পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] অপরাজিত ૨૨૭ ঘরে ঢুকিল। তাহার গায়ে খুব শক্তি, স্বগঠিত মাংসপেশী, ইজিপ্ট, ব্যাবিলন, আসিরিয়া, ভারতবর্ষীয় সভ্যতার উত্থান চওড়া বুক । অপুর মতই বয়স । হাতের একটা কাগজের ঠোঙা দেখাইয়া বলিল—নতুন মটরশুঁটি-লঙ্ক দিয়ে ভেজে-- অপু হাত হইতে ঠোঙাটা কাড়িয়া লইয়া বলিল— দেখি ? পরে হাসিমুগে বলিল—সুরেশ্বর-দা ষ্টোভ ধরিয়ে নিন—আমি মুড়ি আনি—ক’পয়সার আনবো ? এক-দুই-তিন-চার— —আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে গুণে না ওরকম— অতু হাসিয়া নিৰ্ম্মলের দিকে আঙ্গুল দেখাইয়া বলিল— তোমার দিকেই আঙ্গুল বেশী ক’রে দেখাবো—তিন-তিনতিন— নিৰ্ম্মল তাহাকে ধরিতে যাইবার পূৰ্ব্বে সে হাসিতে হাসিতে ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল। সুরেশ্বর বলিল— একরাশ বই এনেচে কলেজের লাইব্রেরী থেকে—এতও পড়তে পারে—মায় মম্‌সেনের রোমের হিষ্ট্রী এক ভলুম— অপুর গল৷ মিষ্টি বলিয়া সন্ধ্যার পর সবাই গান গাওয়ার জন্য ধরে । কিন্তু পুরাতন লাজুকতা তাহার এখনও যায় নাই, অনেক সাধ্যসাধনার পর একটি বা দুটি গান গাহিয়া থাকে, আর কিছুতেই গাওয়ানো যায় না। কিন্তু রবিঠাকুরের কবিতার সে বড় ভক্ত, নিৰ্ম্মলের চেয়েও । যখন কেহ বরে থাকে না, নির্জনে হাত পা নাড়িয়া আবৃত্তি করে— সন্ন্যাসী উপগুপ্ত প্রাচীরের তলে একদা ছিলেন সুপ্ত । ইতিহাসের অধ্যাপক মিঃ বস্থকে অপুর সব চেয়ে ভাল লাগে । সবদিন তাহার ক্লাস থাকে না—কলেঞ্জের পড়ায় কোনো উৎসাহ থাকে না সেদিন। কালো রিবন ঝোলানো প্যাস-নে চশমা উজ্জলচক্ষু মিঃ বস্থ ক্লাসরুমে ঢুকিলেই সে নড়িয়া চড়িয়া সংযত হইয়া বসে, বক্তৃতার প্রত্যেক কথা মন দিয়া শোনে। এম-এ তে ফাষ্ট ক্লাস ফাই! অপুর ধারণায় মহাপণ্ডিত –গিবন বা মমসেন বা লর্ড ব্রাইস জাতীয়। মানবজাতির সমগ্র ইতিহাস, মথুরাপুরীর আগে ! পতনের কাহিনী তাহার মনশ্চক্ষুর সম্মুখে ছবির মত পড়িয়া আছে। ইতিহাসের পরে লজিকের ঘণ্টা । হাজিরা ডাকিয়া অধ্যাপক পড়ানো স্বরু করিবার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে কমিতে স্বরু করিল। অপু এ ঘণ্টায় পিছনের বেঞ্চিতে বসিয়া লাইব্রেরী হইতে লওয়া ইতিহাস, উপন্যাস বা কবিতার বই পড়ে, অধ্যাপকের কথার দিকে এতটুকু মন দেয় না, শুনিতে ভাল লাগে না । সেদিন একমনে অন্য বই পড়িতেছে হঠাৎ অধ্যাপক তাহাকে লক্ষ্য করিয়া কি প্রশ্ন করিলেন। প্রশ্নটা সে শুনিতে পায় নাই, কিন্তু ক্লাশ হঠাৎ নীরব হইয়া খাওয়াতে তাহার চমক ভাঙ্গিল চাহিয়া দেখিল সকলেরই চোখ তাহার দিকে। সে উঠিয়া দাড়াইল । অধ্যাপক বলিলেন—তোমার হাতে কি ওখানা লজিকের বই ? অপু বলিল—ন স্তার প্যালগ্রেভের গোল্‌ডেন ট্রেজারি— —তোমাকে যদি আমার ঘণ্টায় পাসোণ্টেজ না দিই ? পড়া শোনো না কেন ? অপু চুপ করিয়া রহিল। অধ্যাপক তাহাকে বসিতে বলিয়া পুনরায় অধ্যাপনা আরম্ভ করিলেন। জানকী চিম্টি কাটিয়া বলিল-হোল তো? রোজ রোজ বলি লজিকের ঘণ্টায় আমাদের সঙ্গে পালাতে— তা শোনা হয় লা—অীয় চলে— দেড়শত ছেলের ক্লাশ । পিছনের বেঞ্চের সামনের দরজাটি ছেলেরা ইচ্ছা করিয়া খুলিয়া রাগে পলাইবার স্থবিধার জন্য। জানকী এদিক ওদিক চাহিয়া কুড়ৎ করিয়া সরিয়া পড়িল । তাহার পরে বিরাজ। অপু ও মহাজনদের পথ ধরিল। নীচের লাইব্রেরীয়ান বলিল— কি রায় মশায়, আমাদের পাৰ্ব্বণীটা কি পাব না ? অপু খুব খুলী হয়। কে তাহাকে চিনিত পাচ মাস এতবড় কলিকাতা সহর, এতবড় কলেজ, এত ছেলে । এখানেও তাহীকে রায় মশায় বলিয়া খাতির করিতেছে, তাহার কাছে পাৰ্ব্বণী চাহিতেছে ! হাসিয়া বলে—কাল এনে দেবো ঠিক সত্য বাবু, আজ ভুলে