পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ) নতুবা এতখানি ঔদার্ঘ্য ও মহত্ব তাহার মত কুসীদজীবীর পক্ষে সম্ভবে না । অপরাহ্লে অর্থ মিলিল। বিবাহবাড়ীতে কোলাহল পড়িয়া গেল। ঢেকীশালে নূতন টেকী আসিল, রান্নাঘর স্বসংস্কৃত হইল, দোকান হইতে চাল, ডাল, মশলা, জাম কাপড় প্রভৃতি আসিল ও ঘন ঘন শঙ্খ হুলুধ্বনির মধ্যে ভাবী শুভকার্ধ্যের উল্লাস উচ্ছসিত হইয়া উঠিল।

  • S) বিবাহের পরদিন প্রচুর বান্তোন্তম সহকারে বরবধু গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়া আসিল—পুরনারীরা মহোল্লাসে তাহীদের বরণ করিয়া লইলেন ।

বধুর বর্ণ দেখিয়া, গৃহিণী অস্তরে অন্তরে শত ধিক্কার দিয়া প্রকাশ্যে হাসিয়া সকলকে জিজ্ঞাসা করিলেন,— কেমন বেী হয়েছে গা ? সকলে একবাক্যে বলিল,-ত বেশ হয়েছে, আয়পয় থাকলেই হ’ল । গেরস্ত ঘরে কে আর ডানাকাটা পরী আশা ক’রে থাকে মা ! বৃদ্ধা ঠাকুরমা বধূর গালে সাতটা চুম্বন দিয়া বলিলেন, —আমার মা লক্ষ্মী । কিন্তু লক্ষ্মীর আগমনে একজনের মুখ অকস্মাৎ বিষম গম্ভীর হইয়া গিয়াছিল ;--উল্লাসমৰ্ত্ত মেয়ের তাহা লক্ষ্য করেন নাই। তিনি বিষন্ন গম্ভীর মুখ লইয়া সারাদিন বাড়ীর ভিতর আসিলেন না, মেয়েদের আনন্দ-প্রবাহ রুদ্ধ করিতে চাহিলেন না । সন্ধ্যার পর গৃহিণী কি প্রয়োজনে বাহিরের ঘরে আসিয়া স্বামীর চিন্তাবিহ্বল মূৰ্ত্তি দেখিয়া"ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন,—কি ব্যাপার ? তিনি মান হাসিয়া বলিলেন,—ও কিছু নয়, তোমরা কাজ করগে । গৃহিণী বলিলেন,—শুভকৰ্ম্মের দিনে এমন মুখ গোমড়া ক’রে থাকলে কারই বা কাজেকর্শ্বে মন যায় ! কাল বৌভাত, লোকজন নেমত্তয় কত্তে হবে— সনাতন বাক্যব্যয় না করিয়া কাগজ কলম লইয়া ফৰ্দ্দ করিতে বসিলেন । - একমাত্র পুত্র—তাহার বিবাহে মহুষ্যজন্মের সাধ মেকী আহলাদ মিটাইবার জন্য অবশ্বপ্রয়োজনীয় অঙ্গকে বাদ দেওয়া চলে না । কুটুম্ব কুটুম্বিনী, অতিথ অভ্যাগত, শিষ্য সেবক, ও পাড়াপ্রতিবেশী যাহাদের চক্ষুলঙ্গার খাতিরে নিতান্তই না বলিলে নয়,—সকলের নাম ফর্দস্থ হইলে দেখা গেল, চারি শত মুদ্রার কম এ সাধ-আহ্লাদ কোন প্রকারেই মিটিতে পারে না । কর্জের অধিকাংশ অর্থই ব্যয়িত হইয়াছিল, ছিল যৎসামান্ত । গৃহিণী ললিলেন,-দেনার টাকাটা আর শুধে কাজ নেই,—গদাধরের শ্বশুর যা দিয়েছে, তাই দিয়ে এখন মান রক্ষে কর । - - কৰ্ত্ত গম্ভীর মুখে একবার ‘হু’ বলিয়া চুপ করিলেন। গৃহিণী পুনরায় কহিলেন,—ঐ একটি মাত্র ছেলে, মেয়েটি ঈশ্বর ইচ্ছায় পার হয়ে গেছে, ভাবনা কেন ? তুমি যাও,-কোন রকমে মানটা তো বাচুক । ‘মান রক্ষার জন্য অগত্য সনাতনকে পুনরায় যজ্ঞেশ্বরের নিকট হতে পাতিতে হইল। গদাধরের শ্বশুরবাড়ীর রহস্য আর গৃহিণীর কর্ণগোচর করিতে প্রবৃত্তি হইল না। ভাবিলেন,- জ্ঞানই মানুষের যত কিছু অশাস্তির মূল। সংসার-সমুদ্রের তুফানে চক্ষু মুদিয়া, পিঠ পাতিয়া পৰ্ব্বতাকার তরঙ্গ লওয়াতে তৃপ্তি ও উল্লাস আছে, কিন্তু চক্ষু চাহিয়া সে ভয়ঙ্কর স্বন্দরকে দূর হইতে দেখিলেও আশঙ্কায় মুখ মান হইয়া যায়, বক্ষ দুরু দুরু কঁাপিয়া উঠে— স্পর্শ তে দূরের কথা । মনুষ্যজন্মের সাধ-আহলাদও অমনি আবর্তের মাঝে পাক খাইয়া চলিয়াছে। কল্পনার নেত্র মেলিয়া যত কিছু রমণীয়তা দেখিতে ইচ্ছা কর, দেখ ক্ষতি নাই, কিন্তু সাবধান,—কখনও জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন করিও না । তাই আদিম মানব জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইবার পূৰ্ব্বে সৰ্ব্ব দেহে ও অস্তরে পরম স্বচ্ছন্দ্য ও A برا$ উৎসব তৃপ্তি অনুভব করিত। যজ্ঞেশ্বর হাসিমুখে টাকাটা আনিয়া দিলেন ও ভক্তি গদগদচিত্তে আর একবার সনাতনের পদধূলি লইয়া জয় কামনা করিলেন । জয় হয়তো তাহার নিঃসন্দেহই হইবে, কেন না,