পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] মহারাণ রাজসিংহ । هو دپ ృk( সম্রাটের কারাবাসের পর মোগল-সাম্রাজ্য যখন অরাজক হইয়া উঠিয়াছিল তখন স্থযোগ বুঝিয়া রাজসিংহ মালপুর লুট করিয়াছিলেন। ঔরঙ্গজেব তখনও দারা এবং শুজার সহিত যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত ; স্বতরাং রাণার এ কাৰ্য্যের দণ্ডবিধান নীতিবিরুদ্ধ মনে করিয়া বোধ হয় তিনি নীরব ছিলেন । কবি মান মালপুর লুটের পরই দুই অধ্যায়ে রূপনগরের রাজকন্যার উপাখ্যান সবিস্তারে বর্ণনা করিয়াছেন । কিন্তু কোন কবিই “সত্যবাদীর সাধারণ সংজ্ঞায় পড়েন না ; র্তাহার কথার উপর নির্ভর করিয়া কি একটা গুরুতর ব্যাপারকে ঐতিহাসিক সত্য বলিয়া গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত ? কবি হইলেও একজন সমসাময়িক ব্যক্তি মিথ্যা প্রসঙ্গের অবতারণা করিয়া কাল্পনিক রাজকন্যার সহিতৃ তাহার রাজার বিবাহ দিবেন, ইহা অনুমান করা যায় না । রূপনগর রাজপুতানার মানচিত্র হইতে মুছিয়া যায় নাই ; রূপসিংহ রাঠোরের নাম ওয়ারিসের পাদশনামায় মনসবদারের তালিকাতে আছে ; একাধিক মানসিহের নামও উহাতে দেখা যায়, কিন্তু রূপকুমারীর নাম কিংবা রাজসিংহ কত্ত্বক ঔরঙ্গজেবের বিবাহের পাত্রী হরণ করা কোন সরকারী ইতিহাসে নাই, থাকিতেও পারে না ; সুতরাং কবি-বর্ণিত ঘটনাকে একেবারে মিথ্যা বলিয়া উড়াইয়৷ দেওয়া চলে না। প্রথমতঃ বিচাৰ্য্য, কোন সময়ে ঔরঙ্গঃজবের ঈপ্সিত নারীকে মহারাণ হরণ করিতে সাহসী হইয়াছিলেন ? রাজবিলাসে এই ঘটনার কোন তারিখ নাই; কিন্তু টড সাহেব ঘটনাটিকে এমনভাবে সাজাইয়াছেন যে দেখিলেই মনে হয় ইহা মোগল-রাজপুত সংঘর্ষের প্রারম্ভে ঘটিয়াছিল, এবং ইহা সেই যুদ্ধের অন্যতম কারণ। যদি ধরিয়া লওয়া যায়, রাজসিংহের জীবনীব ঘটনাগুলি কবি তারিখ অনুসারে সাজাইয়াছেন তাহ হইলে বলিতে হয় ১৭১৫ সংবত ( ১৬৫৯ ) এবং ১৭১৭ সংবতের (রূপকুমারী-পরিণয়ের পরবর্তী অধ্যায় মিবারে . সাতবৰ্ষব্যাপী দুর্ভিক্ষের আরম্ভের তারিখ ) মধ্যে রাজসিংহ রাঠোর-কুমারীকে বিবাহ করিয়াছিলেন। ১৬৫৯-১৬৬১ খৃষ্টাবো মোগল-সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধের জের চলিতেছিল ; ঔরঙ্গজেবের সিংহাসন তখনও নিষ্কণ্টক হয় নাই ; কাজেই এ সময় স্বার্থহানির ভয়ে তিনি দু-একটা চড়চাপড় দ্বিরুক্তি না করিয়া হজম করিতেও পারেন। দ্বিতীয়তঃ, বিচার করা উচিত আলমগীর বাদশা ছিলেন জিন্দাপীর ; তাহারও কি রূপ-তৃষ্ণ ছিল ? সরল ধৰ্ম্মবিশ্বাসী, অপ্রতিম শৌর্য্য ও নীতির আধার, স্বকুমার বৃত্তি বর্জিত হইলেও তাহার ভয়াবহ হৃদয়-মরুর নিভৃত-প্রদেশে অস্তঃসলিলা ফন্তুর মত প্রেম-স্রোতস্বিনীর গুপ্তধারা প্রবাহিত হইত ; এবং সময়ে সময়ে উহা ফোয়ারার মত সহস্রধারায় উৎসারিত হইত ; হীরাবাঈ ও উদীপুরী সেই মরু-মালঞ্চের লাবণ্য-প্রসুন । রূপকুমারীর রূপে ঔরঙ্গজেবের প্রেমোচ্ছ্বাস হইয়াছিল কি না ঐতিহাসিক তাহার সন্ধান রাখেন না। এ সময়ে মহারাজ যশোবন্ত সিংহের সহিত তাহার বিরোধ চলিতেছিল ; ভেদনীতি দ্বারা রাঠোরকুলকে হীনবল করিবার উদ্দেশ্বে তিনি মানসিংহ রাঠোরের ভগ্নীর সহিত বিবাহ প্রস্তাব করিয়াছিলেন এবং “রাজশ্যালক’ হইবার লোভে রাঠোর-সর্দারও এরূপ প্রস্তাবে স্বীকৃত হইয়াছিলেন —কিছুই আশ্চৰ্য্য নহে। ঔরঙ্গজেব রূপকুমারীকে আনিবার জন্য দুই সহস্ৰ অশ্বারোহী প্রেরণ করিয়াছিলেন ; রাজসিংহ তাহাদিগকে পরাজিত করিয় রাঠোর-কুমারীকে উদ্ধার করিলেন– এ সমস্ত কথা রাজবিলাসে নাই ; অথচ টডের রাজস্থানে আছে ৷ রূপনগরে মহাসমারোহে মানসিংহ রাঠোর আপনার ভগ্নীকে পরমশ্লাঘ্য শিশোদিয়া-রাজের হস্তে অর্পণ করিলেন ; বিনা বাধায়, বিনা রক্তপাতে বর-বধু উদয়পুরে ফিরিয়া আসিলেন—মান কবি এরূপ লিথিয় গিয়াছেন । e এইবার আমরা রূপকুমারীর সংবাদের বিস্তৃত উপাখ্যান, ও রাজসিংহ-চরিতের অবশিষ্টাংশ আলোচনা করিব । মানসিংহ রাঠোর মারবাড়ের একজন ভূমিয়ারাজ ; তিনি মোগল-দরবারের সেনাবিভাগের উচ্চপদস্থ মনসবদার ছিলেন । র্তাহার এক সৰ্ব্বসুলক্ষণ বিবাহযোগ্য ভগ্নী ছিল ; নাম রূপকুমারী। সম্রাট ঔরঙ্গজেব বহু ধন ও রাজ্যের লোড় দেখাইয়া মানসিংহের কাছে রূপকুমারীর সহিত নিজের বিবাহ প্রস্তাব করেন । দিল্লীশ্বরের আদেশ অলঙ্ঘনীয় ; ভয়ে ও লোভে তিনি