পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ভালো থাকৃলে নিজেই ষাই—বাবুদের ইদার থেকে জল নিয়ে আসি ; আজ আর যেতে পারি নি। হিরণ বলিল - আচ্ছা আমি-ই নিয়ে আসছি। হিরণ কলসী লইয়৷ জল আনিতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বাঘা কুকুরও চলিল। রাত্রি আটট হয় নাই। কিন্তু তখনই সমস্ত গ্রাম নিশুতি । কোথাও জন মানবের সাড়া-শব্দ নাই । চৈত্র-শেষের দক্ষিণ। হাওয়ায় পথের গাছগুলির পাতার মধ্যে কেবলি একটি অনাহত থর থর মর মর শব্দ হইতেছিল। হিরণ ইদারা হইতে জল লইয় আসিল । সেই জলে মা ও শশীর তৃষ্ণ নিবারণ করিয়া, নিজেও থানিকটা জল পান করিল। তারপর দাওয়ায় একখানি মাদুর বিছাইয়া শুইয়৷ পড়িল । সমস্ত পথের ক্লান্তি অবসাদ—ভয়, উত্তেজনা— সব কিছুকে ঢাকিয় তাপহারিণী নিদ্রা তাহাকে বিশ্রাম দিল । পরদিন সকালে জাগিয়া হিরণ দেখিল শশী বিছানার উপরে উঠিয়া বসিয়াছে। দুই হতে বাঁশের খুঁটিটি চাপিয়া ধরিয়া প্রবল বেগে কাশিতেছে । ভোরের দিকের বাতাস একটু ঠাণ্ড হয় ; সেই ঠাণ্ড বাতাসে শশী আদুল গায়েই বিছানার উপর শুইয়া থাকে। হিরণকে উঠিয়া বসিতে দেখিয় তাহার কাশির বেগ কিছু মন্দীভূত হইল। ভাঙা গলায় বলিল—হিরণ, মুনীর দোকান থেকে খানিকট কাবাবচিনি আনতে পারিস্—কাশতে কাশতে ত আর বাচি না দিদি ' ' হিরণ বলিল—হঁ্য, এনে দিচ্ছি এখনি । তুমি থানিকট মিছরীর ডেলা মুখে রেখে দাও-ত’তে কাশিটা কিছু কম পড়তে পারে —এই বলিয়া হিরণ তাহাকে খানিকটা মিছরী দিল ; তাহার পর কোমরে কাপড় জড়াইয়া ঘরের কাজে লাগিয়া গেল। ঘরের এক কোণে ছোট একটি বাশের মাচার উপর দুই একটি ছোট ছোট ইড়ি কলসী তাহার মধ্যে সংসারের চাল, ডাল মশলা ইত্যাদি থাকে। সেখানে গিয়া হঁাড়িগুলি সব নামাইয়া দেখিল, তাহাতে কিছুই নাই—না চাল, মা ডাল, না মশলা ! হিরণ এসব ভাবিয়া রাখিয়াছিল ; কিছুমাত্র মরুচারিণী ২০৫ هميي. ټجيحير ميتي م.ی sي _كمير. নিরাশ না হইয়া ঘর উঠান সব অতি-যত্নে ঝাট দিল । তাহার পর ইদার হইতে কলসী ভরিয়া জল আনিয়া রাখিল । ঘরখানি বেশ করিয়া নিকাইয়া লইয়া মা’কে বিছানা হইতে উঠাইল । প্রাঙ্গণের এক পাশ্বে দুই একটি পেঁপেগাছ—একটি পেয়ার গাছ। সেগান হইতে কতকগুলি পেয়ার পাতা ছিড়িয়া আনিয়া, মাকে ও শশীকে দিল, বলিল—“তোমরা এই দিয়ে মুখ ধোও । তাহদের বিছানা ও শতচ্ছিন্ন বালিশগুলি লইয়া উঠানের একদিকে যেখানে বেশ রৌদ্র আসিয়া পড়ে, সেইখানে রাথিয়া দিল । তারপর গোয়ালঘরে বলদ দু'টির খাবার ব্যবস্থা করিতে গিয়া দেখিল, গোয়ালঘর শূন্ত-সে-ঘরে যে কোনকালে গরু ছিল—এমন কোনো চিহ্নই নাই। হিরণ ব্যাপারটা আংশিকভাবে বুঝিল । শশী তখন মুখ-হাতপা ধুইয়া পরণের কাপড়খানি গায়ে জড়াইয়া চুপ করিয়া রৌদ্রে বসিয়াছিল। হিরণ তাহাকে আসিয়া বলিল—দাদা বলদ কোথায় ? —বলদ কি আর আছেরে ? দেখতেই ত পাচ্ছিস্, খেতে পাইনে, শুকিয়ে চিচি কবৃছি। এর উপরে আবার বলদ ! কে তাদের খেতে দেয়-যত্ন করে ! কেনরে বাপু এত ঝক্কি, ওসব একদম চুকিযে দিয়েছি। কখনো যদি চাষবাস করি ত, গাথা ক’রে চাষ করব। কিন্তু ততদিন বোধ হয় এগুতে হবে না—তা’র আগেই – —“আমি শুধু জিজ্ঞাসা করছি, বলদ দু'টি কোথায় গেল –এই সোজা কথাটার উত্তর দাe ? অতঃপর শশী তাহাকে জানাইল যে, বলদ মহাজন ও জমিদারের ঋণশোধ করিবার জন্য বিক্রয় করা হইয়া গিয়াছে। ভিন্ন গ্রাম হইতে খরিদদার আসিয়া বলদ লইয়া গিয়াছে। এবারের চাষে সে নিজে যাইতে পারে নাই । ‘কোনো রকমে ভাগে বন্দোবস্ত করায় যা কিছু খুদবুটা হইয়াছিল—সবই বিক্রয় করিয়া অতি কষ্ট্রে সে সংসার চালাইতেছে। হিরণ আর কিছু জিজ্ঞাসা করিল না। দুটি টাকা হাতে করিয়া সে পথে বাহির হইল। দোকান হইতে । চাল ডাল প্রভৃতি সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনিয়া লইয়া আসিল- গাছে কয়েকটি পেঁপে ছিল ; ; তাহাই পাড়িয়া লইয়া দীর্ঘদিনের অনশনক্লিষ্ট মা-ভাইকে । চারিটি রাধিয়া খাওয়াইল । t