পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৮ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড করিলেন –ইহাতে স্বাস্থ্যহানি হয় না, ধৰ্ম্মহানি হয় না, এবং পবিত্রতার নিদর্শনস্বরূপ ইহার মার্ক দিলেন—মহীরুহ বা পদ্মকোরক বা নবকিশলয় । ভারতের জঠরাগ্নি এই বিজ্ঞানসস্তুত হবির আহুতি পাইয়া পরিতৃপ্ত হইল, হালুইকর ও হোটেলওয়ালা মহানন্দে স্বাহ বলিল, দরিদ্র গৃহস্থবধু লুচি ভাজিয়া কৃতার্থ হইল। দেশের সর্বত্র এই বস্তু ক্রমে ক্রমে প্রচলিত হইতেছে, এবং শীঘ্রই পল্লীর ঘরে ঘরে কেরাসিন তৈলের ন্যায় বিরাজ করিবে এমন লক্ষণ দেখা যাইতেছে । আজকাল বহুস্থলে ভোজের রন্ধনে স্কৃতের সহিত আধাআধি ইহা চলিতেছে। ধৰ্ম্মভীরু ঘি-ওয়ালার কুষ্ঠা দূর হইয়াছে, এখন আর চব্বি ভেজাল দিবার দরকার নাই, মহীরুহ-মার্ক মিশাইলেই চলে । কিন্তু এত গুণ এত সুবিধা সত্ত্বেও এই দ্রব্যের বিরুদ্ধে কয়েকজন উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন । কলিকাতাকর্পোরেশনে এবং বিভিন্ন প্রাদেশিক কাউন্সিলে এ সম্বন্ধে বহু বিতর্ক হইয়া গিয়াছে, অবশ্য তাহাতে কোনো ফল হয় নাই। ঘনীকৃত তৈলের সপক্ষে ও বিপক্ষে যে-সকল যুক্তি দেওয়া হইয়াছে তাহার মৰ্ম্ম এই – সপক্ষ বলেন—খাটি ঘি নিশ্চয়ই খুব ভাল জিনিষ, তাহার সহিত আমরা প্রতিযোগিতা করিতেছি না। কিন্তু সকলের ঘি খাইবার সঙ্গতি নাই। অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে যাহা তেল দিয়া প্রস্তুত করিলে ভাল হয় না, যথা লুচি কচুরি গজা মিঠাই কালিয়া চপ । এই সকল খাদ্য ভাজিবার জন্য বাজারের ভেজাল ঘিয়ের বদলে অপেক্ষাকৃত সস্তা অথচ নির্দোষ ঘনীকৃত তৈল ব্যবহার করিবে না কেন ? ইহাতে ভাল ঘিয়ের স্বগন্ধ নাই সত্য, কিন্তু দুৰ্গন্ধও নাই, এমন কি কোনো গন্ধই নাই। ইহাতে খাবার ভাজিলে তেলে-ভাজা বলিয়া বোধ হইবে না, বরং ঘিয়ে-ভাজা বলিয়াই ভ্রম হইবে, অথচ বাজারের ঘিয়ের দুৰ্গন্ধ অনুভূত হইবে না। ঘিয়ের উপর ভারতবাসীর যে প্রবল আসক্তি আছে তাহ অন্য তৈলে মিটিতে পারে না, কিন্তু নিৰ্গন্ধ ঘনীকৃত তৈলে বহুপরিমাণে মিটিবে। সাধারণ লোকের ঘিয়ের উপর লোভ আছে কিন্তু পয়সা নাই, সেজন্যই ভেজাল ঘি চলিতেছে। দূষিত চৰ্ব্বি-মিশ্রিত ভেজাল খি না খাইয়া নির্দোষ ঘনীকৃত তৈল ব্যবহার করিলে স্বাস্থ্য ও ধৰ্ম্ম দু-ই রক্ষা পাইবে। যদি স্কৃতের স্বগন্ধ চাও, তবে ঘনীকৃত তৈলের সহিত কিঞ্চিৎ বিশুদ্ধ ঘৃত মিশাইয়া লইতে পার, বাজারের ভেজাল ঘি খাইয়৷ আত্মবঞ্চনা করিও না । বিপক্ষ বলেন-ভেজাল ঘি খুবই চলে ইহা অতি সত্য কথা । কিন্তু ঘনীকৃত তৈলের আমদানির ফলে ঐ ভেজাল বাড়িয়াছে এবং আরও বাড়িবে | ভেজাল ঘিয়ে চৰ্ব্বি চীনাবাদাম-তৈল ইত্যাদির মিশ্রণ যত সহজে ধরা যায়, ঘনীকৃত তৈলের মিশ্রণ তত সহজে ধরা যায় না। যাহার সজ্ঞানে বা চক্ষু মুদিয়া সস্তায় ভেজাল ঘি কেনে তাহাদিগকে কেহই রক্ষা করিতে পারিবে না। কিন্তু যাহারা সাবধানতার ফলে এপর্য্যস্ত প্রবঞ্চিত হয় নাই, এখন তাহারাও অজ্ঞাতসারে ভেজাল কিনিতেছে । মাখন গলাইলেও বিশ্বাস নাই, কারণ তাহাতেও মার্গারিনআকারে ঘনীকৃত তৈল প্রবেশ করিয়াছে। আর এক কথা —স্কৃতে ভাইটামিন আছে, ঘনীকৃত তৈলে নাই, অতএব স্কৃতের পরিবৰ্ত্তে ঘনীকৃত তৈলের চলন বাড়িলে লোকের স্বাস্থ্যহানি হইবে। আর, যতই বৃক্ষ লতা ফল ফুলের মার্ক। দাও এবং উদভিজ্জ পদার্থ বলিয় প্রচার কর, উহা যে অতি সস্তা মাছের তেল হইতে প্রস্তুত নয় তাহারই বা প্রমাণ কি ? ব্যবসাদার মাত্রেই ত ধৰ্ম্মপুত্র नग्न ! এই বাদামুবাদের উপর মন্তব্য অনাবশ্বক, বহু দূরদর্শী দেশহিতৈষী ব্যক্তি স্থির করিয়াছেন—ঘনীকৃত তৈল সৰ্ব্বথা বর্জনীয়। কেবল একটা কথা বলা যাইতে পারে—ভাইটামিনের যুক্তি প্রবল নয়। ঘৃতে যে ভাইটামিন থাকে তাহা তপ্ত অবস্থায় বায়ুর স্পর্শে নষ্ট হয়। সাবধানে মাখন গলাইয়া যি করিলে ভাইটাফুি সমস্তই বজায় থাকে । কিন্তু বাজারের ঘি তৈয়ারির সময় বিশেষ যত্ব লওয়া হয় না, গোয়ালা ও আড়তদারের গৃহে একাধিকবার উন্মুক্ত কটাহে জাল দেওয়া হয়, তাহাতে ভাইটামিন অনেকটা নষ্ট হয়, অবশু কিছু অবশিষ্ট থাকে। হালুইকরের কটাহে যে ঘি দিনের পর দিন উত্তপ্ত করা হয় তাহাতে কিছুমাত্র ভাইটামিন