পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२.१९ এরা এদেশে প্রচলিত সংস্কৃত মন্ত্র আর আঙ্গুষ্ঠানিক পরিপাটীর সঙ্গে সে সমস্তের বেশ সঙ্গতি রক্ষা ক’রেছে। আমাদের পৌরাণিক পূজার অঙ্গুষ্ঠানে যে সব "দশ-কৰ্ম্ম দ্রব্য’ ব্যবহার করা হয় তা এরা জানে না, আবার এদের ব্যবহৃত ‘দশকৰ্ম্ম কি কি, তাও আমরা বুঝবে না। অথচ এদের এই পূজা বা অচষ্টান সম্পূর্ণরূপে আমাদের নান উপচারে পূজারই মতন একই বর্গের ব্যাপার –আদিম কালে ভারতবর্ষে যে অনুষ্ঠান ছিল তার এক রকম বিকাশের ফলে বৈদিক যজ্ঞের বাইরে যে সব ব্রাহ্মণ্য অনুষ্ঠান দাড়িয়েছে, যে সব জিনিসের ব্যবহার প্রচলিত হ’য়েছে সেগুলি একদিকে,—আর তার অন্য রকমের বিকাশ হ’য়েছে এই দ্বীপময় ভারতে, মালাইজাতির প্রাচীন রীতি ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটার ফলে । উপরে মণ্ডপের মধ্যে মাচায় পূজা সম্ভার নিয়ে বসে ‘পদগু’ ব্রাহ্মণের নিজ নিজ কৃত্য সম্পাদনেই নিযুক্ত রইলেন। একবার মাত্র চোখ তুলে আমাদের দিকে তাকালেন, আমরা বাশের সিড়ি-পথ বেয়ে উপরের মাচার চারিদিকে যে বারানার কথা ব’লেছি তাতে এসে দাড়ালুম । জন তিনেক ইউরোপীয় রয়েছেন, ইউরোপীয় বেশে ধীরেন বাবু আর স্বরেন বাবু রয়েছেন, আর এদের অদৃষ্ট-পূৰ্ব্ব ভারতীয় পোষাকে আমি ; দলটাকে দেখে একটু আশ্চৰ্য্য হ’ল বটে, কিন্তু মুখ না তুলে নিজ নিজ কাজে রত রইল । পুরোহিতদের মধ্যে দুজনে মিলে বঁশের কঞ্চি, তালপাত, কাপড় আর ফুল দিয়ে একটা কি জিনিস তৈরী ক’রছে, সেটা আকারে দাড়াচ্ছে আমাদের বিয়েতে ব্যবহৃত চালের গুড়োর "শ্ৰী”-র মতন— শুনলুম জিনিসটার নাম poespa ‘পুপ’, এটা মৃতের আত্মার প্রতীক ; এতে তালাপাতায় মৃতের মুখের একটা যেমন-তেমন প্রতিকৃতি এ কে দেওয়া হয়, আর ওঁ-কার লিখে দেওয়া হয়, আর মৃতের নামও লিখে দেওয়া হয় । একজন পদণ্ড ব’সে ব’সে মন্ত্র প’ড়তে প’ড়তে তালপাতায় নিবিষ্টমনে কি লিখছেন। আর একজন,—র্তার গালের ভিতরে এক তাল পান-দোক্ত পূরে রাখার জন্য একদিককার গাল ফুলে রয়েছে,—তিনি বিঘৎ মেপে মেপে কঞ্চি কিংবা কলার বাসনার ফালি টুকরো টুকরো প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড MAMS SMMAMAMMMAA ASASASAMMAMAMAMMMMMMAMMM MAAA AAAA SAAAAAMS ক’রে কেটে রাখছেন । পাশে বারান্দায় দাড়িয়ে কালো জাম পরা পুরোহিতের সহায়ক জন দুই, একটি কাটারীর মতন অস্ত্রে তালপাতা আর কাঠ চিরে চিরে রাখছে, আর মাঝে মাঝে চাপা গলায়, গলা বিলক্ষণ ভারী ক’রে, মন্ত্র পীড়ছে ; কিছু কিছু স্বর আছে এই পাঠ রীতিতে – খানিক ক্ষণ নিবিষ্টভাবে শোনবার চেষ্টা ক’রলুম, কিন্তু বুঝতে পারলুম না-সংস্কৃত শব্দ দুএকটা মাত্র ধরতে পারা গেল বলে বোধ হ’ল—‘সিওআ, দিওঅ’ আর ম-হ-ডেও-অ’ ( শিব শিব, মহাদেব )। তবে দুর থেকে সংস্কৃত মন্ত্র পাঠের মতই লাগে, যদিও যেন কেমন এক ধরণের পড়া ব’লে মনে হয়। এই সব মন্ত্র বিকৃত সংস্কৃতে রচিত—অর্থাং সংস্কৃত চর্চা না ক’রে বহু শতাব্দী ধ’রে এই সব মন্ত্র ব্যবহার করায় তাদের উচ্চারণ-বিকৃতি তে হয়েছেই, মূল দেবভাষারও বিকৃতি হয়েছে, বহুস্থানে বলিদ্বীপের বিস্তর শব্দ ঢুকে গিয়েছে। সম্প্রতি সংস্কৃতজ্ঞ ইউরোপীয় পণ্ডিতদের দ্বারা এই সব মন্ত্রের ভালো ক’রে চর্চা আরম্ভ হ’চ্ছে । আমি তো একেবারে অত্যন্ত কৌতুহলী আগ্রহের সঙ্গে এই সব জিনিস দেখতে লাগলুম। কিন্তু হায়, এদের এই সব ব্যাপার আমায় বুঝিয়ে দেয় কে ? আমরা তে। ওখানে থাকবো মাত্র ২৩ ঘণ্টা, আরো কত দেখবার আছে। ডাক্তার খোরিস কিছু কিছু জানেন, তিনি খাত বের করে মাঝে মাঝে নোট নিচ্ছেন, পদগুদের দু একটা কথা জিজ্ঞাসা ক’রছেন, তিনি নিজে এ সব আরও জনিবার চেষ্টা ক’রছেন ; ভাষার অভাবে তার কাছে খবর পাওয়াও দুর্ঘট ; আর রেসিডেন্ট সাহেবের ওসব বিষয়ে বড়ো খোজ নেবার আবশ্যকতা হয় নি, তাই তিনি খুটা-নাট ব্যাপার কিছু বুঝোতে অক্ষম । এখনও বলিদ্বীপের কথা স্মরণ হ’লে মনে কত আপশোশ হয়, বলিদ্বীপে বেশীদিন তো থাকা সম্ভব হ’ল না-এখনও যদি স্ববিধা পাই, তো কিছুকাল ধ’রে এদের সঙ্গে মিশে এদের ভাষা শিখে সমস্ত জিনিস পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচনা ক’রে আমাদের পূজা অনুষ্ঠানের সঙ্গে এদের যোগ-সূত্র বা’র করবার চেষ্টা করি। আমার বিশ্বাস কোনও কৃতকৰ্ম্ম ভারতীয় ব্রাহ্মণ না হ’লে এ কাজ ভালো ক’রে পারবে না । কবে