পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@gఫి শব্দটা বায়ুর কম্পনমাত্র। শারীরবিৎ বিচার করিতেছেন, সেই শব্দে কর্ণপটহ কিরূপ নড়িতেছে, স্নায়ুমণ্ডলীতে কি প্রকার বিদ্যুৎ-প্রবাহ চলিতেছে, মস্তিষ্কের কোন বিশেষ ংশে কি পরিবর্তন ঘটিল ইত্যাদি। প্রাণিবিং দেখিতেছেন—সেই শব্দ শুনিয়া কোন জীবের মুখের রেখার কি বিকার ঘটিল, কে শব্দায়মান ঘণ্টার নিকট গেল, কেই বা দূরে গেল, ঘণ্টা শুনিয়া কে নৃত্য করিল, কেই-বা লাঠি বাহির করিল, ইত্যাদি। দার্শনিক ভাবিতেছেন—এই শব্দ মানুষের মনকে কতটা উচ্চস্তরে লইয়া যাইতে পারে, শব্দ শোনার আনন্দে আনন্দময়ের কি সন্ধান পাওয়া যায়, পরমপুরুষের কোন সত্তা শব্দে প্রকাশিত হয়, শব্দ সত্য না ঘণ্টা সত্য, না উভয়ই মিথ্যা, মায়ামাত্র ইত্যাদি। মনোবিং দেখিতেছেন, ঘণ্টার শব্দের স্বরূপ কি, সেই শব্দের অনুভূতির সহিত অন্যান্য শব্দের সাদৃশ্য বা পার্থক্য কোথায়, ইত্যাদি। একই ঘটনাকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন প্রকারে দেখিয়া থাকেন। প্রত্যেকেরই ক্ষেত্র পৃথক। প্রত্যেকেই ঘটনার একটা বিশিষ্ট দিক দেখিতেছেন। পদার্থবিদের কাছে শব্দের অনুভূতিটা আবশ্বকীয় বিষয় নহে— তাহ গৌণ ব্যাপারমাত্র। আবার মনোবিদের কাছে শব্দের অনুভূতিটাই মুখ্য বিষয় ; ঘণ্টার বা বায়ুর কম্পন গৌণ ঘটনা। পদার্থের কম্পন ভিন্ন সাধারণতঃ শব্দের উৎপত্তি হয় না, অতএব মনোবিৎ ও পদার্থবিদের আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন হইলেও তাহীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান । পদার্থবিদের কাছে শব্দের অনুভূতি শব্দায়মান পদার্থের কম্পনের পরিচায়কমাত্র। এ অনুভূতি না থাকিলেও র্তাহার চলে। পদার্থবিং বধির হইলেও যন্ত্র-সাহায্যে ত্বক কিংবা চক্ষুর দ্বারা কম্পন নির্ণয় করিতে পারেন। কিন্তু বধির মনোবিং শব্দের অস্তিত্বই জানেন না। শব্দায়মান পদার্থের কম্পন তাহার কাছে কম্পনমাত্র,—তাহা শব্দ নহে। “শব্দ” কথাটা আমরা দুই বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করি বলিয়াই পদার্থবিদের শব্দ ও মনোবিদের শব্দকে অনেক সময় একই বস্তু মনে করিয়া ভ্ৰমে, পতিত হই । শারীরবিৎ বলেন, শব্দায়মান বস্তুর কম্পন বায়ুতে সংক্রামিত হয় এবং তাহা কৰ্ণপটহে আঘাত করিয়া কৰ্ণপটহকে আন্দোলিত করে। এই আন্দোলনে

  • مبی..-س۔سببیہی۔ :-\یم*بی.سی...می.

মস্তিষ্কে উপনীত হইয়া বিশেষ অংশে আঘাত করে । তাহাতেই শব্দের অনুভূতি হয়। অতএব শব্দের অনুভূতির স্থান মস্তিষ্ক। শব্দায়মান বস্তু না থাকিলেও যদি কর্ণমধ্যস্থ স্বায়ু অন্ত উপায়ে উত্তেজিত করা যায় তাহ হইলেও শব্দের অনুভূতি হয়। চক্ষুতে আঘাত করিলে অনেক সময় আলোকের অনুভূতি হয়। বহির্জগতে শব্দ বা আলোক না থাকিলেও শব্দ বা আলোকের অনুভূতি হইতে পারে। স্বপ্নে বিভিন্ন অনুভূতি স্বপ্রসিদ্ধ। শারীরবিৎ যখন বলেন, অনুভূতি মস্তিষ্কে হয় তখন তাহার অর্থ এই বুঝিতে হইবে যে, মস্তিষ্ক না থাকিলে অনুভূতি হইত না । ইহার অর্থ এমন নয় যে, মস্তিষ্কের মধ্যেই শব্দ হইতেছে। মনোবিদের অাছে এক হিসাবে মস্তিষ্কের অস্তিত্বই নাই। হাতে স্পর্শকুভূতি হয়, জিহবায় রসামুভূতি হয়। সে হিসাবে মস্তিষ্কে কোন অনুভূতিই হয় না । শব-ব্যবচ্ছেদ করিলে মস্তিষ্ক আছে জানিতে পারি, নচেৎ নহে। মাথার মধ্যে দপ দপ, টন্‌ টন, মাথাঘোরা, ভারবোধ ইত্যাদি সংবেদন অনুভূত হইতে পারে মাত্র। মনোবিং অগত্যা বলিবেন, শব্দবোধ মাথায় হয় না, কানে হয় ; স্পৰ্শবোধও সেইরূপ মস্তিষ্কে না হইয়া ত্বকেই হইয়া থাকে। এইখানে শারীরবিদ্যা ও মনোবিদ্যার পার্থক্য স্পষ্ট । মনোবিদের কাছে মানুষের মাথা চোখ মুখ হাত পা ইত্যাদি বস্তু সত্য, কিন্তু মস্তিষ্ক, যকৃৎ, প্লীহা ইত্যাদির বিশেষ বিশেষ প্রত্যক্ষ অনুভূতি নাই। আমরা মস্তিষ্কে দয়া, মায়া ইত্যাদি মনোভাব অমুভব করি না। এই সকল মনোভাবের সহিত যে-সকল সংবেদন জড়িত থাকে হৃদয়ের উপরেই তাহদের স্থান নির্দেশ করিয়া থাকি। এই জন্য দয়ালুকে সহৃদয়’ ব্যক্তি বলি। হিন্দুশাস্ত্রকারগণও হৃদয়কে রাগদ্বেষ আদির উৎপত্তিস্থান বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। দেখা যাইতেছে, শারীরশাস্ত্রবিদের কাছে যাহা সত্য, মনোবিদের কাছে তাহা সত্য না হইতেও পারে। বিভিন্ন বিজ্ঞানের ক্ষেত্র বিভিন্ন বলিয়া জানিলে এ বিষয়ে ভুল হইবে না। পদার্থবিজ্ঞানে শৈত্য বা অন্ধকার বলিয়া কোন সত্তা