পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ? মরুচারিণী ২৪৭ মাটর ঘর তুলিয়াছে। মতিচরণ কাহারও সঙ্গে বিশেষ মিশিত না । সে সারাদিন মাঠের কাজ লইয়াই থাকিত। নিয়মিত কৰ্ম্মে ও পরিশ্রমে তাহার বলিষ্ঠ উন্নত দেহ দেখিয় ও তাহার স্বল্পবাকু আচরণ বুঝিয়া কেহই তাহার কাছে বড় আসিত না । সে আপনার মনে কাজ করিয়া আপনার ঘরখানি লইয়াই থাকিত। গ্রামের মধ্যে তাহার স্থান হয় নাই। তাই সে গ্রামের বাহিরে বাস বাধিয়াছিল । হিরণ তাহার বাড়ীর ভিতর আসিতেই একগাল হাসিয়া যে লোকটি তাহার অভ্যর্থনা করিল, সে মতিচরণ নয়—মতিচরণের ভগ্নীপতি। তাহার নিজের একটি যাত্রার দল ছিল। মতিচরণের বাড়ীতে পদার্পণ করিয়া সে ভাবিয়াছিল, একবার এই গ্রামে তাহার বিখ্যাত অভিনয় দেখাইয়া সকলকে থ' বানাইয়া দিবে। তাহার একটি বিশেষ মৌতাত ছিল—তাহারই তাতে হিরণকে দেখিয়াই সে হাসিয়া ফেলিল ; অভিনয়ের ভঙ্গীতে হাত নাড়িয়া সে তাহার দিকে চাহিয়া বলিল, —এস ভদ্রে, এস মোর গৃহে—! লোকটর এই আচরণে হিরণের আপাদমস্তক জলিয়া উঠিল, ছেলেটির দিকে চাহিয়া সে বলিল—‘কৈ, তোমার বব ! তোমার মা কোথায় আছে!” ছেলেটি কিছু উত্তর দিবার পূর্বেই মতিচরণের ভগ্নীপতি শশব্যন্তে উঠানে নামিয়া আসিয়া অতিশয় ভদ্র ভাবে বলিল—‘এই যে এদিকে আক্ষন না—এই ঘরে ওরা আছে।’ সেই ঘরের কাছে আসিয়া হিরণ দাড়াইতে ক্ষীণকণ্ঠে মতিচরণের স্ত্রী বলিল,—তুমি এখন এলে ভাই ! আমি আর বঁচিব না ! ঘরের মধ্যে আসিয় হিরণ দেখিল, মতিচরণ তাহার স্ত্রীর শিয়রে বসিয়া কঁদিতেছে। শতছিন্ন একখানি মাছুরের উপর মতিচরণের স্ত্রী তাহার শেষশয্যা পাতিয়াছে। তাহার সর্বাঙ্গ জলে-ডোবা মানুষের মতো ফুলিয়া উঠিয়াছে। মতিচরণের ভগ্নীপতি বলিল—হেঁ-হেঁ-বাচবে না ; মারে কার সাধ্যি ! যে ব্র্যাণ্ডি খাইয়েছি—একেবারে তিন তিন বোতল –হেঁ, ইে !’ ASAAAAS AAAAA AAAA AAAA AAAA AAAA MMMAMAMMMMAMAAAS AAASASASS মতিচরণ চোখের জল মুছিয়া উঠিয় দাড়াইতেই, হিরণ একেবারে তাহার স্ত্রীর শয্যার উপর গিয়া বসিল ; মতিচরণকে বলিল—ডাক্তার দেখিয়েছিলেন ? —ডাক্তার ডাকতে যাবার আগেই আমার এই ভগ্নীপতি ওকে কি সব ওষুধ খাইয়ে দিলেন ; তারপর থেকেই ওর শরীর ফুলে উঠতে আরম্ভ করল। আজ প্রায় এক হপ্ত ধরে সেই ওষুধ খাওয়ানোর পর আজ এই দশ ! মতিচরণের ভগ্নীপতি বলিল—‘ওসব সেরে যাবার পূৰ্ব্বলক্ষণ হে! তুমি ভয় খচ্ছি কেন ?’ মতিচরণ সবই বুঝিল। ডাক্তার না দেখানোর জন্যে তাহার আর অনুতাপের সীমা রহিল না। হিরণ বলিল—আপনি এখুনি ডাক্তার ডেকে আমুন ! যান, আর দেরী করবেন না ! মতিচরণ একখানি উড়ানি কাধে ফেলিয়৷ ডাক্তার ডাকিতে গেল দুই ক্রোশ দূরের একখানি গ্রামে । সে প্রায় বাড়ী হইতেই উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিতে আরম্ভ করিল। ডাক্তার লইয়.যখন সে বাড়ী ফিরিল, তখন সব শেষ হইয়া গিয়াছে! মতিচরণের ভগ্নীপতি উধাও। ছেলেটি কাদিতেছে ; আর হিরণ তাহার'স্ত্রীর দেহ কোলে লইয়। অনুচ্চস্বরে অশ্রুবিসর্জন করিতেছে। গুপীদাসের মিটং আজ আর নেবুগাছতলায় বসে নাই। গ্রামের একপ্রাস্তে কতকগুলি বট-অশ্বখের নিবিড় ছায়ায় গুপীদাস, যতনচন্দ্র ও নিধিরাম প্রভৃতি বসিয়৷ বসিয়া গভীরভাবে কি সব আলোচনা করিতেছিল। যতনচন্দ্রই আলোচ্য প্রসঙ্গ উত্থাপন করিল-প্রত্যেকটি কথা ব’লে আর মুখের উপরে এক একটি অস্বাভাবিক কুটিল রেখাপাত হয়—‘অচ্ছি, মতেকে ত আমরা একঘরে করেছি ! ও তার বউকে ঘাটে নিয়ে গেল কি ক’রে —তোমরা জানো কিছু ? নিধিরাম বলিল,—হঁ্যা তা জানো না বুঝি—কেন, , হিরণ যে ওর সঙ্গে গিইছিল। মড়ার একদিক হিরণ, আর একদিন মতে—ধরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা কঁদিতে কঁাদতে গিইছিল ।