পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] ও শ্রমী বাদশাহের পঞ্চাশ বৎসর শাসনের ফল কি ন। অতুলনীয় বিফলতা। ট্রাজেডীর অঙ্কগুলির মত আওরংজীবের জীবন পদে পদে ঠিক সেই অন্তিম ফলের দিকে অনিবাৰ্য্য গতিতে অগ্রসর হইয়াছিল। আওরংজীবের জীবন-নাটকের প্রথম অঙ্ক তাহার জন্ম হইতে ৪০ বৎসর বয়স পর্যান্ত, অর্থাৎ পিতা শাহজাহানের রাজত্বকাল। এটিকে উদ্যোগপৰ্ব্ব বলা যাইতে পারে, কারণ এই সময়ে নানা প্রদেশে স্থবাদারি ও নানা যুদ্ধে সেনাপতিত্ব করিয়া রাজকুমার হাত পাকাইয়া লন এবং ভবিষ্যতে সাম্রাজ্য শাসনকার্য্যের জন্য নিজকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করিয়া তোলেন । দ্বিতীয় অঙ্ককে যুদ্ধপর্ব বলা যাইতে পারে। এটি পিতৃসিংহাসন লইয়া চারি ভ্রাতার মধ্যে দুই বর্ষব্যাপী যুদ্ধ ( ১৬৫৮—১৬৫৯ ) ; ইহার ফলে আওরংজীবের চারিটি মহাযুদ্ধে জয় এবং দিল্লীর ময়ূরসিংহাসন লাভ ৷ তাহার পর বাইশ বৎসর ধরিয়া তাহার উত্তর-ভারতে স্থিরভাবে বাস এবং রাজ্যশাসন । এই সময়ে সীমান্তে ও রাজপুতানায় যুদ্ধ বাধিলেও তাহার অবসান হয় এবং দেশের মধ্যে তেমন বড় কোন বিদ্রোহ হয় নাই। সুতরাং ইহাকে শাস্তিপৰ্ব্ব বলা যাইতে পারে। আওরংজীবের জীবনের তৃতীয় অঙ্কে ৰ্তাহার সমস্ত শত্রু পরাজিত, র্তাহার রাজশক্তির প্রভাব মধ্যাহ-সূর্য্যের মত প্রখর ; তাহার রাজকোয ধনে পূর্ণ, দেশময় শান্তি ও ঐশ্বৰ্য্য বৃদ্ধি ; যেন তিনি সৌভাগ্য ও গৌরবের চূড়ায় পৌছিয়াছেন। কিন্তু ট্রাজেডীর নিয়ম অনুসারে চতুর্থ অঙ্কে পতনের স্বত্রপাত ; এ ক্ষেত্রেও তাঁহাই ঘটে । এই জীবননাটকের তৃতীয় অঙ্কের শেষ বৎসরে ( ১৬৮১ সালে ) আওরংজীবের বুকের ভিতর হইতে এক শত্রু বাহির হইয়া তাহার মুখ-সম্পদ নষ্ট করিল ;–শাহজাহানের বিদ্রোহী পুত্র আর নিষ্কণ্টকে সিংহাসন ভোগ করিতে পারিলেন না, কারণ আজ র্তাহার নিজেরই প্রিয়তম পুত্র (মুহম্মদ আকবর) র্তাহার বিপক্ষে বিদ্রোহী হইয়া মাথু তুলিয়া দাড়াইল, পিতাকে সরাইয়া ময়ুর-সিংহাসন দখল করিতে চেষ্টা করিল ( জানুয়ারি ১৬৮১ ) । যুদ্ধে পরাস্ত পলাতক শাহজাদা আকবর মারাঠা-রাজ শভূজীর নিকটে আওরংজীবের জীবন-নাট্য VL) গিয়া আশ্রয় লইলেন (জুন ১৬৮১) ; তাহাকে দমন করিবার জন্য আওরংজীব স্বয়ং দাক্ষিণাত্যে যাত্রা করিলেন (সেপ্টেম্বর),— জীবনে আর দিল্লীতে ফিরিলেন না, দক্ষিণাত্যে ছাব্বিশ বৎসর কাটাইয়। সেখানেই প্রাণত্যাগ করিলেন, তাহার দেহ পৰ্য্যস্ত সেখানেই রহিল, উত্তর-ভারতে আসিল না । বাদশাহের এই ছাব্বিশ বৎসর-ব্যাপী বিপুল অক্লান্ত চেষ্টা অবশেষে নিষ্ফল হইল বটে, কিন্তু প্রথম প্রথম কেহই, তাহা বুঝিতে পারে নাই ; তাহার দাক্ষিণাত্যে যাইবার পর প্রথম সাত বৎসর বোধ হইল যেন চারিদিকেই তাহার জয়জয়কার। তিনি বিজাপুর ও গোলকুণ্ড রাজ্য অধিকার করিলেন ( ১৬৮৬ এবং ১৬৮৭ ) ; শম্ভুজীকে ধরিয়া বধ করিলেন (১৬৮৯), শম্ভুজীর স্ত্রী পুত্র এবং রাজধানী তাহার হাতে পড়িল । আর বাকী কি ? তিনি ত সফলতার চরমে পৌছিয়াছেন, তাহার ভাগ্য সৰ্ব্বত্র ফলিয়াছে না কি ? ইহাই চতুর্থ অঙ্কের বিষয় (১৬৮১-১৬৮৯ ) । কিন্তু যে-বিষবৃক্ষ তাহার জীবনের পূর্ব পূৰ্ব্ব অঙ্কে বপন করা হইয়াছিল, এই চতুর্থ অঙ্কের শেষে তাহার অঙ্কর দেখা দিল। পঞ্চম অঙ্কে এই বিষবৃক্ষ বাড়িয়া র্তাহার শরীরের সমস্ত শক্তি, জীবনের অবশিষ্ট আয়ু নিঃশেষ করিল, র্তাহার পিতৃপিতামহের সাম্রাজ্য ধ্বংস করিল ( ১৬৮৯–১৭০৭ )। অতএব দেখা যাইতেছে, আওরংজীবের জীবননাটকের ট্রাজেডী তাহার রাজত্বের এই শেষ আঠার বৎসরে ঘনীভূত, প্রকট হইয়াছিল। বিজাপুর-গোলকুণ্ডারায়গড় জয়ের চমক ক্রমে কাটিয়া গেল, ধীরে ধীরে সকলেই বুঝিতে পারিল যে এই সংগ্রামে বাদশাহের জয় অসম্ভব, মুঘল-সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন অনিবাৰ্য্য, তাহার সমস্ত শক্তি সমস্ত পুরুষকার বিফল হইবে। কিন্তু তবুও আওরংজীব নিজে পরাজয় স্বীকার করিবেন না, আশা ছাড়িবেন না, জীবনের শেষ পৰ্য্যন্ত কঠোর সাধন দৃঢ় আদর্শ পালন করিবেন-ই। এক নীতি নিফল হইলে তিনি অপর নীতি চালাইয়া দেখিলেন ; একদিকে . দুল্লঙ্ঘ বাধা পাইলে অপর দিকে ছুটলেন, তাহার