পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] উড়িষ্যার মগুণশিল্প २8१ হয়, সে কথা ঐতিহাসিক निहीनः ধীরে ধীরে প্রকাশ পাইতেছে । আমরা দেখিতে পাই ব্রন্ধে, শু্যামে, চম্পায়, কাম্বোজে ও যবদ্বীপে উড়িষ্যার মগুণ-শিল্পের প্রভাব সুস্পষ্ট বিদ্যমান। প্রাচীন ব্রহ্মদেশীয় পুথিতে লিখিত আছে যে, এককালে নিম্নত্রহ্মের কতকাংশ উক্কল বা উৎকল নামে, এমন কি অধুনা প্রোম নগরীও, শ্ৰীক্ষেত্র নামে অভিহিত ছিল। ব্ৰহ্মদেশে প্রাচীন উড়িয়াবাসী কর্তৃক উপনিবেশ স্থাপনের ইহা অকাট্য প্রমাণ। ব্রহ্মদেশীয় অগণিত বৌদ্ধস্তুপ ও মন্দিরে যে পুপপত্রের অলঙ্কার কীৰ্বিমুখ, মকর ও সিংহাদির অসংখ্য চিত্ৰ দেখিতে পাওয়া যায় সেগুলি যে মধ্যযুগের উড়িষ্যার স্থাপত্য-অলঙ্কারের অাদর্শে রচিত, তাহ নিঃশঙ্কচিত্তে বলা যাইতে পারে। মালয় উপদ্বীপ ও তৎসংলগ্ন দ্বীপসমূহের সহিত যে এককালে উৎকল বা কলিঙ্গের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল তাহার চিহ্ন এখনও বর্তমান। এখনও সেখানে ভারতবাসীমাত্রেই, কলিঙ্গ শব্দের অপভ্রংশ ক্লিং নামে সুপরিচিত। এই কথা স্মরণ রাখিলে, ঘবদ্বীপের আশ্চৰ্য্যজনক স্থাপত্যসম্পদের মধ্যে যাহা সাধারণতঃ “কান-মকর” অলঙ্কার বলিয়া পরিগণিত, তাহার সহিত ভুবনেশ্বরের অষ্টমশতাব্দীর দেউলের কীৰ্ত্তিমুখ ও মকরের অসাধারণ সাদৃশ্ব বিস্ময়কর মনে হইতে পারে না। চম্পার ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও আমরা উড়িয়ার লতাবিতানের ও হস্তীয়ুথের চমৎকার পরিকল্পনার আভাস পাইয়া থাকি। উপসংহারে এই বলিয়া আমাদের প্রসঙ্গ শেষ করিতে চাই যে, প্রাচীন উড়িষ্যার এই বিচিত্র ও অপরূপ মগুণ-শিল্প যে চিরকালই প্রত্নতাত্বিক গবেষণা ও আলোচনার বিষয় হইয়া থাকিবে ইহা নিতান্ত পরিতাপের বিযয় । আমাদের মনে হয়, জাতীয় শিল্প ও অনুশীলনের এই পূর্ণজাগরণের দিনে, অবহেলা ও বিস্কৃতির জাল ছিন্ন করিয়৷ এই সকল মনোরম চিত্রগুলি আমাদের দৈনিক জীবনে যথাযোগ্য ব্যবহার করিবার সময় আসিয়াছে। আমরা ইচ্ছা করিলেই আজকালকার প্রচলিত তৃতীয় শ্রেণীর বিদেশী অলঙ্কারগুলির বৃথা অনুকরণের পরিবৰ্ত্তে, জাতীয় জীবন ও আদর্শের সহিত ঘনিষ্ঠ ভাবে বিজড়িত এই সকল সুচারু প্রাচীন ভারতীয় চিত্রগুলি রেখাঙ্কনে, বস্ত্রশিল্পে, স্বচীকার্য্যে, এবং স্থাপত্য শিল্পের গৃহভূষণরূপে সচ্ছন্দে ব্যবহার করিতে পারি। আমাদের দেশে আজকাল প্রাচীন ভারতীয় কলা বলিলেই, সাধারণতঃ লোকে অজন্তা ও ইলোরার শিল্পসম্পদই বুঝেন। কিন্তু অজস্তার আলেখ্যগুলি রেখার ভঙ্গিমায়, বর্ণের শোভায় এবং ভাবের প্রকাশে জগতে অতুলনীয় হইলেও আমরা ইহা বলিতে বাধ্য হইব ইহাতে উড়িষ্যার ন্যায় মণ্ডণচিত্রে বৈচিত্র্য নাই। পরবর্তীকালের অন্যান্য অসংখ্য মন্দিরগুলির কথা ছাড়িয়া দিলেও একমাত্র বৈতাল দেউলই মণ্ডণের অসাধারণ বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্য্যে এবং অপূৰ্ব্ব কলাকৌশলে আমাদের চিত্ত একেবারে বিস্ময়াভিভূত করিয়া ফেলে। আশা করি যথাসময়ে দেশবাসীমাত্রেরই দৃষ্টি এ-বিষয় আকৃষ্ট হইবে।