পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ক্যানাডার পথে ンb〜> মাটিং হয় না। হয় কেবল আগমনীর ও বিসর্জন, আজ রাত্রে পিনাঙ, ইতি ৭ই মার্চ ১৯২৯ । কাল পৌছব কোবে। 8 পার্থী বাসা বাধে খড়কুটে দিরে, সে বাস ফেলে যেতে তাদের দেরি হয় না। আমরা বাসা বাধি প্রধানত মনের সামগ্ৰী দিয়ে—কাজেকৰ্ম্মে লেখায় পড়ায় ভাবনাচিন্তায় চারদিকে অদৃঙ্গ আশ্রয় তৈরি হতে থাকে। হাওয়াগাড়ির গদি যেমন শরীরের মাপে টোল খেয়ে খোদলগুলি গ'ড়ে তোলে, মন তেমনি নড়তে চড়তে তার হাওয়া-আসনে নানা আকারের খোদল তৈরি করে—তা’র মধ্যে যখন সে বসে তখন সে ব’সে যায় । তা’র পরে যখন সেটাকে ছড়িতে হয় তখন আর ভালো লাগে না। এ জাহাজে আমার তেমনি ঘটেচে। এই ক্যাবিনে একটা লেখবার ডেস্ক, আর এক পাশে বিছানা, তা ছাড়া আয়না-ওয়াল দেরাঞ্জ, আর কাপড় ঝোলাবার আলমারি। এর সংলগ্ন একটি নাবার ঘর—সেটা পেরিয়ে গিয়ে আর একটা ক্যাবিন, সেখানে আমার বাক্স তোরঙ্গ প্রভৃতি। এরই মধ্যে মন নিজের আসবাব গুছিয়ে নিয়েচে । অল্প জায়গা বলেই আশ্রয়টি নিবিড় । প্রয়োজনের জিনিষ সমস্ত হাতের কাছে । এখান থেকে নেমে দুদিনের জন্তে সাংহাইয়ে “স্ব"-র বাড়িতে ছিলুম। ভালো লাগেনি—অত্যন্ত ক্লাস্ত করেছিল। তা’র প্রধান কারণ, নতুন জায়গায় মন তা’র গায়ের মাপ পায়নি— , চারদিকে এখানে ঠেকে, ওখানে ঠেকে—আর তার উপরে দিনরাত অাদর অভ্যর্থন গোলমাল । অ-দের সঙ্গে আমার তফাৎ এই যে, এই রকমটাই ওদের ভালো লাগে-অভ্যস্ত জায়গাতেই ওদের বিরক্ত করে। ওদের মন বোধ হয় নিজের ভাবনা দিয়ে বাসা তৈরি করতে জানে না। প্রতিদিনের প্রবহমান ভাবনাকল্পনার মধ্যেই নতুনত্ব-বাইরের নতুনত্ব তাকে বাধা দিতে থাকে। জীবনে আমরা যে কোনো পদার্থকে গভীর ক’রে পেয়েছি, অর্থাৎ অনেক দিন ধ’রে অনেক ক’রে জেনেছি সত্যিকার নতুন তারি মধ্যে। তাকে ছেড়ে নতুনকে খুজতে হয় না। অন্য সব মূল্যবান জিনিষেরই মতে নতুনকে সাধনা ক’রে লাভ করতে হয় অর্থাৎ পুরানো ক’রে তবে তা’র পরিচয় পাওয়া যায়। হঠাৎ যাকে পেয়েছি বলে মনে হয় সে ফাকি দুদিন বাদেই তা’র যথার্থ জীর্ণতা ধরা পড়ে। আজকের দিনে এই সস্তা নতুনত্বের মৃগয়ায় মানুষ মেতেছে—সেই জন্যেই মুহূৰ্ত্তে মুহূৰ্ত্তে তা’র বদল চাই। তা’র এই বদলের নেশায় বিজ্ঞান সহায়তা ক’রচে, কেননা, তা’র কাজ ভোগ করা নয়: কেবলি যোগ করা । মানুষ সময় পাচ্চে না গভীরের মধ্যে তলিয়ে গিয়ে চিরনূতনের পরিচয় পেতে। এইজন্যেই চারদিকে একটা পুথি-পড়া ইতরতা ব্যাপ্ত হয়ে পড়চে । ধ্রুবসত্যকে সত্যরূপে পাবার সময় নেই—সময় নেই। সাহিত্যে যে ব্যক্তিগত গালমন্দ, যে অশ্লীলতা দেখা দিয়েচে এই তা’র কারণ। এই সমস্ত ক্লেদাক্ত স্কুল পদার্থ অতি সহজেই মনে দাগ লাগায় ও মনকে জোরের সঙ্গে ঠেলা মারতে পারে। যাদের সময় নেই, যাদের শক্তি কম তাদের পক্ষে অতি দ্রুতবেগে আমোদ পাবার এই সস্তা উপায় । তীব্র উত্তেজনা চাই সেই মনের পক্ষে যে-মন নিজীব, যে-মনের জীবনী শক্তি ক’মে গেছে, অগভীর মাটির তলায় যার শিকড় গুলো উপবাসী।