পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WO9 o প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড না হইতেছে, সে দিকে দৃষ্টি থাকে না। কেহ সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেও দেখিতে ইচ্ছা হয় না। বাঘ দেখিয়া ভয় পাইলে পলাইতে ব্যস্ত হই । ভয়ে মনের কি পরিবর্তন ঘটিল তাহ দেখিবার অবসর থাকে না। সামান্ত সামান্ত বিষয়েও দৃষ্টি অন্তমুর্থ না হইয়া বহিমুখে ধাবিত হয়। মনকে তাহার স্বভাবগত বহিমুখিত হইতে প্রতিনিবৃত্ত করিয়া অন্তমুর্থ না করিতে পারিলে মনোবিৎ হওয়া যায় না। হিন্দুশাস্ত্রের আদর্শের দিক দিয়া দেখিতে গেলে এই হিসাবে মনোবিজ্ঞানের নি সকল বিজ্ঞানের উপরে। আত্মার সাক্ষাৎকারের োই হিন্দুধর্মের চরম উপদেশ । শাস্ত্রকারেরা বলেন, আত্মা অন্নময় ইত্যাদি পঞ্চকোষ দ্বারা আবৃত। মনোময়কোষ ইহাদের অন্যতম। মনোময় কোষের ভিতর দিয়া না যাইলে আত্মদর্শন সম্ভব নহে। মনোবিদ্যা এই মনোময় কোষের স্বরূপ বুঝাইতে চেষ্টা করে, সেজন্য মনোবিদ্যা আত্মদর্শনের সহায়ক। একমাত্র মনোবিদ্যাই বিভিন্ন বিজ্ঞানের মধ্যে সাত্ত্বিক বিদ্যা, অন্যান্য সমস্ত বিজ্ঞান রাজসিক। তাহারা মনকে বহিমুখ করিয়া কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত করে । মনোবিদ্যা মনকে অস্তমুখ করে ও আত্মজ্ঞান লাভে সহায়ক হয় । বিজ্ঞানের ক্ষেত্র প্রত্যেক বিজ্ঞানই নিজ নিজ আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে একটা গণ্ডী ঠিক করিয়া লয়। বিজ্ঞানের প্রথম অবস্থায় এই গণ্ডী খুব নির্দিষ্ট না হইলেও বিজ্ঞান যতই উন্নতি লাভ করে গণ্ডী ততই স্পষ্টতর হয়। প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সহিত ভূতবিদ্যা, কিমিতি-বিদ্যা ইত্যাদি নানা বিজ্ঞান জড়িত ছিল । পুরাকালে কেহ পৃথক কিমিতিবিদ্যার আলোচনা করিতেন না। যিনি চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা করিতেন তিনি চিকিৎসাতত্ত্বের অঙ্গরূপে কিমিতি-বিজ্ঞান শিখিতেন। যেদিন হইতে ভূতবিদ্যা ও কিমিতিবিদ্যা চিকিৎসাশাস্ত্র হইতে পৃথক হইল এবং নিজ নিজ গণ্ডী ও আলোচ্য বিষয় স্থির করিয়া লইল, সেইদিন হইতেই এই দুই বিদ্যা দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে লাগিল। এখনও চিকিৎসককে কিমিতি-বিদ্যা শিখিতে হয়, কিন্তু এই বিজ্ঞানকে কেহ চিকিৎসা-বিজ্ঞানের অন্তর্গত বলিয়া মনে করেন না । কিমিতি-বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় চিকিৎসা-বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হইতে পৃথক বলিয়া এখন সকলেই জানিয়াছেন। অবশ্য এই দুই বিজ্ঞানের পরস্পর আদানপ্রদান থাকা কিছু বিচিত্র নহে। মনোবিজ্ঞানের স্বাতন্ত্র্য মনোবিদ্যা প্রথমতঃ দশনশাস্ত্রের অন্তর্গত বলিয়। বিবেচিত হইত। অল্পদিন হইল মনোবিদ্যা দর্শনশাস্ত্র হইতে পুথক হইয়া নিজের ক্ষেত্র নির্দেশের চেষ্টা, করিতেছে। এখনও অনেক মনীষী মনোবিদ্যাকে স্বাতন্ত্র্য দান করিতে স্বীকৃত নহেন। একদিকে দার্শনিক যেমন মনোবিদ্যার উপর নিজের দখল সাব্যস্ত করিতে ব্যস্ত, অপরদিকে তেমনি শারীরশাস্ত্রবিদ ( Physiologist) বলিতেছেন, মনোবিদ্যার উপর অধিকার আমার । শরীরের বিশেষ বিশেষ পরিবর্তনে মনের পরিবর্তন সাধিত হয়। শরীরের পরিবর্তন যখন শারীরবিদ্যার আলোচ্য বিষয়, তখন তাহার আনুষঙ্গিক মানসিক পরিবর্তনও শারীরবিদ্যার অন্তর্গত হওয়া উচিত। শারীরবিদ্যা ছাড়া মনোবিদ্যার পৃথক অস্তিত্ব থাকিতে পারে না । আরও একদিক হইতে মনোবিদ্যার স্বাতন্ত্র্য সম্বন্ধে আপত্তি উঠিতেছে। কোনো কেনো প্রাণিবিং বলিতেছেন, মনোবিদ্যা বিজ্ঞানের আসন পাইতে পারে না। পরের মন আমাদের প্রত্যক্ষের বিষয় নয় এবং সে সম্বন্ধে কিছুই নিশ্চিত জ্ঞান সম্ভবপর নহে। অপরের কথায় বা ব্যবহারে তাহার মনোভাব প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু তাহা প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত নয় বলিয়া বৈজ্ঞানিকের পরিত্যজ্য । ইতরপ্রাণীর মনের যেমন আলোচনা, চলে না, তাহার ব্যবহার মাত্র পর্য্যবেক্ষণ করা যায়, সেইরূপ মানুষেরও মনের আলোচনা না করিয়া কোন অবস্থায় পড়িলে তাহার কিরূপ ব্যবহার হয় তাহাই বৈজ্ঞানিকের আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত। এই হিসাবে, মনোবিদ্যার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নাই—তাহা প্রাণিবিদ্যার. অস্তগত মাত্র । -