পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেকী ঐীরামপদ মুখোপাধ্যায় বিপুল বিষয়ের অধিকাংশই দেবতার সম্পত্তি। পুরুষাহকমে আবৃত্তি করিতে করিতে অতি প্রত্যুষে ভগ্ন দেউলের মধ্যে ভোগ করিতে করিতে ছয় ঘর ছাপান্ন ঘরে দাড়াইয়াছিল, এবং কালস্রোতে ভাসিতে ভাসিতে সেই ছাপান্ন ঘরের অধিকাংশ কে কোথায় গিয়া পড়িয়াছে তাহার ঠিকঠিকানা নাই। এই বনজঙ্গলাকীর্ণ পল্লীগ্রামে এখনও যাহারা ঝড়ঝঞ্জা সহিয়া টিকিয়া আছে, তাহাদের সংখ্যা সাড়ে তিনঘর,—অর্থাৎ এক অংশে মাত্র এক বিধবা বৰ্ত্তমান । ইহারাই পালা করিয়া বিগ্রহের সেবা চালাইয়া থাকেন। বিগ্রহদত্ত সামান্ত ভূসম্পত্তি ও দূরদূরান্তে অবস্থিত চাষী যজমানই ইহাদিগের অশনবসনের সমস্ত ভার বহন করে। সে পুরুষানুক্রমে সঞ্চিত বিপুল বিযয় কোথায় উড়িয়া গিয়াছে,-কেহ তাহার সন্ধান রাখে না । সেই অতীত সমৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয় শুধু অৰ্দ্ধভগ্ন পূজার দালান, জঙ্গলাকীর্ণ নাটমন্দির,—স্থানভ্রষ্ট ইষ্টকস্তাপে সমাচ্ছন্ন নহবতখান, পঙ্ক-শৈবাল-সমাকীর্ণ লুপ্তপ্রায় পুষ্করিণী ও তাহার চারিপাশের বহুদূর-বিস্তৃত দেউলের সীমারেখা । যদিও অরণ্যচারী হিংস্ৰ শ্বাপদ ইহার অভ্যস্তরে গর্জন করিয়া ফিরে না, তথাপি ঐ সাড়ে তিনঘরের দ্বেষ কলহ ও কুৎসিৎ গালিগালাজে দেবতার পাষাণবেদী লজ্জায়, নিত্য কালো হইয়া উঠে। একে জনবিরল পল্লী, নিত্য পুজার্থীর পদধ্বনি পাষাণসোপানে বাজিয়াউঠে না, কিন্তু কোন পৰ্ব্ব উপলক্ষ্যে দেবদুয়ারে যে অল্পসংখ্যক জনসমাগম হইয়া থাকে, তাহা লইয়া ইহাদের মধ্যে ধূমায়মান কলহের বহ্নি উদ্দীপ্ত হইয়৷ উঠে এবং পরবর্তী পৰ্ব্ব আসিবার পূর্ব পর্য্যস্ত প্রতি প্রভাতে বা সন্ধ্যায় তাহার জের চলিয়া থাকে । ইহাদের মধ্যে সনাতনের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল। গুজাহীন দেশে, তিঙ্গি প্রত্যহ গ্রাম্য নদীতে অনুকল্প স্বান করিয়া, ফোটা তিলক কাটিয়া, মুখে দেবস্তোত্র ভগ্ন পুষ্প চয়ন করিয়া থাকেন। পালা না থাকিলেও দেবতার পূজা অৰ্চনাদি ইহার নিত্যকর্মের মধ্যে। শিয়া-সেবকগণের নিকট সেই কারণে খ্যাতি-প্রতিপত্তিও কিছু অধিক । অবসরমত ডাক্তারী, এ্যালোপাথি ও হোমিওপাথি, দুই চিকিৎসাই চালাইয়া থাকেন এবং সময়ে সময়ে অবস্থা বুঝিয়া বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ঔষধাদির ব্যবস্থাও—করেন। তাই দিন দিন গুণমুগ্ধ শিষ্যদল, অপর সরিকের আশ্রয় ছাড়িয়া তাহার আনুগত্য স্বীকার করিয়া অবশেষে র্তাহাকেই গুরুপদে বরণ করিয়া লইতেছে! সেজন্য অবশ্ব প্রতিপক্ষের আক্রোশ অত্যধিক ; এবং তাহাদের বাধাহীন রসনা শ্লীলতা ভুলিয়া দিবারাত্র উহাকে অভিনন্দন দিয়া থাকে। প্রত্যুত্তরে তিনি হাসিয়া বলেন,–ঈর্ষা –এবং ললাটে অঙ্গুলি স্থাপন করিয়া জানাইয়া দেন, ইহা ত কেহ কাড়িয়া লইতে পারে না! হয় ত এ বিশ্বাসও র্তাহার দৃঢ় ছিল যে, লোকের মনোগত ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকারী আইন কোন কালেই কাৰ্য্যকরী হয় না। শিষ্য যদি গুরুত্যাগ করিয়া অপরকে আশ্রয় করে ত সে দোষের শাস্তি দিবার সামর্থ্য ইহলোকের বিচারালয়ে নাই, কাজেই শিস্যবৃন্দে পরিপুষ্ট হইয়া তিনি উচ্চকণ্ঠে অদৃষ্টেরই জয় ঘোষণা করিয়া থাকেন ! ". সনাতনের সংসারে পত্নী আছে, এক পুত্র ও দুই কন্যা আছে—এবং অনাবশ্বক পোষ্যস্বরূপ বৃদ্ধ মাতা। ও বিধবা ভগিনীও বৰ্ত্তমান। স্বতরাং বাহিরে অভাবঅনটন লাগিয়াই আছে । নিত্য এককাঠা সিদ্ধ ও আধকাঠা আতপ চাউলেরখরচ। ছোটমেয়ের , দুধ, হাটবাজার, মাছ তরিতরকারিও সময় সময় কিনিতে হয়। তার পর ধোপানাপিত, অতিথি-অভ্যাগতের খরচও নেহাৎ মন্দ নয়! :