পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বাঙ্গালীর অন্নসমস্যা ২২৩ ছেলে আই-এ, আই-এসসি পড়িতে পায় নাই। ঐ সনে উক্ত দুই পরীক্ষা দিয়াছিল ৮,২৬২ জন, তাহার মধ্যে ৩,৮৩৩ জন পাশ করিয়াছিল। ঐ সনে ৪০৯৭ জন বি-এ ও বি-এস-সি দিয়াছিল, তাহার মধ্যে ১,৬৫১ জন পাশ করিয়াছিল, বাকীগুলি কতক আবার পড়িবার চেষ্টা করিয়াছিল, অবশিষ্টগুলি উমেদার হইয়াছে। এই এক বৎসরে যদি ১,৬৫১ জন গ্রাজুয়েটু বাহির হইয়া থাকে, তবে পাচ বৎসরে প্রায় ৮ হাজার গ্রাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বাহির হইয়াছে। যাহারা আই-এ, আই-এস-সি, বি-এ, বি-এস-সি, পাশ করিয়াছিল তাহাদের মধ্যে অতি অল্প ছেলেই মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যাইতে পারিয়াছে। ঐ সনে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মাত্র ২৯১ জন ছাত্র ছিল এবং ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ছিল ৪৪৩ জন। কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ছিল ৯৩৯ জন, বেলগাছিয়া কলেজে ছিল ৫৯৮ জন, ট্রপিক্যাল স্কুলে ছিল ৭৯ জন। এতদ্ভিন্ন ক্যাম্বেলে ও ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে ছিল খুব সম্ভব ৩৪ শত । সুতরাং যাহার বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বংসর বংসর বাহির হইতেছে, তাহাদের মধ্যে অতি অল্প লোকই চাকুরি পায়, কারণ চাকুরির সংখ্যা অত্যন্ত কম। অবশিষ্ট লোকেরা কি করিয়া খাইবে ? আমরা তাহাদিগকে বলিতেছি, go back to the village—অর্থাৎ তোমরা আবার গ্রামে যাইয়া বাস কর ও চাষ করিয়া থাও । একজন ভদ্রসস্তান জমিচাষের দ্বারা কিরূপ উপার্জন করিতে পারে তাহ। . আমি ইতিপূৰ্ব্বে হিসাব করিয়া দেখাইয়াছি । ১০ বিঘা জমি চাষ করিলে ৪০০ টাকা মূল্যের ধান ও পাট হইতে পারে। কিন্তু যে নিজহস্তে জমি চাষ করিতে পারে, তাহার এই লাভ । যদি কুষাণ দিয়া জমি চাষ করান হয় তবে শ্রমিকের মজুরি দিয়া ২০০২ টাকা লাভ থাকিবে ক্লিনা সন্দেহ। ফরিদপুরের সরকারী কৃষি আপিসে কয়েকটি ভদ্রসস্তানক নিজ হাতে জমি চাষ করান শিক্ষা দেওয়া হইতেছে, যদি তাহারা কৃতকাৰ্য্য হয় তবে তাহাদিগের প্রত্যেককে গভর্ণমেণ্ট খাস মহাল হইতে চাষ করিবার জন্য ২০ বিঘা জমি দেওয়া হইবে এরূপ প্রলোভন দেওয়া হইয়াছে। স্তার পি, সি, রায় ফরিদপুরে যাইয় তাহাদের কার্য্যপ্রণালী দেখিয়া প্রশংসা করিয়াছেন । এরূপ শিক্ষাদান খুব আশাপ্রদ সন্দেহ নাই। কিন্তু হাজার হাজার বেকারের সমস্ত ইহা দ্বারা মীমাংসা হইবে না। তবে ভদ্রসন্তানগণ যদি ইহা দ্বারা নিজ হাতে কৃষিকাৰ্য্য করিতে উৎসাহিত হন তবে পল্লীগ্রামে নিজ নিজ বাড়ীতে বসিয়া তাহারা জমি সংগ্ৰহ করিয়া লইতে পারিবেন। শিক্ষিত যুবকগণ কৃষিকাৰ্য্য আরম্ভ করিলে তাহারা নানা প্রকারে কৃষি কাৰ্য্যের উন্নতিবিধান করিতে পারিবেন। তাহার ভিন্ন ভিন্ন দেশে প্রবর্তিত বৈজ্ঞানিক প্রণালী কৃষিকার্য্যে পরীক্ষা করিয়৷ দেখিতে পারিবেন। ফরিদপুর জেলায় বৃষ্টির অভাবে জমি চাষ হইতে পারে না, অথবা বোন ফসল রৌদ্রে শুকাইয়া যায়, অথচ সেই ক্ষেতের নিকটেই বিলে অথবা নদীতে গভীর জল আছে। বগুড়া জেলায় দেখিয়াছি, এইরূপ স্থলে কৃষকেরা তালগাছের ডোঙ্গার সাহায্যে ক্ষেত্রে জলসেচন করিয়া ফসল রক্ষা করে। কিন্তু ফরিদপুরের কৃষকেরা তাহ জানে না, বুঝাইয়া, দিলেও আলস্যবশতঃ কেহ তাহ করে না, কেবল “হায় আল্লা” বলিয়া আকাশের দিকে মেঘের অপেক্ষায় তাকাইয়া থাকে। একজন শ্রমশীল শিক্ষিত যুবক হাতেকলমে জল সেচন করিয়া তাহাদিগকে ইহা শিক্ষা দিতে পারেন, এবং নিজের ফসলও রক্ষা করিতে পারেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় দেখিয়াছি, ক্ষেতের মধ্যে অথবা জঙ্গলে বিস্তর বুনে কুল গাছ আছে, কৃষকেরা সেই সকল গাছে গালা উৎপাদন করে, তাহাতে একটা অতিরিক্ত লাভ হয় । একজন শিক্ষিত যুবক নদীয়া অথবা ফরিদপুর জেলায়: চাষ হইতে পারে কিনা তাহার পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারেন এবং আমার বিশ্বাস মুর্শিদাবাদে যখন গালা-চাষ সম্ভব হইয়াছে তখন তাহার পাশ্ববৰ্ত্তী নদীয়া; জেলায়, এমন কি ফরিদপুর জেলায়ও তাহ সম্ভবপর হইবে । তাহা হইলে ধান ও পাট ভিন্ন আর ও একটী 'নুতন ফসল জমিতে উৎপন্ন হইয়া আয় বৃদ্ধি করিবে: এইরূপ উদ্যমশীল স্বশিক্ষিত যুবকগণের দ্বারা কৃষিকার্ধ্যের অনেক প্রকার উন্নতি হইতে পারে। তারপরে কেবল ধান ও পাটচাষের উপর নির্ভর ন৷