পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহামায়া শ্রীসীতা দেবী ૨6: ছোট প্যাসেঞ্জার ট্রেনখানি ক্রমেই মহামায়াদের গ্রামের দিকে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছিল। মাঠ, বন, গ্রাম, নদী, দুইপাশে নাচিতে নাচিতে তাঁরবেগে অদৃশ্ব হইয় যাইতেছে, যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই কথাবাৰ্ত্তায় ব্যস্ত, বাহিরের দিকে বড় বেশী মনোযোগ কেহ খরচ করিতেছে না। একখানি সেকেণ্ড ক্লাশ গাড়ীর ভিতর ইন্দু, মায়া এবং তাহার ছোটকাক বসিয়া। ইন্দুর শরীর এখনও সারে নাই, যদিও রোগশয্যা হইতে সে উঠিয়া বসিয়াছে। গ্রামের হাওয়ায় স্বাস্থ্য খানিকট ভাল হইবে এই আশায়, এবং খানিকটা মায়ার আগ্রহাতিশয্যে তাহারা গ্রামে চলিয়াছে। নিরঞ্জন কয়েকদিন হইল রেঙ্গুন ফিরিয়া গিয়াছেন। মায়া মাসখানেক পরে যাইবে বলিয়াছে, সম্ভব হইলে ইন্দুকেও লইয়া যাইবে। মায়াতে এবং ইন্দুতে কথা হইতেছিল। মায়া বলিতেছিল, “কয়েকটা বছরের মধ্যেই সমস্ত জীবনট কেমন যেন উন্টোপাণ্টা হয়ে গেছে পিসীমা, কিছুই যেন আর আগের চোখে দেখতে পারছি না।” ইন্দু বলিল, “মেয়েমানুষের কপালই এই রকম। একটা জীবনের মধ্যে কতরকম তার অদলবদল। আমাদেরও বিয়ের পর কম ঝণকানি খেতে হয়নি। তোর বিয়ের আগেই হল, এই যা । মনে আছে গ্রাম ছেড়ে যেতে কি রকম কেঁদেছিলি ? অার এখন বোধ হয় সকলের পাড়াগেয়ে কাণ্ডকারখানা দেখে তোর হাসিই পাবে।” মায়া বলিল, “তুমিও দেখচি আমাকে ভয়ানক রকম মেম ঠিক করে রেখেছ, আমার বরং ভয় হচ্ছে আমার রকমসকম দেখে সবাই খুব অদ্ভুত কিছু না ভাবে। জুতোটা খুলেই ফেলি, কি বল ?” ইন্দু বলিল, “ঘরে গিয়ে সে যা হয় করিদ, এখন থাক । শেষে ইষ্টশানের কাকর পায়ে ফুটে মরবি। এখন জুতে। মোজা দেখা লোকের চোখে সয়ে গেছে। কলকাতা থেকে সদাসৰ্ব্বদা মানুষ আসছে যাচ্ছে, মেয়েতে জুতোমোজাও কত পবছে। আসলে তোর বিয়ে হয়নি দেখেই সব ফুস্কর ফুস্কর স্বরু করবে। তা তাতে রাগ করিসূ না।” মায়ার মুখ লাল হইয়া উঠিল। বলিল, “পিসীমা, তোমরা যাই মনে কর, গ্রামটাকে, গ্রামের লোকদের আমি এখনও ভালবাসি। কিন্তু এই সারাক্ষণ পরের কথা নিয়ে থাকাটা আমার একটুও ভাল লাগে না। কার বারো বছরে বিয়ে হচ্ছে আর কার চব্বিশ বছরে হচ্ছে, তা নিয়ে এত মাথা ঘামাবার কি দরকার তাদের ? তাদের ত আর বিয়ে দিতে হবে না ?” ইন্দু ভাইঝির কথার ঝাঝে একটু হাসিয়া বলিল, “অত চটিস্ কেন ! সহরে তোদের কত রকম আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা আছে। থিয়েটার আছে, বায়োস্কোপ আছে, নাটক নভেল পড়া আছে। কাজেই পরের খবরে তোদের অত দরকার নেই, খবর নেবার সময়ও নেই। গ্রামে ত ঘরের রান্না-খাওয়ার কাজ হয়ে গেলে আর কোনো কৰ্ম্ম নেই, কাজেই পরনিন্দ, পরচর্চা করে মুখটা একটু বদলায়। তা না হলে কি মানুষ বঁাচে ?” মায়া বলিল, "চরকা কাটলেও ত পারে। নিজেদেরও উপকার হয়, পরেরও অপকার হয় না।” তাহার ছোটকাকা বলিল, “নিজের মঙ্গল যাতে, তা যদি মানুষ অত সহজে বেছে নিত, তা হলে ত জগৎ সংসারের অধিকাংশ problem-ই মিটে যেত। কোনট ভাল, কোনটা মন্দ তা ত প্রায় সব মানুষেই জানে, কিন্তু কাৰ্য্যত করতে চায় ক’জন ?” মায় বলিল, “কেন যে করে না তাও ত বুঝি না।” ইন্দু বলিল, “এরই মধ্যে কি আর সব বুঝৰি রে,