২য় সংখ্যা ] ছেলে বলিয়াছিলেন । ইহাদের যে এতদিন পরে আবার দেখিতে পাওয়া যাইবে, তাহা যেন অপু ভাবে নাই। সুনীলকে দেখিয়া তাহার বিস্ময় ও আনন্দ দুই-ই হইল। এ যেন কেমন একটা—ঠিক বুঝানো যায় না—বেশ কিন্তু । ইহাদের সঙ্গে দেখা করিতে আসিবার মূলে অপুর কোনো স্বার্থসিদ্ধি বা সুযোগ-সন্ধানের উদ্দেশ্য ছিল না বা ইহা যে নিতান্ত গায়ে পড়িয়া আলাপ জমাইবার মত দেখাইতেছে—একবারও সে কথা তার মনে উদয় হয় নাই । এখানে তাহার আসিবার মূলে সেই বিস্ময়ের ভাব – যাহা তাহার জন্মগত। কে আবার জানিত খাস কলিকাতা সহরে এতদিন পরে নিশ্চিন্দিপুরের বাড়ীর পাশের পোড়ে। ভিটাটার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হইয়া যাইবে । এই ঘটনাটুকুই তাহাকে মুগ্ধ করিবার পক্ষে যথেষ্ট। এ যেন জীবনের কোন অপরিচিত বাকে পত্রপুষ্পে সজ্জিত অজানা কোন কুঞ্জবন—বাকের মোড়ে ইহাদের অস্তিত্ব যেন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। বিস্ময় মনের অতি উচ্চ ভাব—এবং উচ্চ বলিয়াই সহজলভ্য নয়। সত্যিকার বিস্ময়ের স্থান অনেক উপরে —বুদ্ধি, যার খুব প্রশস্ত ও উদার, মন সব সময় সতর্ক, নূতন ছবি, নুতন ভাব গ্রহণ করিবার ক্ষমতা রাখে—সেই প্রকৃত বিস্ময় রসকে ভোগ করিতে পারে। যাদের মনের যন্ত্র অলস, মিন্মিনে—পরিপূর্ণ, উদার বিস্ময়ের মত উচ্চ মনোভাব তার চির অপরিচিত থাকিয়া যায় । বিস্ময়কে যারা বলিয়াছেন Mother of Philosophy তারা একটু কম বলেন। বিস্ময়ই আসল Philosophy, বাকীটা তার অর্থসঙ্গতি মাত্র। তিনটার পরে সুরেশ বাহির হইয়া আসিল । সে হাই তুলিয়া বলিল—কাল রাত্রে ছিল নাইট-ডিউটি, চোখ মোটে বোজেনি—তাই একটু গড়িয়ে নিলাম-চল একটু পরে মাঠে ক্যালকাটা টিমের হকি খেলা আছে—দেখে আসা যাক— অপু মনে মনে স্বরেশ-দাকে ঘুমের জন্য অপরাধী ঠাওর করিবার জন্য লজ্জিত হইল। সারারাত কাল অপরাজিত MMAAAS A SAS SSASAMAAMMAMMA AMAMAMM MA AMMMMMA SAMAMMAMMMMMMS ২৩৭ বেচারী ঘুমায় নাই—তাহার ঘুম আসা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিকই তো।-- সে বলিল—আমি আর মাঠে যাবে না স্বরেশ-দা, কাল এগজামিন আছে, পড়া তৈরী হয়নি মোটে—আমি যাই—ইয়ে-জেঠীমার সঙ্গে একবার দেখা করে গেলে হতো– স্বরেশ বলিল—হঁ্যা হ্যা—বেশ তো–এস না— অপু সুরেশের সঙ্গে সঙ্কুচিত ভাবে বাড়ীর মধ্যে ঢুকিল । সুরেশের মা ঘরের মধ্যে বসিয়াছিলেনস্বরেশ গিয়া বলিল -এ সেই অপূৰ্ব্ব মা—নিশ্চিন্দিপুরের হরিকাকার ছেলে—তোমার সঙ্গে দেখা কৰ্ত্তে এসেচে— অপূৰ্ব্ব পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিল—স্বরেশের কথার ভাবে তাহার মনে হইল সে যে এতক্ষণ আসিয়া বাহিরের ঘরে বসিয়া আছে, সে কথা সুরেশ-দী বাড়ীর মধ্যে আদৌ বলে নাই । জেঠমার মাথার চুল অনেক পাকিয়া গিয়াছে বলিয়া অপুর মনে হইল। অপুর প্রণামের উত্তরে তিনি বলিলেন এস—এস—থাক্, থাকৃ—কলকাতায় কি কর ? অপু ইতিপূৰ্ব্বে কথনো জেঠমার সম্মুখে কথা বলিতে পারিত না। গম্ভীর ও গৰ্ব্বিত ( যেটুকু সে ধরিতে পারিত না , চালচলনের জন্য জেঠীমাকে সে ভয় করিত। আনাড়ি ও অগোছালো স্বরে বলিল, এই এখানে পড়ি, কলেজে পড়ি জেঠাইমা যেন একটু বিস্মিত হইলেন। বলিলেন, কলেজে পড় ? ম্যাটিক পাশ দিয়েচ — —আর বছর ম্যাটিক পাশ দিইচি . —তোমার বাবা কোথায় ?...তোমরা তো সেই কাশী চলে গিয়েছিলে ? —বাবা তো নেই—তিনি তো কাশীতেই...তারপরে অপু সংক্ষেপে বলিল সব কথা। এই সময়ে পাশের ঘর হইতে একটা বাইশ তেইশ বছরের তরুণী এঘরে ঢুকিতেই অপু বলিয়া উঠিল, অতসী-দি না ?... অতসী অনেক বড় হইয়াছে, তাহাকে চেনা যায় না । সে অপুকে চিনিতে পারিল, বলিল, অপূৰ্ব্ব কখন এলে ? আর একটি মেয়ে ও-ঘর হইতে আসিয়া দোরের কাছে
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।