পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ ছিল না অথবা যাহা লোপ পাইয়াছে তাহাই ম্যাঙ্গুসীতে পাওঁয়া যায়। আজকালকার মত বাদশাহী আমলেও “গুপ্তকথার” চানাচুর ও রাজনিন্দার চাটনী দিল্লীআগ্রার অলি-গলিতে এবং সময় সময় চকেও প্রকাশ্যভাবে বিক্ৰী হইত ; আমীরি মজলিসেও এগুলির চাহিদা ছিল । বেগমমহলের কলঙ্ককাহিনী, রাজসিংহের সহিত যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের লাঞ্ছনা ও উদীপুরী বেগমের দুৰ্গতি এই জাতীয় বস্তু। এরকম জিনিষের বেশ কাটতি হইবে বুঝিয় ম্যান্থসী বে-পরোয়াভাবে হিন্দুস্থানের বাজারগুজবে কিঞ্চিৎ মসলা-সংযোগ করিয়া অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিলাতে চালান দিয়াছিলেন ; একশত বৎসর পরে সাহেবের উহাই আবার এদেশে আমদানী করেন। বিংশ শতাব্দীতেও বিলাতী-ছাপ দেখিলেই জিনিষের মৌলিক ত্ব সম্বন্ধে আমাদের সকল সন্দেহ দূর হইয়া যায় ; বঙ্কিম যুগে আদেী সন্দেহই হইত না ; কাজেই ঐরকম গুপ্ত কথা ও গুজব এদেশে ইতিহাস বলিয়া অবাধে প্রচারিত হইয়াছে। ১৭৮৬ বিক্রম সংবতের কান্তিক মাস কৃষ্ণ তৃতীয় তিথিতে বুধবার রাত্রে রাঠোর-রাজকুমারী রাণী জন দেবীর গর্ভে মহারাণী জগৎসিংহের জ্যেষ্ঠপুত্র রাজসিংহের জন্ম হয়। দ্বিতীয় দিন দৈবঞ্জের জন্ম-পত্রিক গণনা, ষষ্ঠী-বাসর জাগরণ, একাদশ দিবসে রাণীর শুচিস্নান ও স্বাদশ দিবসে প্রতিভোজ-কবি যথারীতি বর্ণনা করিয়াছেন। জন্ম ও বিবাহের মধ্যবৰ্ত্তী এগারো বারো বৎসরে রাজকুমারের বাল্যজীবনে উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটে নাই। র্তাহার শিক্ষায়ও কোন বৈশিষ্ট্য ছিল বলিয়া মনে হয় না। মোগলবিদ্বেষ তাহার জন্মগত ভাব কিংবা শিক্ষার ফল নহে। শিশোদিয়া ও মোগল-রাজপরিবারের সহিত কোনরূপ বিবাহ-সম্বন্ধ না থাকিলেও সখ্য ও কৃতজ্ঞতার বন্ধন তখনও অটুট ছিল। মিবার-বিজেতা যুবরাজ খুরম্ কুমার কর্ণকে পাগড়ী-বদল করিয়া ভাই বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনিই এ সময় দিল্লীশ্বর শাহজাহান ; কর্ণের পুত্র জগংসিংহ ধৰ্ম্ম-সম্পর্কে তাহার ভাই-পো । মিবার-রাণী মোগলসরকারের মামমাত্ৰ পাচ-হাজারী মনসবদার হইলেও সন্ধির সত্তাহসারে তাহাকে স্বয়ং বাদশাহী দরবারে উপস্থিত থাকিতে হইত না । মিবার-সৈন্ত কোন সর্দার বী রাজ-পরিবারের কোন ব্যক্তির অধীনে সম্রাটের জন্য যুদ্ধ করিত। মুসলমানদের সহিত মিবারের বিশেষ . সম্পর্ক না থাকাতে উহা যোধপুর অম্বরের মত অশনে [ নিষিদ্ধ বস্তু ব্যতীত ] বসনে, সভ্যতায় ও আচারব্যবহারে “মোগলাই” হইয় পড়ে নাই। শিশোদিয়ার : রাজচ্ছত্র-ছায়ায় তুকী-তেজ কিঞ্চিৎ স্তিমিত ছিল ; মহারাণা তখনও হিন্দুপতি ; মিবার উত্তর-ভারতে সনাতন আৰ্য্য-সভ্যতা ও হিন্দু-ধৰ্ম্মের আশ্রয়স্থল ৷ কুমার রাজসিংহ সনাতন হিন্দুভাবের মধ্যে বৰ্দ্ধিত, তিনি কখনও বাদশাহী দরবারে কুর্ণিশ করিতে যান নাই ; স্বতরাং সাম্রাজ্যের অতুল ঐশ্বৰ্য্য ও সৈন্যদল তাহাকে চমকিত বা ভীত করিতে পারে নাই। ১৬১৫ খৃষ্টাব্দে মোগলের সহিত সন্ধিস্থাপনের পর বিধ্বস্ত মিবারভূমি শশু-সম্পদ ও পশুযুথে সমৃদ্ধিশালিনী হইয়। আবার পূর্বত্র ধারণ করিয়াছিল । রাজ্যের সর্বত্র শাস্তি বিরাজিত এবং রাজকোষ ধনভাণ্ডারে পরিপূর্ণ। মিবারের বুকে অৰ্দ্ধশতাব্দীব্যাপী রণচণ্ডীর তাণ্ডব-লীলার চিহ্ন অপনয়নে মহারাণা জগৎ সিংহ এই নবসঞ্চিত ধন অকাতরে ব্যয় করিলেন। কুমার রাজসিংহও তাহার সমবয়সী সর্দারপুত্রেরা দুদিনের সে ভয়াবহ স্থতি-চিহ্ন শুধু পরিত্যক্ত রাজধানী চিতোরেই দেখিতে পাইতেন ; কেননা, ইহার সংস্কার ও । দৃঢ়ীকরণ সন্ধির সর্বানুসারে নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধক্লাস্তি । অপনয়নের পর বীরজাতির স্বাধীনতা-পৃহা ও রণোন্মাদন ফিরিয়া আসে ; নববলে বলীয়ান শিশোদিয়া-হৃদয়েও মোগলের সহিত শক্তিপরীক্ষার বাসনা-বীজ আবার অঙ্কুরিত হইল। চারণের গীত একাধারে রাজপুতানার ইতিহাস, কাব্য ও সঙ্গীত, মারবাড়ের মরুভূমি ও আরাবল্লীর গিরি-কন্দরে তথনকার রাজপুত বালকের , । মনোবৃত্তি চারণ-গীতিদ্বারা গঠিত হইত। চারণ দুঃখ,দৈন্ত ও নিরাশার গীত গায় না ; তাহার গান রক্তরাগোজ্জল মৃতসঞ্জীবনী মুরা ; তাহার অগ্নিবীণায় অগ্নি ও অসির ভৈরবী তান ও বীরের রৌদ্রসাধনার স্থর বাজিয় উঠে । রাজসিংহ • রাণা প্রতাপের কীৰ্ত্তি-লতার শেষ প্রস্থন ; রাজপুত জীবন- , সন্ধ্যার মুহূর্তোজ্জল আরক্তিম আভা । বুদ্দীপতি রাও ছত্রলাল হাড়ার এক কন্যার সহিত “