পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ২৭৬ আমাদের অদৃষ্ট-পূৰ্ব্ব, অনচুভূতপূৰ্ব্ব । বলিদ্বীপে নেমে প্রথম দিনেই এতটা সৌন্দর্য্যের ভাণ্ডার এমনি অনপেক্ষিতপূর্ণ ভাবে আমাদের সামনে খুলে যাবে, তা আমরা কল্পনাও ক’রতে পারি নি। এই দিনটীর স্থতি চিরকাল উজ্জল হ’য়ে মনে থাকবে। একটি অষ্ট্রিয়ান মহিলা, ইনি ছবি অঁাকেন, অন্য ইউরোপীয়দের সঙ্গে ছিলেন ; তিনি তো দেখে শুনে আমাদের মতনই মুগ্ধ, তবে অজণ্ট। আর মহাবলিপুর আর ইলোরার চিত্র আর ভাস্কৰ্য্য, আর প্রাচীন ভারতের কথা আর তার সঙ্গে বলিদ্বীপের যোগ চিন্তা করার দরুন যে এক বিশিষ্ট ঐতিহাসিক স্মৃতিজনিত আনন্দের ভাগী হ’য়ে আমরা ভারতীয় কয়জন ছিলুম, তাথেকে তিনি বঞ্চিত ছিলেন – ফরাসীতে র্তার সঙ্গে আলাপ হ’ল—উচ্ছ্বসিত প্রশংসার HIM R'=[[HR–Monsieur, tout cela— c’est comme un rive—মহাশয়, এসব – এসব যেন একটা স্বপ্ন ! স্বপ্নই বটে ! সমস্তই দেখছিলুম,—এখানকার লোকেদের জীবনের বাহ সৌন্দর্য্যের প্রবাহ অপার্থিব বস্তুর মতই বোধ হ’চ্ছিল। কিন্তু এদের জীবনের এই প্রাচীন যুগের উপযুক্ত শিশু-সুলভ সারল্য দেখে মনে হচ্ছিল, আমরা এ জিনিস অনেক দিন হ’ল পিছনে ফেলে এসেছি—এদের এই জগতের সদানন্দ, elemental বা মৌলিক কতকগুলি স্থখ দুঃখের অনুভূতির মধ্যেই নিবদ্ধ থাকা, আমাদের পক্ষে আর রুচিকর বা সম্ভবপর হবে না ; দূর থেকে দেখতে বেশ, কিন্তু যতই নয়নরঞ্জন যতই মনোহর লাগুক না কেন, এদের জীবনের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ার কথা আমি ভাবতে পারি না ; এর মধ্যে, কাচা বাশের গন্ধ তালপাতার গন্ধ আর এই দেশের ফুলের উগ্র সৌরভ আর ভীড়ের মানুষের গায়ের বাস, এ সবে মিলে আমার চিত্ত মধ্যে যে একটা মাদকতার ভাব যে একটা সংজ্ঞা-হারা ক’রে দেবার ভাব স্বষ্টি ক’রছিল, সেটার সঙ্গে সঙ্গে যেন চিত্তে একটা প্রতিক্রিয়াও এনে দিচ্ছিল :- সুপরিচিত, অনাড়ম্বর, জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত, আত্ম-সমাহিত প্রাচীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক সভ্য জীবনের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক আদর্শগুলি যেন বিদ্যুতের ঝলক দেখিয়ে মনে দু একবার উদিত হ’ল—আমি চারিদিকের এই সত্য-যুগের সৌন্দৰ্য্য রাশির মধ্যে থেকে নিজেকে যেন নিলিপ্ত আর পৃথকৃ ক’রে ভেবে, আধুনিক আর ভবিষ্যতের প্রবদ্ধমান সেই মানসিক নৈতিক আর আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির আদর্শের সম্বন্ধে প্রাণের মধ্যে একটা অব্যক্ত আকুলতার সাড়া পেয়ে একটা আরামের নিশ্বাস ফেলে বাঁচলুম। ঘুরে ঘুরে একটা না’রকল পাতা ছাওয়া স্থানে এলুম, সেখানে মাদুর পাতা রয়েছে, আর অনেকগুলি নিমন্ত্রিত বলিদ্বীপীয় ভদ্রলোক ব’সে রয়েছেন। সাবেক বলিদ্বীপীয় পোষাক পরা বেশীর ভাগের—মাথায় রঙীন রুমালের পাগড়ী, গায়ে বুকে-বাধা রঙীন জরীর বা রেশমের কাজ করা চাদর, পরণে হাটু-পৰ্য্যন্ত রঞ্জন চেলির মতন কাপড়, পিঠে ক্রিস বাধা ; কেউ কেউ সাদা কিংবা কালো জামাগায়ে চড়িয়েছেন। অকুমানে বোধ হ’ল, এরা আশ-পাশের গ্রামের অভিজাত ব্যক্তি। এর মৃদুস্বরে কথাবাৰ্ত্তা করছেন, আর সামনে চৌকো বাক্সের আকারের রূপের পানের বাট। রয়েছে তা থেকে পান চুন স্থপুরী আর দোক্তার তামাক নিয়ে পানের বীড়ে পাকিয়ে মুখের ভিতরে পুরে দিচ্ছেন। জন যাট সত্তর লোক হবে এই আসরে বসে। আমি সেখানে এসে দাড়ালুম, একজন আমায় বসতে ব’ল্লেন, আমি ব’সলুম। মালাই ভাষায় জিজ্ঞাসা হ’ল আমি কে । এইবারে আমার ভাষার পরীক্ষা আরম্ভ হ’ল । ংক্ষেপে ব’ল্লুম, বি-র-ট-ওঅরূ-স’ বা ভা-র-ত-বর্ষ থেকে যে মহাগুর এসেছেন, তার সঙ্গেকার লোক আমি । এখন এর সংস্কৃত শব্দ কি রকমে উচ্চারণ করে, তা ডাক্তার থোরিস যখন পদণ্ডদের সঙ্গে কথা কইছিলেন তখন একটু লক্ষ্য ক’রে সমঝে নিচ্ছিলুম ; যেমন 'মুদ্রা’ শব্দের উচ্চারণ ক’রলে ‘মুড়ে' বা ‘মুড়ো' ( mudri ) । আমাদের মোটরচালকের কাছে ‘রাম, সীতা’ এই দুইটী নাম ‘র-ম, সাঁ-তো' (Romo, Sitti) এইরূপে শুনি ; গঙ্গা, যমুনা’কে ‘গাঙ্গে বা গাঙ্গ্যো’ ( Gang ), ‘জামুণে বা জামুন্তে৷ (Jamuni) এইরূপে শুনি । এই থেকে হদিস পেয়ে বুঝলুম যে, এদের মতন . ক’রে না ব’ল্লে, বাঙালী বা বিশুদ্ধ সংস্কৃত ধরণে বললে, এরা আমার কথা এদের জানা থাকলেও ধ’বৃতে পারবে না । এদের ব’ল্লুম— জাম্বুডুইপে" বা জম্বুদ্বীপ থেকে আমরা আসছি—