পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মানুষের মন 989 নাই । ইহারা ‘অভাব পদার্থ। তাপের ও আলোকের অভাব শৈত্য ও অন্ধকার । মনোবিদের নিকট এই উভয় পদার্থই সং পদার্থ। তাপের ও আলোকের যেমন বিশিষ্ট অনুভূতি আছে, শৈত্য ও অন্ধকারেরও সেইরূপ নিজস্ব অনুভূতি আছে। রঙের উজ্জ্বলতাও (brightness ) মনোবিদের অনুসন্ধেয় পদার্থ। ইহার আনুষঙ্গিক কোন বস্তু বা ব্যাপার পদার্থবিদ্যায় এখনও ধরা পড়ে নাই। মানসিক ব্যাপারের বিশিষ্টতা মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় ও অন্যান্য বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। অধিকাংশ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুই জড়পদার্থ। পদার্থবিং বা কিমিতিশাস্ত্ৰবিং যে-সকল বস্তু লইয়া গবেষণা করেন, তাহাদের রূপ রস গন্ধ স্পর্শ শব্দ ইত্যাদি জড়গুণ আছে। জড়পদার্থের গুরুত্ব আছে ও তাহ। পরিমিত স্থান অধিকার করে । স্থির জড়পদার্থ গতিশীল হইলে অথবা তাহাতে অন্য পরিবর্তন ঘটিলে বিজ্ঞানবিং পরিবর্তনের কারণ-স্বরূপ বিভিন্ন ‘শক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেন। এই সকল জড়শক্তির জড়গুণ সুস্পষ্ট না হক্টলেও তাহাদের বিশেষত্ব এই যে, তাহারা জড়বস্তুর অবস্থা পরিবর্তন ঘটাইতে পারে ও এক জড়শক্তি আর এক জড়শক্তিতে রূপান্তরিত হইতে পারে। বৈদ্যুতিক শক্তি তাপে রূপান্তরিত হয়, তাপ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়, চৌম্বকশক্তি হইতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, বিদ্যুৎ হইতে আলোক হয়, ইত্যাদি । মনোবিদের আলোচ্য পদার্থে কোন স্কুল জড়ধৰ্ম্ম নাই। পদার্থবিং চিনি সম্বন্ধে আলোচনা করিতে পারেন, কিন্তু চিনির মিষ্টত|গুণের আলোচনা মনোবিদের অধিকারে । পদার্থবিদের চিনির রূপ আছে, স্বাদ আছে, গুরুত্ব আছে ; তাহ পরিমিত স্থান অধিকার করে। কিন্তু মনোবিদের চিনির স্বাদ বা মিষ্টতার কোন দর্শনীয় রূপ নাই, কোনো গুরুত্ব নাই, তাহ স্থান অধিকার করে না। চিনি এক মণ বা দুই মণ হইতে পারে। তাহ কোনো পাত্র আংশিক বা পুরা ভৰ্ত্তি করিতে পারে, সাদা বা ময়লা হইতে পারে। কিন্তু মিষ্টতার ওজন নাই, এক সের দুই সের মিষ্টত হয় না, এক বাটি মিষ্টতাও হয় না । অবশ্য মিষ্টতার কম-বেশী হইতে পারে। ক্রোধ একটা মানসিক ব্যাপার এবং তাহ, মনোবিদের আলোচ্য বিষয়। ক্রোধের কম-বেশী আছে, কিন্তু ক্রোধের কোনে। বর্ণ নাই, স্বাদ নাই। ক্রোধ স্থান অধিকার করে না, ক্রোধের কোন ওজনও নাই। কোনো জড়শক্তির প্রভাব ক্রোধের উপর আসিতে পারে না । জড়শক্তি ও চিৎশক্তি জড়শক্তি জড়শরীরকে পরিবর্তিত করিতে পারে, কিন্তু কোনো মানসিক ব্যাপারে জড়শক্তির প্রভাব নাই । কোনো ব্যক্তিকে আঘাত করিলে তাহার যে ক্রোধ হয় তাহা জড়শক্তি হইতে উৎপন্ন, একথা বলা চলে না। জড়শক্তি শরীরে পরিবর্তন ঘটাইয়াছে এবং সেই পরিবর্তনের আনুষঙ্গিক মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। আনুষঙ্গিক বলিয়াই মানসিক পরিবর্তন যে জড়শক্তির দ্বারা সংঘটিত হইয়াছে, এরূপ স্বীকার করা চলে না। কেন-না তাহ হইলে স্বীকার করিতে হয় যে, জড়শক্তি জড়পদার্থ ব্যতীত অন্তরূপ পদার্থেও পরিবর্তন ঘটাইতে পারে। এ সম্বন্ধে পরে আরও বিশদ আলোচনা করা যাইতেছে । মানসিক ব্যাপারে সাক্ষাৎভাবে জড়শক্তির প্রভাব না মানিলে এমন একটি শক্তি স্বীকার করিতে হয় যাহার দ্বারা মনের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে । মনের অবস্থা প্রতি মুহূৰ্ত্তেই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের কারণস্বরূপ মানসিক শক্তির কল্পনা করা যাইতে পারে। এই মানসিক শক্তি বা চিৎশক্তি কেবল মানসিক ব্যাপারেই কাৰ্য্যশীল, জড় ব্যাপারে নহে। বহিজগতে কোনো পরিবর্তন ঘটিলে যেমন বলি কোনো জড়শক্তির সাহায্যে তাহা ঘটিয়াছে, মনোমধ্যে কোনে পরিব স্তন ঘটিলে সেইরূপ বলিব ইহার মূলে চিৎশক্তি রহিয়াছে। দেহ ও মনের সম্বন্ধ মনোবিদের আলোচ্য বিষয় কি এবং তাহার গণ্ডী কতটা এতক্ষণে তাহা বোঝা গেল। মানসিক ব্যাপারের আলোচনা করিতে গেলে একটা প্রশ্ন প্রথমেই মনোবিদের