পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাণ রাজসিংহ অধ্যাপক শ্ৰীকালিকারঞ্জন কামুনগো, এম-এ বাঙ্গালী পাঠকের কাছে মহারাণ রাজসিংহ, স্বপরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্র ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘রাজসিংহ লিখিয়া অমর হইয়াছেন। তিনি ঔপন্যাসিক ; আমি ইতিহাস-অমুসন্ধিৎস্থ ; উভয় দলের মধ্যে বিরোধ শাশ্বত হইলেও তাহার অনুপম কল্পনা-সৌধের ভিত্তি-খুনন আমার প্রবন্ধের উদ্দেশু নহে। সাহিত্যক্ষেত্রে উপন্যাস-লেখক আপন মনে পুতুল গড়েন ; তাহার হষ্টি নিত্যনূতন। ঐতিহাসিক নূতন কিছু বলিতে বা গড়িতে পারেন না ; তিনি সমাজের বাৰ্ত্তাবহ , সত্যের ধৰ্ম্মাধিকরণে বিচারক। ইতিহাস অনেক অপ্রিয় কথা শুনায়। নীতিবিদের “সত্যং নামৃতং ক্রয়াং” বাক্য উপেক্ষা করিলে যে বিপদ তাহাকে তাহাই সৰ্ব্বাগ্রে বরণ করিয়া লইতে হয়। বঙ্কিমচন্দ্র স্পষ্টই বলিয়াছেন,তিনি ইতিহাস-বিচার করেন নাই—তিনি গল্পলেখক ; সুতরাং ঐতিহাসিক বিচার-বিশ্লেষণ না করিবার জন্য তাহাকেদোমী করা যায় না। তিনি ঔরঙ্গজেবের পত্নী-স্থানীয় উদীপুরী বেগমকে দিয়া রাজপুতনীর তামাক সাজাইয়াছেন, এজন্য প্রবুদ্ধ মুসলমান-সমাজ র্তাহার উপর রুষ্ট ; মুসলমান-বিদ্বেষী বলিয়া তাহার গ্রন্থ অনেক মুসলমান পড়িতে চান না ; অনেকে উত্তেজনার আতিশষ্যে পাণ্ট জবাব লিখিয়াছেন। সুতরাং অন্যান্য জিনিষের মত বিলত হইতে নায়ক-নায়িকা আমদানী না করিলে উপন্যাস-লেখকও নিরাপদ নন। ইতিহাস-চর্চা আরও বিপজ্জনক ; ইহাতে কেহ কেহ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছায়াপাত দেখেন । ইতিহাস-বিচারে সর্বপ্রথম প্রমাণ-পত্নী আলোচনা আবশুক । রাজসিংহ-উপাখ্যানের মৌলিক উপাদানগুলি, অর্থাৎ সমসাময়িক বিবরণ-সমূহ, সরকারী ও বেসরকারী— এই দুই ভাগে বিভক্ত করা যায় ; যথা, মোগল-দরবারের সরকারী ইতিহাস, ওয়ারিস লিখিত পাশোনাম, মিজ'মহম্মদ কাজিম কৃত আদাব-ই আলমগিরি, এবং সম্রাট শাহ আলমের সময়ে সাকী মুস্তায়িদ খ লিখিত মাসির-ইআলমগিরি। রাজপুতানায় চারণ এবং কবিই ঐতিহাসিক ; এই হিসাবে রাজসিংহের সভাকবি “মান” বিরচিত রাজবিলাস’ কাব্যই তাহার রাজত্বের সরকারী ইতিহাস বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে। বে-সরকারী ইতিহাসের মধ্যে ঈশ্বরদাস নাগর কৃত ফতুহাৎ-ই-আলমগিরি এবং ম্যাকুসীর Storia do Magor উল্লেখযোগ্য । সরকারী ইতিহাসের যাহা কিছু দোষগুণ, অর্থাৎ ঘটনার সন তারিখ ও বর্ণনার প্রাচুর্য্য, পরাজয়-গোপন, কৃতিত্বের অতিরঞ্জন ও চাটুবাদ মোগল-দরবারের ইতিহাসে থাকিবে—ইহা কিছু আশ্চৰ্য্য নয়। দরবারী ইতিহাসের এই সব দোষ মহারাণার জীবনচরিত রাজবিলাসেও আছে ; কিন্তু গুণ অনেকগুলি নাই। চিতোর-দুর্গ সংস্কার করার অপরাধে সাদুল্লা খার সেনাপতিত্বে মহারাণার বিরুদ্ধে মোগল-অভিযান, দারা শুকোর কাছে মহারাণার দূত-প্রেরণ, শাহজাদার মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের শাস্তিস্থাপন, সম্রাট শাহজাহানের আদেশে সাদুল্লা কৰ্ত্তক চিতোরের দুর্গপ্রাকার ধ্বংস ইত্যাদি কাহিনী রাজবিলাসে নাই, ওয়ারিসের পাদশানামায় এই সব ঘটনার বিস্তুত বর্ণনা আছে। মহারাণী কর্তৃক মালপুর ধ্বংস এবং রূপকুমারীর স্বয়ম্বরের কথা একমাত্র মান কবিই উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। পাশানামায় ইহার উল্লেখ না থাকিলেও অবিশ্বস করিবার কারণ নাই । রূপকুমারীকে ঔরঙ্গজেব বিবাহ করিতে চাহিয়াছিলেন কি না সে সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার কারণ আছে ; তবে রাঠোর-দুহিতা যে রাজসিংহকে বরণ করিয়াছিলেন, ইহা কবি-কল্পনা হইতে পারে না । কবি “মান” সরস্বতী-বিনয়ে দুই স্থলে তাহার কাব্য-রচনার সময়-নির্দেশ করিয়াছেন—১৭৩৪ সম্বতের (১৬৭৮ খু: ) । আষাঢ় মাস, বুধবার শুরু সপ্তমী তিথি ; অর্থাৎ ঔরঙ্গজেব