২২৬ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মত বসে থাকতে হবে তা নয়, বরঞ্চ এতদিন যে শিশু ছিল সে আজ নুতন শোভ-সম্পদ নিয়ে লক্ষ্মীর মতই ঘরের শ্ৰী ও আনন্দ হয়ে উঠবে। তাকে শুধু বলে দিতে হবে যে, সে এতদিন যা ছিল তা আর নেই। এ বিষয়টি মা মেয়েকে কথা দিয়ে নয়, কাজ ও ব্যবহার দিয়ে পরোক্ষভাবে যেমন বোঝাতে পারেন এমন আর কেউ পারে না । মেয়েকে বড়দের কতকগুলি স্ববিধ দিতে হবে, যেমন ছোট ভাই-বোনরা তাকে আগের মত মারতে বা হুকুম করতে পারবে না। কোনও পুরুষ-আত্মীয়, যেমন বড় ভাইরা, এমন কি বাবা পৰ্য্যস্ত, তার গায়ে আর হাত তুলতে পারবেন না, কারণে-অকারণে বকতে পারবেন না । বাড়ীর খুব হাস্ক ও অল্প দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার তার উপর থাকবে। আবার অন্য পক্ষে সেও ভাইদের মত বালক-স্থলভ পেলা ছাড়বে। চলবার ধরণ, কথা বলবার ধরণ, কাপড় পরবীর পূরণ সবই অল্পাধিক বদলাবে । অথচ অামোদ-আহলাদ খেলাধুলা যে ছাড়বে ত নয় । আর একটি বিষয়ে সব থেকে সাবধান হতে হবে, সেট শুধু মেয়ে নয় ছেলে মেয়ে দুইয়ের পক্ষেই প্রযোজ্য । অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়ে কেউই মা, বাবা অথবা অভিভাবকস্থানীয় কাউকে না বলে যাতে বাড়ী ছেড়ে না যায় সেই শিক্ষা শিশুকাল থেকেই দিতে হবে। প্রতিবেশীর বাড়ী যতই কাছে হউক আর তার সঙ্গে যতই আত্মীয়ত থাকুক, এমন কি রক্তের সম্পর্ক থাকুলেও সেখানে যেতে হ’লে বলে যেতে হবে । অতুমতি নেবার জন্যই যে সব সময়ে বলে যেতে হবে তা নয়, বাড়ী ছেড়ে যে যাচ্ছে সেই কথাটুকু শুধু জানিয়ে যাওয়া মাত্র। অতি শিশুকাল থেকেই শিশুর বাড়ী থেকে বের হওয়ার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাপতে হবে । ছেলের দিকে এবিষয়ে দৃষ্টি না রাখলে কি কুফল তা এথানকার আলোচ্য বিষয় নয়। মেয়ের দিকে দৃষ্টি না রাখলে তার যে বিষময় ফল কি, তা কি আর নতুন করে বলতে হবে ? আমাদের দেশের মেয়েদের রাস্তায় বের হবার স্বাধীনত নেই বটে, কিন্তু একদিকে এরা অতি স্বাধীন। একটি ঝি অথবা ছোট ভাই মাত্র সঙ্গে করে আমাদের মেয়ের অনেক সময়ে গাড়ী করে আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়ী যাতায়াত করে । এই রকম স্বাধীনতার চেয়ে রাস্তায় বের হবার স্বাধীনতা ঢের নিরাপদ । আমাদের মেয়ের যদি আজ নিৰ্ভয়ে রাস্তায় বের হবার শিক্ষা পেত, বাহির সম্বন্ধে তাদের অমূলক ভয় যদি না থাকতে, বাহিরে বের হ’লেই যদি লজ্জায় সঙ্কোচে তাদের চোখ নত, পী জড়ীভূত হয়ে নী পড়তে, অবগুণ্ঠনে তাদের দৃষ্টি যদি বাধা না পেত, তবে তাদের দশ। আজি এমন হত না । ঝি চাকর . অথবা ছোট ভাই সঙ্গে করে গাড়ী চড়ে যাতায়াতও নিরাপদ নয়। একটু বড় হ’লেই মায়ের উচিত সব জায়গায় মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া । আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে অথবা নিমন্ত্রণে যেতে হ’লে অথবা কোথাও বেড়াতে যেতে হ’লে সৰ্ব্বদা মা অথবা মাতৃস্থানীয় কেউ মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেই ভাল হয় । যেখানে মা, বড় বোন অথবা মাতৃস্থানীয়৷ ” কেউ যাবেন না সেখানে মেয়েকে না পাঠানই ভাল । অনেক সময়ে এরকম ক্ষেত্রে মা মেয়ের চোখে জল দেখে মেয়েকে একা পাঠাতে বাধ্য হন, কিন্তু মাকে এখানে শক্ত হতে হবে । বিলাতের মেয়েরাও যতদিন পর্য্যন্ত স্কুল থেকে বাহির না হয়, অথবা “টীন” পার না হয় ততদিন পৰ্য্যন্ত একলা কোনও পার্টি অথবা অল্প-পরিচিত কারুর বাড়ীতে যায় না ; তাদের আবশ্ব অন্য আমোদের ব্যবস্থা থাকে । কিন্তু বেচারী আমাদের মেয়েদের জীবন একেবারে বৈচিত্র্যহীন ; আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ীর উৎসবের আনন্দের ভাগ যখন তাদের হাতের কাছে আসে তখন তাদের সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা অতিশয় নিষ্ঠুরত। কাজেই হয় তাদের জন্য নানা রকমের আমোদের ব্যবস্থা করা উচিত, নয়তো উপযুক্ত সঙ্গীয় সঙ্গে আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ীতে পাঠানো উচিত । শুধু পর্দার বাইরে আসাই পরম এবং চরম স্বাধীনতা তো নয়ই, আর স্বাধীনতা শুধু দিলেই হয় না, কি ভাবে তার ব্যবহার করতে হবে সেটাও শেখাতে হবে। আগুনের ব্যবহার ঠিকমত না জানলে পুড়ে মরতে হয়, ‘স্বাধীনতার ব্যবহারও না জানলে সে স্বাধীনত অধীনতার চেয়েও মারাত্মক হ’য়ে উঠতে দেরী হয় না। যে-সব প্রতিবেশীর বাড়ীর মেয়েদের সঙ্গে
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।