৩য় সংখ্যা ] নহে, বরং না থাকাই বিচিত্র। প্রাণিদেহ জড় হইলেও তাহাতে চিৎশক্তি আছে। প্রাণ থাকিলে চিৎশক্তির কল্পনায় কোন ব্যাঘাত নাই। জড়ে যদি প্রাণের গুণ থাকা সম্ভব হয় তবে চিৎশক্তি থাকাও সম্ভব। জড়বস্তু আহায্যকুপে প্রাণিশরীরে প্রবেশ করিয়া প্রাণের সংস্পর্শে আসিলে প্রাণবান জীবকোষে পরিণত হয়, তাহা না হইলে প্রাণিশরীরের বৃদ্ধি হইত না। প্রাণের গুণ জড়ে অব্যক্তভাবে না থাকিলে তাহ! জীবিত বস্তুতে পরিণত হইত না । জগদীশচন্দ্র জড়ে প্রাণের অল্পরূপ ক্রিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণিত করিয়াছেন । জড়ে অব্যক্ত প্রাণশক্তির সহিত চৈতন্যশক্তি থাকা সম্ভব । এ কল্পনা কষ্টকল্পনা ব| দার্শনিক রহস্যবাদ নন্তে । থিওরি । ঘটনার ধারাবাহিকতা ও তানিবাৰ্য্যতা সমস্ত জড়জগৎ অচ্ছেদ্য কায্যকারণ শুখলে আবদ্ধ । যাহ। কিছু ঘটিতেছে সমস্তই তৎপূর্ব ঘটনাবলীর অবশ্যম্ভাবী ফল । জড়জগতে কোনো ঘটনার স্বাধীনতা নাই । যাহা আপাতদৃষ্টিতে বিনা কারণসম্ভূত মনে হইতেছে, অন্তসন্ধান করিলে তাহারও কারণ আবিষ্কার করা যাইতে পারে । ঘটনার মধ্যে অনিবায্যত আছে বলিয়াই বৈজ্ঞানিক অনেকসময় কোন ঘটনা কথন ও কিরূপে ঘটিবে পূৰ্ব্ব হইতে বলিতে পারেন। জ্যোতিমী গণনার দ্বারা কবে স্বৰ্য্যগ্ৰহণাদি হইবে পূর্বেই জানিতে পারেন । যে বিজ্ঞান যত অগ্রসর হইয়াছে সেই বিজ্ঞানে ভবিষ্য ঘটনার নির্দেশ তত অধিক সম্ভবপর। কায্যকারণ সম্বন্ধ আছে বলিয়৷ পর পর ঘটনার মধ্যে কোনো ছেদ বা অবকাশ নাই । কারণরূপ ঘটনার পরিণতিতেই কায্যক্সপ ঘটনা উৎপন্ন হইতেছে এবং তাহাই আবার পরবত্তী ঘটনার কারণ হইতেছে। একটা অবিচ্ছেদ্য যোগস্থত্ৰ পূৰ্ব্বাপর ঘটনাগুলিকে সংযুক্ত করিয়া রাখিয়াছে। পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী ঘটনার সহিত সঙ্গন্ধ না রাখিয়া কোনে। পরবত্তী ব্যাপার ঘটিতে পারে না। বৈজ্ঞানিক কোনো ভূইফোড় বা খামখেয়ালী ঘটনার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। আকাশে হঠাৎ ধূমকেতু দেখা দিল । সাধারণে ইহাকে আকস্মিক ঘটনা বলিবেন । মানুষের মন ইত বিজ্ঞানসম্মত উচ্চ ব| w8% কিন্তু বৈজ্ঞানিক জানেন, দৃষ্টিপথের অতীত থাকিলেও পূৰ্ব্ব হইতেই ধুমকেতুর অস্তিত্ব ছিল । ধূমকেতু নির্দিষ্ট পথ ধরিয়া নির্দিষ্ট গতিতে আসিয়া নিদিষ্ট সময়ে উদিত হইয়াছে মাত্র। এই ব্যাপারে আকস্মিকতা কিছুই নাই । ঘটনায় অবিচ্ছেদ্য ধারাবাহিকত ও অনিবায্যত ‘ স্বীকার না করিলে কোনো বিজ্ঞানই সম্ভবপর হয় না। মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধেও এই কথা সত্য । যদি বলি মানসিক ঘটনাগুলি যদুচ্ছা মনে উঠে, পূৰ্ব্বাপর মনের অবস্থার সহিত তাহার সম্বন্ধ নাই, তবে মনোবিজ্ঞান বলিয়া কিছুই থাকিতে পারে না। অনেক বিদ্বান ব্যক্তিও মনোরাজ্যে কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধ মানেন না । তাহারা মনে করেন, মনোরাজ্য স্বাধীন রাজ্য। কাৰ্য্যকারণরূপ দাসত্বশৃঙ্খল সেখানে কাহাকেও পীড়া দেয় না। দুঃখের সহিত বলিতে হইতেছে, এরূপ চিন্তার মূল্য নাই। একশ্রেণীর ব্যক্তি জড়জগতেও কার্য্যকারণ সম্বন্ধ মানেন না। র্তাহার বলেন, ফল গাছ হইতে নিজের স্বভাবে মাটিতে পড়ে, তাহার আবার কারণ কি ? বৈজ্ঞানিক ভাবিতেই পারেন ন। ধে, কোনো ঘটনা আকস্মিক হইতে পারে, তা জড়জগতেই কি আর মনোজগতেই কি । সংজ্ঞান ও নিজ্ঞান মন মনোদৈহিক সহচারবাদ ও মানসিক ঘটনার অনিবায্যত এবং কাৰ্য্যকারণ সঙ্গন্ধ জানিলে ব্যাপার কি দাড়ায় দেখা যাক । সুষুপ্তির সময়ে আমাদের মনে কোনো চিন্তা থাকে না । ক্লোরোফরমে অজ্ঞান ব্যক্তিরও মনের চিস্তাশূন্য অবস্থা অকুমান করা যায়। এই প্রকার অজ্ঞান অবস্থায় মনের কোনো বৃত্তি আছে বলিয়াই মনে হয় ন,—ধারাবাহিক মানসিক ব্যাপারে একটা ছেদ বা অবকাশ ঘটিয়াছে অকুমান হয়। আশ্চর্য্যের বিষয়, স্বযুপ্তি হইতে উঠিলে বা চেতনা ফিরিয়া আসিলে পূর্বের সমস্ত ঘটনাই স্মৃতিপথে আসে। অতএব চেতনার অভাবেও পূৰ্ব্বাপর মানসিক ঘটনার যোগস্থত্র ছিন্ন হয় নাই বুঝিতে হইবে । যাহা ছেদ বা অবকাশ বলিয়া মনে হইতেছিল তাহা সমস্ত মনের নহে, মাত্র মনের এক অংশের বা
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।