পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৪

৩য় সংখ্যা ] ঘনীকৃত তৈল লুচি কচুরি প্রস্তুত করিবার সময় ময়দায় ঘিয়ের ময়ান দেওয়া হয়, তাহার ফলে খাবার খাস্ত হয়, অর্থাৎ ময়দাপিণ্ডের চিমস ভাব দূর হয়। খাজা গজায় প্রচুর ময়ান থাকে, সেজন্য ভাজিবার সময় স্তরে স্তরে আলগা হইয়৷ যায়। কিন্তু যদি ঘিয়ের বদলে তেলের ময়ান দেওয়া হয় তবে তত ভাল হয় না । চৰ্ব্বি দিলে ঘিয়ের চেয়েও ভাল হয়, অবশু সকলে সে পরীক্ষা করিতে রাজী হুইবে না। বিলাতী বিস্কুটে এযাবৎ চৰ্ব্বির ময়ান চলিয়া আসিতেছে। এদেশে যে ‘হিন্দু-বিস্কৃট" প্রস্তুত হয় তাহ বিলাতীর সমকক্ষ নয়। ইহার প্রধান কারণ-নিপুণতার অভাব, কিন্তু চৰ্ব্বির বদলে ঘি বা মাখন ব্যবহারও অন্যতম কারণ । তৈল চৰ্ব্বি ইত্যাদির যতরকম প্রয়োগ আছে তাহার বর্ণনা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। এখন ঘনীকুত তৈলের কথা পাড়িব । প্রায় ত্রিশ বৎসর পূৰ্ব্বে একজন ফরাসী কৈমিতিক আবিষ্কার করেন যে নিকেল-ধাতুর স্থল্ম চর্ণের সাহায্যে ভৈলের সহিত হাইড্রোজেন গ্যাস যোগ করা যায় এবং তাহার ফলে তরল তৈল ঘনীভূত হয়। এই প্রক্রিয়ায় নিকেল ঘটকের ( catalyst ) কাজ করে মাত্র, উৎপন্ন বস্তুর অঙ্গীভূত হয় না । উক্ত আবিষ্কারের পর বহু বৈজ্ঞানিক এই প্রক্রিয়ার উত্তরোত্তর উন্নতিসাধন করিয়াছেন, তাহার ফলে একটি বিশাল ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। যে-কোনো তৈল এই উপায়ে রূপান্তরিত করিতে পার যায়। হাইড্রোজেনের মাত্রা অনুসারে ঘুতের ন্যায় কোমল, চৰ্ব্বির তুল্য ঘন, মোমের তুল্য কঠিন অথবা তদপেক্ষাও কঠিন বস্তু উৎপন্ন হয়। অধিকন্তু, উপাদানের বর্ণ ও গন্ধও পুীয় দূর হয়। সর্বপতৈল, নিমতৈল, এমন কি পূতিগন্ধ মাছের তৈল পৰ্য্যস্ত বর্ণহীন গন্ধহীন ঘনবস্তুতে পরিণত ॐध्र । Hydrogenated oil of solidified oil of বনীকৃত তৈল এখন ইউরোপ ও আমেরিকার নানাস্থানে প্রস্তুত হইতেছে। এই ব্যবসায়ে হলাও মুখ্যস্থান মধিকার করিয়াছে এবং ইংলাগুও ক্রমশ: অগ্রসর হইতেছে । একদিন চৰ্ব্বি দ্বারা যে কাজ হইত, এখন বহুস্থলে ঘনীকৃত তৈল দ্বারা তাহা সম্পন্ন হইতেছে। যেসকল উদভিজ্জ ও প্রাণিজ তৈল এতদিন অতি নিকৃষ্ট ও অব্যবহার্য বলিয়া গণ্য হইত, তাহারও সদগতি হইতেছে । রুটি-মাখন বিলাতের জনপ্রিয় খাদা । কিন্তু গরিব লোকে মাথনের খরচ যোগাইতে পারে না, সেজন্য ‘মাৰ্গারিন' নামক কৃত্রিম মাগনের সৃষ্টি হইয়াছে। পূৰ্ব্বে ইহার উপাদান ছিল—চৰ্ব্বি, উদভিজ্জ তৈল, কিঞ্চিং দুগ্ধ এবং ঈষৎ মাত্রায় পিষ্ট গোস্তনের নির্য্যাস । শেষোক্ত উপাদান মিশ্রণের ফলে মার্গারিনে মাখনের গন্ধ ও স্বাদ কিয়ং পরিমাণে উৎপন্ন হয়। ভাল মার্গারিনে কিছু খাটি মাখনও মিশ্রিত থাকে। আজকাল যে মার্গারিন প্রস্তুত হইতেছে তাহাতে চৰ্ব্বি ও স্বাভাবিক উদ্‌ভিজ্জ তৈল প্রায় থাকে না, তৎপরিবর্ষে মাথনের দ্যায় ঘনীকৃত তৈল দেওয়া হয়, কিন্তু অন্যান্য উপাদান পূৰ্ব্ববং বজায় আছে । চকোলেট টফি প্রভৃতি খাদ্যে পূৰ্ব্বে মাথন দেওয়া হুইত, এখন প্রায় ঘনীকত তৈল দেওয়া হইতেছে, তাহার ফলে লাভ বাড়িয়াছে এবং, বিকৃতির আশঙ্কা ও কমিয়াছে । বিস্কুটে ও ক্রমশঃ চৰ্ব্বির পরিবর্ষে ঘনীকত তৈল চলিতেছে, সেজন্য কোনো কোনো ব্যবসায়ী সগৰ্ব্বে বলিতেছেন— র্তাহাদের মলি থাইলে হিন্দু-মুসলমানের জাতি যায় না। সাবান ও অন্যান্য বহু ব্যবসায়ে ঘনীক্লত তৈলের প্রয়োগ ক্রমশঃ প্রসারিত হইতেছে । মোট কথা, বিশেষ বিশেষ কৰ্ম্মের উপযুক্ত অনেক প্রকার ঘনীকত তৈল প্রস্তুত হইতেছে এবং লোকেও তাহার প্রয়োগ শিখিতেছে । এই নুতন বস্তুর ব্যবহার কয়েক বৎসর পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকাতেই আবদ্ধ ছিল। কিন্তু উৎপাদন-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িগণ নব নব ক্ষেত্রের সন্ধান করিতে লাগিলেন । অচিরে দৃষ্টি পড়িল এই দেশের উপর। ভারতগাভী সৰ্ব্বদা হা করিয়া আছে, বিলাতী বণিক্‌ যাহা মুখে গুজিয়া দিবে তাহাই নির্বিচারে গিলিবে এবং দাতার ভণ্ড দুগ্ধে ভরিয়া দিবে। অতএব বিশেষ করিয়া এই দেশের জন্য এক অভিনব বস্তু স্থঃ হইল—“vegetable product” বা “উৰ্দুভিজ্জ পদার্থ”। ব্যবসায়িগণ প্রচার