পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 حميص مدفعية মতিলালও পাশ করলে, কিন্তু সে আর কলকাতায় ফিরে এল না। সেবার পূজোর ছুটির মধ্যে একদিন মতিলালের ছোট ভাই যতিলাল আমাদের বাড়ীতে এসে হাজির । যতিলাল বললে—ম তোমায় একবার ডেকেছেন— আজই যাবে। খবর নিয়ে জানলুম যে, তারা কলকাতায় মাস খানেকের জন্য একটা বাড়ী ভাড়া ক’রে আছে। এখানে এসেই আমাকে খবর দিয়েছে। মাঠের আডড তখনও পুরোদমে চলেছে। সেদিন আর মাঠে না গিয়ে মতিলালদের ঠিকানায় গিয়ে হাজির হওয়া গেল । মতিলালের মা তো আমায় দেখেই কাদতে আরম্ভ ক’রে দিলেন । তার চোখে জল দেখে আমি চম্কে উঠলুম—তবে কি মতিলাল নেই ! তবুও জিজ্ঞাসা করলুম—মতিলাল কোথায় ? মা বললেন—আজ দু-মাস হ’ল সে কোথায় চলে গিয়েছে, সেই থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না । কথাট! শুনে একেবারে দমে গেলুম। জিজ্ঞাসা করলুম—ঝগড়া-ঝাটি কিছু হয়েছিল নাকি ? . তিনি বললেন—ঝগড়া হয়নি। সেই হিমানী ছুড়িকে তোমার মনে আছে ? তাকে নিয়ে সে পালিয়েছে। তারা নিশ্চয় কলকাতাতেই কোনো জায়গায় আছে। তোমরা তাকে খুঁজে বের কর, বাবা। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে এস, তা না হ’লে আমি বঁচিব না। মতিলালের মার কাছ থেকে যতখানি সংবাদ সংগ্ৰহ করা গেল তার তাৎপর্য্য হচ্ছে এই যে, হিমানীর মার মৃত্যুর বোধ হয় মাস-দুয়েক পরেই তার বাবা আর একটি তরুণীর পাণিপীড়ন করেছেন । ইতিমধ্যে হিমানীর সঙ্গে কলকাতায় মতিলালের পত্র-ব্যবহার চলছিল। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ীতে যাবার কিছুদিন পরেই একদিন সকালবেলা দেখা গেল যে, মতিলাল ও হিমানী দু-জনেই অন্তৰ্দ্ধান করেছে। তথুনি মাঠে গিয়ে সংবাদটা প্রচার করা গেল। তখন ফুটবল খেলা শেষ হ’য়ে গানের আসর বসেছে" মতিলালের কথা শুনে মাঠস্থদ্ধ ছেলে চেচিয়ে উঠ ল— জয় মতিলালের জয় ! প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঠিক হ’ল পরদিন থেকে তার খোজ মুরু হবে। দিন-দশেক আতি-পাতি করে খুঁজে মতিলালকে ঠিক ধরে ফেলা গেল। বেলেঘাট অঞ্চলে একট। খোলার ঘর নিয়ে সে আর হিমানী বাস করছিল। হিমানীকে আমরা মতিলালের মতন নাম ধরেই ডাকতুম, কিন্তু এবার দেখার পরেই আমরা তাকে বৌদি বলে ডাকৃতে আরম্ভ করলুম। আমার মুখে বৌদি ডাক শুনে প্রথমে সে লজ্জায় লাল হ’য়ে উঠল। কিন্তু মুহূৰ্ত্তের মধ্যেই সে-সঙ্কোচ কাটিয়ে হিমানী এমন ব্যবহার করতে লাগল যেন এই ডাকেই সে চিরদিন অভ্যস্ত। পরামর্শ কুরু হ’য়ে গেল। অবিঙ্গি আমাদের এই পরামর্শ-সভায় হিমানীও এসে বসল। প্রথমেই উঠল গ্রাসাচ্ছাদনের কথা । হিমানী ও মতিলালের কাছে য ছিল তা রেল ও গাড়ীভাড়া তার ওপরে নতুন সংসার পাতা, দু-মাসের দু-টাক ক’রে ঘরভাড়া আর খাওয়ায় প্রায় সব নিঃশেষ হ’য়ে এসেছিল। হিমানী হিসাব ক’রে বললে, মাসে দশটা টাকা হ’লে তাদের খাওয়া ও বাড়ীভাড়া চলে যেতে পারে। আমি আর নিৰ্ম্মল দু-জনে এই দশ টাকার ভার নিলুম। কারণ মতিলাল বললে যে, বাড়ীতে ফিরে যাওয়৷ তার পক্ষে অসম্ভব। হিমানীকে ফেলে সে কি ক’রে বাড়ী যাবে! মনে হ’ল সত্যিই তো ! হিমানীকে ফেলে মতিলাল কি করে বাড়ী যেতে পারে! কয়েকদিন পরে মতিলালের মার সঙ্গে গিয়ে দেখা করলুম ! ছেলেকে দেখবার আশায় তিনি দিন গুণছিলেন। তাকে বললুম—আজ কলেজ থেকে বাড়ী ফেরবার সময় পথে মতিলালের সঙ্গে দেখা হ’য়ে গিয়েছিল । মতিলালের মা যেন হাতে স্বর্গ পেলেন । তিনি বললেন—তাকে ধরে নিয়ে আসতে পারলি নে— বললুম—সে চেষ্টা অনেক করেছিলুম কিন্তু কিছুতেই সে এল না । —কি বললে সে ? —সে বললে হিমানীকে ফেলে কি ক’রে আমি বাড়ী যাব! আমার সঙ্গে যদি তাকেও তারা স্থান দেন তা হঃস্থ য়েট পারি ।