পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] সেখানে তোমাকে পড়াশুনা করতে হবে-ইস্কুলে ভৰ্ত্তি হ’তে হবে। এই সব ভীতিপ্রদ কথা শুনিতে হইবে জানিলে নীরদ বোধ হয় তাহার খুড়িমাকে কোনো প্রশ্নই করিত না । হঠাৎ বাহির হইতে মাধবচন্দ্রের কণ্ঠস্বর শোনা গেল –‘একটু তাড়াতাড়ি এসে বৌমা ! ট্রেনের সময় থাকৃবে না ? ইহার পর আর কথা বলা চলে না । যেখানে নিধিরাম গরুর গাড়ী-সহ আরোহীদের প্রতীক্ষা করিতে ছিল, উভয়ে সেইখানে আসিয়া পৌছিলে—কৰ্ত্ত মাধবচন্দ্র বলিলেন,—যাও, যাও সব উঠ গিয়ে। বৌম, তুমি গাড়ীর ভিতরের দিকে বসে। নীরদ, তুই বৌমার কোলের কাছে বস্ ! এ মেয়েটা ত এখনো এলো না – আর বেশী বলিতে হইল না। কথা শেষ না হইতেই ‘এই যে আমি এয়েছি বলিয়া একটি অল্পবয়সী শু্যাম মেয়ে হাতে একটি ছোট কাপড়ের পুটুলি লইয়া গাড়ীতে আসিয়া উঠিল। মাধবচন্দ্র তাহাকে দেরী করার জন্য ধমকাইতে যাইতেছিলেন, কিন্তু মেয়েটির সেদিকে মোটেই লক্ষ্য ছিল না। সহর দেখিবার আনন্দে সে তর তর করিয়া বাড়ী হইতে অনেকখানি পথ হাটিয়া আসিয়াছে—কাহাকেও কিছু বলিবার অবসর না দিয়া সে একেবারে গাড়ীতে উঠিয়া মৃন্ময়ীর কোলের কাছে যেখানে নীরদ বসিয়াছিল, সেইখানে আসিয়া বসিল ; বলিল, “যুড়ি মা, নীরদবাবুর মুখখানি কঁাদ কঁাদ দেখছি যে! আমার ত বেশ ভালই লাগছে। বলিতে বলিতে তাহার চোখ দুটি ছল ছল করিয়া উঠিল—এই ক্ষুদ্র গ্রামখানির স্থখদুঃখ মিশ্রিত প্রতিদিনের জীবনযাত্র হইতে তাহারা যে কিছুকালের জন্য অবসর লইল, তাহাই বোধ হয় এই দুটি বালকবালিকাকে অধীর করিয়া তুলিতে ছিল । মৃন্ময়ী তাহদের দুইজনকেই কাছে টানিয়া লইয় বলিলেন, আবার শীগগির ফিরে আসব। এদিকে মাধবচন্দ্র গাড়ীতে উঠিয়া বসিলে নিধিরাম গাড়ীতে গরু জুড়িয়া গাড়ী স্থাকাইয়া দিল। প্রথম শীতের ধূলি-ধূসর মাঠের রাস্ত দিয়া গাড়ী বিচিত্র কলরব করিতে করিতে ষ্টেশন অভিমুখে চলিয়া গেল। Re = 8 মরুচারিণী একখানি কাথ। তাহার উপর চাপাইয়া দিল । از ۰هٔ গ্রাম হইতে হিরণ সহরে চলিয়া যাওয়ায় তাহাকে কেন্দ্র করিয়া গ্রামে একটি গোল বাধিল । সংসারে থাকিবীর মধ্যে আছে হিরণের মা, হিরণের এক চিরকুঞ্জ খিটখিটে মেজাজের ভাই—আর ছট চাষের বলদ, একটি কুকুর ও একটি বিড়াল। হিরণ বাড়ী হইতে চলিয়া গিয়াছে, বিড়াল হইতে আরম্ভ করিয়া হিরণের রুগ্ন ভাইটির পর্য্যস্ত হাজারো রকমের অস্থবিধা । হিরণের এই ভাইট হিরণের অপেক্ষা প্রায় দশ বছরের বড় । কিন্তু তাহাকে দেখিলে হিরণের ছোট বলিয়াই মনে হয় । সরু সরু পাট-কাটির মতো পা—লাঠি ধরিয়া চলিতে পারে। পেটটি প্লীহাযকৃতে প্রায় জয়ঢাকের আকার ধারণ করিয়াছে । মাথায় চুল নাই। প্রত্যহ বিকালের দিকে চোখমুখ জাল করিয়া কম্প দিয়া জর আসে । আজও জর আসিয়াছে। হি-হি করিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে হাটু দু’টি গুটাইয়া পড়িয়া আছে। হিরণের মা ‘আমার কি মরণ হবে ন-নাকালের কি আর শেয আছে’ ইত্যাদি বিড়, বিড়, করিয়া বকিতে বকিতে তাহার পর এক হাতে একটি লাঠি ও কাকালে একটি ছোট কলসী লইয়া ঘাটের দিকে চলিয়া গেল । হিরণের ভাই শশী আপন মনেই বকিতে লাগিল। প্ৰলাপ নয়-বেশ অর্থপূর্ণ কথা—“ঠাকুর হিরণকে বিগিরির জন্যে নিয়ে গেল ; বাড়ীতে ত এই অবস্থা। পই-পই ক’রে বারণ করলাম, যাসনে হিরণ, যাস্নে ! সে কি আর আমার কথা শোনে ? ধিঙ্গী মেয়ে—সছর দেখবে—সহর । এমন সময়ে সম্মুখের রাস্তায় অনেকগুলি লোকের পায়ের শব্দ শুনিতে পাওয়া গেল। গুপীদাস, যতনচন্দ্র; নিধিমাম প্রভূতি অনুচ্চকণ্ঠে কি আলাপ করিতে করিতে হিরণদের বাড়ীর দিকে আসিতে লাগিল। ইহার সব হিরণের সমাজের লোক-মাতববর মোড়ল যতনচন্দ্র বলিল,—দেখলে গো, আমি বলেছিলাম, এ ত আর যে-সে লোক নয় ; স্বয়ং কৰ্ত্তা ; তা’র কথা কি আর ঐ রোগা ছেলেটা ঠেলতে পারে ? নিধিরাম বলিল,-আরে শুধু কি তাই! যেদিন গাড়ী