেলবার বেলা ফেলতে হবে—আত্মার সঙ্গে দেহের সম্বন্ধের মত। এ সম্বন্ধ স্বন্দর, কারণ এটা ধ্রুব নয়। সেইজন্যেই নিয়তই দেহের সঙ্গে দেহীর বোঝাপড়া করতে হয়, সাধনার অন্ত নেই, এর বেদনা, এর আনন্দ সমস্তই অধ্রুবতার স্রোত থেকেই আবৰ্ত্তিত হয়ে উঠচে— এর সৌন্দৰ্য্যও সকরুণ, তার উপরে মৃত্যুর ছায়া। কালের এবং ভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই এর পরিবর্তন চলেইচে—আমাদের জোড়াসাকোর বাড়িটার মতো অবস্থাস্তরগুলোকে অস্বীকার করবার চেষ্টা করচে না । তারপরে জীবনের পালা যখন শেষ হল তখন ভাবীকালের সঙ্গে নতুন সম্বন্ধ পাতাবার জন্য পথের ধারে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে থাকে না । , সংসারে আমাদের সব বাসা এমনি হওয়াই ভালো । আমার ধ্যান যে রূপকে আশ্রয় করেচে, পরের কথাতে নিজেকে বেচবার জন্যে সে যেন সেজেগুজে লোভনীয় হয়ে বসে না থাকে। নিজেকে সম্পূর্ণ করে পরে অন্তকালের অন্যলোকের তপস্তাকে ইচ্ছাকে সম্পূর্ণ পথ ছেড়ে দিয়ে যেন একেবারেই সরে দাড়ায়। নইলে কালের পথরোধ করতে চেষ্টা করলে তার দুর্গতি ঘটতে বাধ্য। টাকার জোরে আমরা আমাদের ধ্যানের রূপটাকে বেঁধে দিয়ে যেতে ইচ্ছা করি । তার মধ্যে অন্ত পাচজনের ধ্যান যখন প্রবেশ করতে চেষ্টা করে তখন সেটা বেখাপ হতেই হবে। আমার উচিত ছিল বিশ্বভারতীর সম্পূর্ণতা সাধনের জন্যে বিশ্বভারতীর শেষটাকা ফুকে দিয়ে চলে যাওয়া। তার পরে নতুন কাল নিজের সম্বল ও সাধনা নিয়ে আমার সঙ্গে যদি মেলে তো ভালো, যদি না মেলে সেও ভালো । কিন্তু এটা যেন ধার করা জিনিষ না হয়। প্রাণের জিনিষে ধার চলে না— অর্থাৎ তাতে প্রাণবান কাজ হয় না—আমগাছ নিয়ে