পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মতিলাল শ্ৰীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী পাঠক ! একবার মনশ্চক্ষু উন্মীলন করুন । কল্পনানেত্রে দেখুন আজিকার এই প্রাসাদ-কণ্টকিত কলকাতা শহরের বুকে, প্রায় সদর রাস্তার ওপরেই একখানা খোলা মাঠ। মাঠখান রাস্তা থেকে দেখা যায় না। চার পাশে গোটকয়েক বড় বড় বাড়ী তাকে যেন ধনীদের শুেনচক্ষুর দৃষ্টি থেকে আগলে রেখেছে। রাস্তা থেকে বোঝাই যায় না যে, এখানে এত বড় একটা মাঠ একেবারে মাঠে মারা যাচ্ছে । মাঠের মধ্যিখানে দাড়িয়ে চার পাশে চাইলে মনে হবে বড় বড় বাড়ীর মাঠমুখে জানলাগুলো যেন অবাক হ’য়ে এই খোলা জায়গাটুকুর শুামল সৌভাগ্যের দিকে চেয়ে আছে। এই ময়দানটি ছিল আমাদের ছেলেবেলার লীলাভূমি। আমরা প্রায় গুটি-কুড়িক ছেলে প্রতিদিন এখানে খেলতে আসতুম—শহরের নানা দিক থেকে। মাঠের একদিকে প্রকাণ্ড প্রাসাদের মতন একখানা বাড়ী । এই বাড়ীর একটি ছেলে ছিল আমাদের বন্ধু। তাদেরই ছিল এই মাঠ। একদিন বিকেলে, আমরা তখন খেলায় উন্মত্ত, এমন সময় বাড়ীর মধ্যে কান্নার রোল উঠল। আমরা খেলা ফেলে ছুটে বাড়ীর মধ্যে ঢুকলুম। বন্ধু বললে, দেনার দায়ে তাদের সমস্ত সম্পত্তি আটক পড়েছে। তার পরে প্রতিদিন পাওনাদারের এসে ঝাড়, লণ্ঠন, খাট, পালং বের কোরে নিয়ে যেতে লাগল। সবার শেষে একদিন তারা কাদতে-কাদতে বাড়ী ছেড়ে দিয়ে চলে গেল পশ্চিমের কোন এক শহরে। কিন্তু যাক, সে আর এক কথা— হাইকোর্টে মামলা চলতে লাগল বছরের পর বছর ধরে, আর আমরা একদল লক্ষ্মীছাড়া ছেলে সেই বিরাট প্রাসাদ ও তারই সংলগ্ন এই মাঠথান নিরুপদ্রবে ভোগ করতে লাগলুম। -বিকেলে স্কুলের ছুটির পর মাঠে ফুটবল খেলা মুরু হোতো। আমাদের মধ্যে দুটি দল ছিল। একদল ছিল খেলোয়াড়, আর একদল ছিল গাইয়ে-বাজিয়ে । গাইয়েবাজিয়ের দল খেলার সময় এক দিককার গোল-পোষ্টের কাছে বসে থাকৃত । খেলা শেষ হ’য়ে গেলে তাদের মধ্যে একজন বলটিকে কোলে নিয়ে বাজাতে বস্ত আর গান সুরু হোতো । খেলোয়াড়ের দল তখন গাইয়ে-বাজিয়েদের ঘিরে গোল হ’য়ে বস্ত। দু-দলই ছিল দু-দলের গুণের কদরদান আর দু-দলের মধ্যে যোগসূত্র ছিল পাচ নম্বরের একটি ফুটবল। যেটি ছিড়ে গেলে কিংবা যার ভেতরকার হাওয়া কমে গেলে দু-দলেরই ফুৰ্ত্তি হোতেী—একদম্ মাটি। মতিলাল ছিল শেষের দলের অর্থাং গাইয়ে-বাজিয়ে দলের লোক। কিন্তু মাঠের সভার রীতিমত সভ্য হয়েও আমাদের ধরণ-ধারণের সঙ্গে তার চাল-চলনের ঠিক মিল ছিল না। তার কথাবাৰ্ত্ত, হালচাল সব কিছুর মধ্যেই পাকা সংসারীর একটা ছাপ ফুটে উঠত। সে ছিল, যাকে সোজা কথায় বলে কাজের লোক। আমরা ছিলুম লেথাপড়ায় একেবারে সেরা ছেলে। প্রত্যেক পরীক্ষণয় কে কত নীচে থাকৃতে পারে আমাদের মধ্যে প্রতি বৎসর তারই প্রতিযোগিতা চলত। ছুটি জিনিষটিকে বরাবর আমরা ছুটি বলেই মান্ত করতুম। কিন্তু মতিলাল ছিল ঠিক তার উন্টে। লেখাপড়ায় সে ভাল ছেলে না হ’লেও ভাল হবাব চেষ্টা সে করত। একমাত্র সরস্বতী পূজোর দিন ছাড় বছরের প্রতিদিন নিয়ম ক’রে রুটিন-মত সে পড়াশুনা করত। ইংরেজী শেখবার প্রতি তার ছিল অসাধারণ ঝোক । তার বাবা ও ঠাকুরদাদা দুজনেই ছিলেন ডেপুটি। সে বলত যে, তার জন্যেও হাকিমের চেয়ার খালি পড়ে রয়েছে—বি-এ পাশ ক’রে এখন গুটি গুটি সেখানে গিয়ে বসতে পারলে হয়। মতিলাল মাঠে আস্ত একেবারে সন্ধা ঘেষে। স্কুলের ছুটির পর প্রত্যহ সে গড়ের মাঠের দিকে যেত। প্রতিদিন