পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা } মতিলাল আমার কথা শুনে তার চোখ দুটো জলে ভরে উঠল। রুদ্ধকণ্ঠে তিনি বললেন—ত কি ক’রে হবে বাবা ! তোমরা তো লেখাপড়া শিখেচ–বুদ্ধি-বিবেচনাও আছে। গেরস্তর সংসারে হিমানীকে কি ক’রে ঠাই দিই— মতিলালের মার পরে আরও অনেকের মার মুখেই এ রকম কথা শুনেছি বটুে, কিন্তু কেন যে গেরস্তর সংসারে তাদের স্থান হোতে পারে না তা তখনও বুঝতে পারিনি, আজও বুঝতে পারি না। তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ ক’রে বসে রইলুম। কিছুক্ষণ পরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন—হতভাগ কোথায় আছে ? বললুম অনেক চেষ্টা ক’রেও তার ঠিকানাট বার করতে পারলুম না। সে বললে—কলেজে গিয়ে এক সময় তোর সঙ্গে দেখা করব । —সেই ছুড়িটা সঙ্গে আছে তো ? কথাটা শুনে ভারি হাসি পেল। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ঘাড় নেড়ে জানালুম—হঁ্যা আছে। —একবার তাকে কোনো রকমে আমার কাছে ধরে নিয়ে আসতে পারিস্ ? —চেষ্টা ক’রে দেখব—বলে সেদিন তার কাছে বিদায় নেওয়া গেল । পরদিন বেলেঘাটার সেই প্রাসাদে আবার আমাদের পরামর্শ-সভা বসল। হিমানীকে ফেলে মতিলালের একলা বাড়ীতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। অনিশ্চিত অদৃষ্টসাগরে তারই মুখ চেয়ে যে ভেলা ভাসিয়েছে, তাকে ফেলে কেমন ক’রে সে ঘরের স্থখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে ফিরে যাবে! একদিন মতিলালের মাকে বলে ফেলা গেল—আচ্ছা, হিমানীকে স্থান দিতে আপনাদের আপত্তি কি ? কথাটা শুনে তিনি অদ্ভুত এক রকমের দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন । সে দৃষ্টির অর্থ—ও তোমরাও বুঝি ঐ দলের ? কিছুক্ষণ পরে তিনি বললেন—হিমানী কি সম্পর্কে আমাদের এখানে থাকবে ? সে যদি মতিলালের সঙ্গে ছিল। আমার এখনও একটি ছেলেমেয়েরও বিয়ে হয়নি। ● আবার কিছুক্ষণ পরে একটু শ্লেষের সঙ্গে বললেন— হিমানীর নিজের বাড়ীতেই কি তার অীর স্থান হবে ? তোমরা তো তার শুভার্থী, একবার চেষ্টা ক’রে দেখ না । সেদিন সন্ধ্যাবেল এই কথা শুনে হিমানী বললে— আমাকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিলেও অামি যাব না । মতিলাল বললে—তোরা আর মার কাছে যাস নে । আমরা মতিলালের মার সঙ্গে দেখা করা বন্ধ ক’রে দিলুম। পূজোর পরে কলেজ খুললে একদিন খোজ নিয়ে জানতে পারলুম যে, তারা কলকাতা থেকে চলে গিয়েছেন। মতিলাল দিব্যি সংসার করতে লাগল। সে সমস্ত দিন চাকরীর সন্ধানে ঘোরে। সন্ধ্যের সময় মাঠে এসে জোটে। সন্ধ্যের পরে আমি আর নিৰ্ম্মল তার সঙ্গে বেলেঘাটার সেই প্রাসাদে গিয়ে ঘণ্টাখানেক গল্প-গুজব ক’রে ফিরে আসি । এমনি কিছুদিন যায়। মতিলাল ইতিমধ্যে একটি ছেলে-পড়ানোর কাজ জুটিয়েছিল। মাস-দুয়েক পরে সে কাজটা আবার চলে গেল। পাচ টাকা ক'রে দু-মাসের মাইনেতে তাদের জোড়া-দুয়েক কাপড় হ’ল, তা ছাড়া আমাকে ও নিৰ্ম্মলকে একদিন হিমানী নেমস্তন্ন ক’রে ংস রোধে খাওয়ালে । বছরখানেক এইভাবে কাটবার পর একদিন বিকেলে মতিলাল বললে—ওহে, বেড়ে একটা মতলব ঠাওরানো গিয়েছে । মতিলালের যে জায়গাটায় থাকৃত তার চারিদিকে ছিল ব্যবসাদগর, আড় তদারদের বাস । এদের কারও কারও সঙ্গে তার খাতিরও জমেছিল । মধ্যে-মধ্যে দু-একজনের খাত লিখে, ইংরেজীতে চিঠি লিখে সে টাকাট-সিকিট উপায়ও করত। মতলব ঠাওরানোর কথা শুনে আমরা মনে করলুম তার মাথায় বুঝি কোনো ব্যবসায়-বুদ্ধি চেপেছে । সে বললে—দেখ আমার অভাবে মা বাবা ভাই বোন সবাই কষ্ট পাচ্ছে, তা আমি বেশ বুঝতে রছি। কিন্তু একটি কাজ করলে তারা হিমানীকে স্বদ্ধ না গিয়ে অন্য কারুর সঙ্গে যেত ত হ'লে-নয় কথা-বাড়ীতে স্থান দিতে কোনো আপত্তি করবেন না ।