পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖®bሙ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ാ অসাধ্য এই ব্যাধিই তাকে নিয়ে এল সমুদ্রের দেশে । বলা বাহুল্য, গোলাদারি দোকান আর নেই । সেই টাকায় খরচা চলচে । জীবনকে আমি কলকাতায় দেখেচি । বললে,—এ রোগের বৈশিষ্ট এই যে, মৃত্যুকে এতে তিলে তিলে অনুভব করা যায়। অন্য ব্যাধির মৃত অচৈতন্য করে রাখে না। চমৎকার । কিন্তু পঙ্কজবাবু, হাতে আর শ’খানেক টাকা মাত্র আছে। যদি মরতেই হয় তবে সেইগুলি শেষ হ’বার সঙ্গেই যেন আমারও শেষ হয় । জড়িয়ে গেলাম। দুঃখিনী ভারতবর্ষের সহস্ৰ কোট দুঃখের কথা মনে করে আশ্রজল ফেলার পরিবর্তে জীবনের রুগ্ন দেহ কোলে তুলে নিলাম। আবার বনলতা নিজের হাতে রোধে খেতে দিল । ধৰ্ম্মশালার বাস তুলে দিলাম । সেদিন রাত্রে বনলতা ঘুমিয়ে পড়েচে । বারটা হ’বে হঠাৎ জীবনের একটা যন্ত্রণ বেড়ে উঠলো। বললে বাক্সে একটা ওষুধ আছে, বনোকে জাগাও। কিন্তু বনলতার নিদ্রা-শিথিল মুখের দিকে চেয়ে ওকে জাগাতে পারিনি । যা • দিনের প্রখরতীয় কোনো দিন চোখে পড়েনি, রাত্রির মাথায় তা বোঝা গেল । সে যে কি তা বুঝতে পারি, বলতে পারি না । সে এক প্রগাঢ় ক্লাস্তি, সুগোপন দারিদ্র্যের ইতিহাস । চাবিটা ওর আঁচল থেকে খুলে নিলাম, বাক্সও খুললাম নিজেই। কিন্তু ওষুধ খুজতে খুজতে হঠাৎ এমন একটা জিনিষ চোখে পড়ে গেল যা জীবনে কোনো দিন আশা করিনি । একখানি ছবি । স্কুলে ফুটবল খেলায় নাম করেছিলাম ; কি-একটা ফাইনালের গ্রপ ছবি, আমিও ছিলাম। বনলতার কলকাতা ত্যাগের পর একদিন আবিষ্কার করি,— ছবিটা নেই। কিন্তু সেটা যে আজ বনলতার বাক্সে পাব, তা কে জানত । মাও এ কথা জানতেন বলে মনে হয় না, কিন্তু বনলতার এই গোপন-সংগ্রহের অর্থ যে কি তা কেমন করে বলি ? তার স্বল্পায়ু কলকাতার জীবনের স্মৃতি যাতে মুকুন্দ পুরের আগাছা-জঙ্গলের মধ্যে একেবারেই বিলুপ্ত না হয়ে যায়, বোধ করি সেইজন্য, কিংবা,—? জানি না । জুলুকে ভালবেসে ফেললাম এবং সে ভালবাসার প্রতিদানও পেলাম। রাত্রে ও আমার পাশে পড়ে ঘুমোয়, দিনের বেলায় কেবল আমারই পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু জুলুর মধ্যে অস্থিরতা নেই, ওর প্রভু যে রুগ্ন, এ কথাটা কেমন করে যেন ওর মনের মধ্যে গিয়ে পৌছেচে। জীবন গোলাদারি দোকান চালায় বটে, কিন্তু তার রুচি অমার্জিত নয়, সে কথা জুলুকে দেখলেই বোঝা যায়। দলের স্বরেশ্বরের কাছ থেকে চিঠি পেলাম — যাওয়া চাই, নতুন করে একটা সমিতি গড়তে চায় । আমাকে নইলে ওর চলবে না । এ কথা আমিও জানি ; কিন্তু স্বরেশ্বরকে যাবার আশ্বাস দিয়ে হঠাৎ কোনো চিঠি দিতে পারলাম না । বনলতার সামনে যাবার কথা তোলা আমার পক্ষে সহজ নয়। সুরেশ্বর আমার ওপর মৰ্ম্মান্তিক আসন্তুষ্ট হবে বুঝতে পারচি । 磷 磷 禄 禄 বনলতার সঙ্গে দেখা হবার তের দিন পরে জীবনের অবস্থা হঠাৎ শোচনীয় হয়ে উঠলো । হ’বারই কথা । শেষের ক'দিন ভাল পথ্যও জুটছিলো না। বনলতা বললে,— দাদা ওটাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন, নইলে জুলুকে বিক্রী করে. বুঝলাম। কিন্তু জীবন যতদিন আছে, ততদিন সত্যিই ওকে বিক্রী করা সম্ভব নয় । সুরেশ্বরকে চিঠি লিখে কিছু টাকার ব্যবস্থা করলাম,— সামান্তই । কিন্তু জীবনের অবস্থার কোনো উন্নতি হ’ল না, আরও তের দিন পরে এক ঝলক রক্তের সঙ্গে জীবনের এবারের জীবন-কাহিনী শেষ হয়ে গেল । জীবন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, অনেক দিন থেকেই পুড়ছিল। কিন্তু আমার পায়ে ও লোহার বেড়ী পরিয়ে দিয়ে গেল । বহু জাতি, বহু মত, বহু ধৰ্ম্মে বিভক্ত, বহু রকমের দুঃখ দুর্দশায় ঘেরা আমার ভারতবর্ষের মধ্যে,