২৩৮ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড দাড়াইল । পনেরো ষোল বৎসর বয়স হইবে বেশ স্বত্র, বড় বড় চোখ। কথা বলিতে বলিতে সে দিকে চোখ পড়াতে অপু দেখিল মেয়েটি তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছে । খানিকট পরে অতসী বলিল — মণি, দেখে এসো তো দিদি কুর্শির্কাটাগুলো ওঘরের বিছানায় ফেলে এসেচি কি না ?... মেয়েটি চলিয়া গেল এবং একটু পরেই আবার দুয়ারের কাছে সেই জায়গাটাতে আসিয়া দাড়াইল । বলিল—ন বড়দি, দেখলাম না তো ?. জেঠীম৷ অল্প দুইচারিটা কথার পরই কোথায় উঠিয় গেলেন। অতসী অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্ত কহিল । অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করিল। তারপর সেও চলিয়া গেল। অপু ভাবিতেছিল, এবার সে উঠিবে কিনা। কেহই ঘরে নাই এসময় ওঠাটা কি উচিত হইবে ?...স্কুধা একেবারে উঠিয়৷ পড়িয়া গিয়াছে, এখন ক্ষুধা আর নাই, তবে গা ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে। যাওয়ার কথা কাহাকেও ডাকিয়া বলিয়া যাইবে ? .. দোরের কাছে গিয়া সে দেখিল সেই মেয়েট বরিান্দ দিয়া ও-ঘর হইতে বাহির হইয়। সিড়ির দিকে যাইতেছে— আর কেহ কোথাও নাই, তাহাকেই না বলিলে চলে না । উদ্দেশে ডাকিয়া বলিল—এই গিয়ে—ইয়ে—আমি যাচ্ছি আমার আবার কাজ– মেয়েটি তাহার দিকে ফিরিয়া বলিল—চলে যাবেন ?-- দাড়ান দিদিমাকে ডাকি—চ খেয়েচেন ? অপু বলিল—চা—তা—ইয়ে—থাক্ একদিন— মেয়েট বলিল—বস্থন, বস্থন—দাড়ান চা আনি— পিসিমাকে ডাকি দাড়ান-কিন্তু খানিকটা পরে মেয়েটিই এক পেয়ালা চা ও একটা প্লেটে কিছু হালুয়া আনিয়া তাহার সামনে বসিল । অপু ক্ষুধার মুখে হালুয়াটুকু গোগ্রাসে গিলিল। গরম চা খাইতে গিয়া প্রথম চুমুকে মুখ পুড়াইয়া ফেলিয়া ঢালিয়া ঢালিয়া খাইতে লাগিল। মেয়েটি বলিল—আপনি বুঝি ওদের খুড়তুতে ভাই ? থাক্ প্লেটটা এখানেই—আর একটু হালুয়া আনবো ? —হালুয়া ?...না—ইয়ে তেমন থিদে নেই—হঁn, বরং অন্ত স্বরেশ-দার বাবা আমার জেঠামশাই হতেন, জ্ঞাতি সম্পর্ক— এই সময় অতসী ঘরে ঢোকাতে মেয়েটি চায়ের বাটি ও প্লেটু লইয়া চলিয়া গেল। জেঠমা আসিলেন না। অপু অতসীর কাছে বিদায় লইয়া চলিয়া আসিল । সন্ধ্যার পরে ঠাকুরবাড়ীতে খাইয়া খানিক রাত্রে সে নিজের থাকিবার স্থানে ফিরিয়া দেখিল আরও একজন লোক সেখানে রাত্রের জন্য আশ্রয় লইয়াছে। মাঝে মাঝে এরকম আসে, কারখানার লোকের দু’একজন আত্মীয় স্বজন মাঝে মাঝে আসে ও দু’চার দিন থাকিয় যায়। একে ছোট ঘর, থাকিবার কষ্ট, তাহাতে লোক বাড়িলে এইটুকু ঘরের মধ্যে তিষ্ঠানো দায় হইয় উঠে । লোকটার পরণের কাপড় এমন ময়লা যে ঘরের বাতাসে একট। অপ্রীতিকর গন্ধ। অপু সব সহ্য করিতে পারে, এক ঘরে এ-ধরণের নোংরা-স্বভাবের লোকের ভিড়ের মধ্যে শুইতে পারে না. জীবনে কখনও সে তাহ করে নাই••• ইহ তাহার অসহ্য । কোথায় রাত্রে আসিয়া নির্জনে একটু পড়া-শুনা করিবে, না ইহাদের বক্বকের চোটে সে ঘর ছাড়িয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইল। নতুন লোকটি বড়বাজারের আলু পোস্তায় আলুর চালান লইয়া আসে, হুগলী জেলার কোন জায়গ৷ হইতে, অপু জানে, আরও একবার আসিয়াছিল। লোকটি বলিল ... কোথায় যান ও মশায় ? আবার বেরোন না কি ? অপু বলিল, না এই থানটাতে দাড়িয়ে বেজায় গরম অাজ • • • একটু পরে লোকটা বলিয় উঠিল-হঁ, ই, হঁ, বিছানাটা কিমশায়ের ? আস্থন, আসুন, সরিয়ে ন্যান একটুএঃ—হু কোর জলটা গেল গড়িয়ে পড়ে—দুত্তোর—না— অপু বিছানা সরাইয়া পুনরায় বাহিরে আসিল । সে কি বলিবে ? এখানে তাহার কি জোর খাটে ? উহারাই উপরোধে পড়িয়া দয়া করিয়া থাকিতে দিয়াছে এখানে । মুখে কিছু না বলিলেও অপু অন্ত দিন হয় তো মনে মনে বিরক্ত হইত, কিন্তু আজ সে সম্পূর্ণ অন্তমনস্ক ছিল।
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।