পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89 অপরূপ নিদর্শন (চিত্র ৫ এবং ৬ ) । এই প্রাচীনযুগের মন্দিরনিচয়ের অলঙ্কার-সম্পদের মধ্যে মনোকল্পিত ও পুম্পিক অলঙ্কারের যথেষ্ট প্রাচুর্য্য ও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তৎকালীন শিল্পীর অপরিস্ফুট প্রতিভা মন্দিরের বিভিন্ন অঙ্গগুলিকে এক স্বরে বাধিয়া স্থাপত্যের দিক দিয়া সামঞ্জস্য সাধন করিতে পারে নাই। পুরাতন দেবমন্দিরগুলি দেখিলে পরিষ্কার বোধ হয় যে, তাহাদের অলঙ্কারের প্রকৃতি ও বিন্যাস এখনও প্রাচীন ভারতের নিয়মাতুযায়ী এবং শুঙ্গ ও গুপ্তযুগের শিল্পরীতির প্রথানুযায়ী । কিন্তু দশম শতাব্দীর প্রথমভাগে যখন উড়িয়া শিল্পীরা পুরাতন পথ পরিত্যাগ করিয়া নূতন পথের পথিক হইল, মুক্তেশ্বর মন্দির সেই নবোদ্ভাসিত শিল্প-পদ্ধতির প্রতীক রূপে এখনও দণ্ডায়মান । ইহা উড়িষ্যা শিল্পে যুগান্তর আনয়ন করিয়াছে। কারণ ঐ সময়েই সৰ্ব্বপ্রথম উড়িষ্যার জাতীয় শিল্প-প্রতিভার গৌরব ও মহিমা সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় (চিত্র ৭ এবং ৯ )। ফাগুসন ইহাকে উড়িষ্যা স্থাপত্য-শিল্পের রত্ব বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু সেই উৎকীর্ণ চিত্রগুলি স্বতন্ত্রভাবে অতি মনোজ্ঞ এবং অতি রমণীয় হইলেও তাহাদের সম্মিলিতসৌন্দর্য্য-সৌধ পরিকল্পনার উপযোগী অঙ্গাঙ্গীভাবে সংবদ্ধ হইয়া অখণ্ড সৌন্দৰ্য্য-সৃষ্টি করিতে পারে নাই | পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যেই ' কিন্তু বিরাট লিঙ্গরাজে এই অপরূপ মগুণসমন্বয় সাধিত হইয়াছিল। ব্রহ্মেশ্বরের প্রসাধক চিত্রের মধ্যে খৃষ্টপূর্ব বৌদ্ধচৈত্যবাতায়নের ( যাহাকে কুমারস্বামী “চন্দ্রশালা” নামে অভিহিত করিয়াছেন ) পারসী অক্ষর-সদৃশ আশ্চৰ্য্যজনক অলঙ্কারে পরিণতি, বিশেষজ্ঞ মাত্রেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে ( চিত্র ৮ ) । মধ্যযুগের মন্দিরগুলিতে অন্যান্য চিত্রাপেক্ষ লতামগুণ ও বৃক্ষবঞ্জরীর প্রাধান্ত দেখা যায়। “স্থাপত্য অলঙ্কার রূপে ব্যবহৃত যে অপূৰ্ব্ব কারুকার্য্য ও কলাকৌশল কুভ্যস্তম্ভ গাত্রে মাল্যাকৃতি ডালিতে এবং ফুললত নটীলতা পত্ৰলত বনলতা (চিত্র ১১) প্রভৃতি লতার আবর্তনে প্রকাশ পাইয়াছে। তাহাতে অভিজ্ঞ সমালোচকের মতে চারুশিল্পের এ শাখায় গ্রীক-শিল্পী অপেক্ষাউড়িয়া কারুকারেরই প্রবাসী-জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড কৃতিত্ব সমধিক ভাবে প্রকট হইয়াছে।” এই সকল কারুকাৰ্য্যের চিত্তাকর্ষক সৌন্দৰ্য্য ও লালিত্যপূর্ণ সৌষ্ঠবই রাজারাণীমন্দিরের মগুণ-মহিমার প্রধান কারণ । মন্দিরগাত্র এইরূপে স্বল্প ও চিত্তরঞ্জিনী অলঙ্কারদ্বারা পুঙ্খাতুপুঙ্খরূপে উৎকীর্ণ থাকায়, গভীরভাবে খোদিত কমনীয় মূর্তিগুলি অত্যন্ত স্বদত হইয়াছে এবং স্বগোল স্বঠাম অলস নায়িকাদের ললিতকোমল দেহবল্লরীর লীলায়িত ভঙ্গী ও উদাম যৌবনক্রকে স্বন্দর ও স্বম্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু রসলোকের মধ্য দিয়া অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির দ্বারা যে অপরূপ সম্পদলাভ করা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীর উড়িয় শিল্পী কোণারকের সুর্য্যদেউলে তাহার চরমপ্রকাশ ব্যক্তি করিয়াছে এবং যাহা কিছু সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর তাহার সামঞ্জস্য সাধন করিয়াছে। বিচিত্র কারুকাৰ্য্যের প্রাচুর্য্যে ও তাহদের চমৎকার গঠনে এবং নিখুত সমানুপাতে এই চিত্তাকর্ষক স্ববৃহৎ দেবালয় শুধু উড়িষা কেন, সার জগতে অতুলনীয়। ইহা উড়িষ্যার স্থাপত্যশিল্পাকাশে একটি অত্যুজ্জল গ্রহবিশেষ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্থপতি প্রদীপের ইহাই শেষ শিখা । এই হতভাগ্য দেশের নিবিড় অন্ধকার বিদূরিত করিয়া শিল্পীর সে আলোক পুনরায় প্রজলিত হইল না। আশ্চর্যের বিষয় যে, দুই শতাব্দীর মধ্যে যখন উড়িয়ার বিস্তৃত সাম্রাজ্য উত্তরে মেদিনীপুর হইতে দক্ষিণে ত্ৰিচিনপল্লী পৰ্য্যস্ত সমগ্র ভূখণ্ড অধিকার করিয়াছিল এবং যখন প্রবলপরাক্রান্ত গজপতি রাজবংশের প্রতাপে গৌড় ও বাহমনীরাজ্যের মুসলমান স্বলতানগণ এবং কাঞ্চী ও বিজয়নগরের হিন্দু-নৃপতিগণ সৰ্ব্বদা সশঙ্কিত থাকিতেন, উড়িষ্যার ইতিহাসের এত গৌরবময় যুগেও উৎকল-শিল্পের লুপ্তগৌরব ফিরিয়া আসে নাই। (১) $ কিন্তু উড়িষ্যার বিচিত্র ও অপূৰ্ব্ব শিল্পমহিমা কেবল মাত্র যে ঐ দেশের চতুঃসীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না এবং ইহার প্রভাব যে প্রাচীন উৎকলবাসীদের সমুদ্রপ্রমণ ও উপনিবেশ স্থাপন অভিলাষ গুণে ভারতের বাহিরে ভারতীয় উপনিবেশসমূহের শিল্পকলায় বিশেষভাবে পরিলক্ষিত (S) Banerji, R. D.—The Empire of Orissa, Indian A ntiquary, December 1928, pp. 235–39.