পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মতিলাল Հ ծ চেয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে বললুম—তোমার চিকিৎসা না হ’লেও তবুও তো তুমি আমাদের সেবা পেলে—এক বার আমাদের কথা ভেবে দেখ । হিমানী বললে—মরতে আমার বড় ভয় করছে ভাই । তোমরা যদি আগে যেতে তা হ’লে আমার কোনো ভয় ছিল না। আমায় সেখানে একলা থাকতে হবে। মা গিয়েছেন বটে, কিন্তু বাবা যখন ক্ষম করেন-নি তখন মা কি ক্ষমা করবেন ? কিছুক্ষণ পরে সে উৎসাহভরে বলে উঠল—কিন্তু খুশী-ঠাকুরপে আছে না সেখানে ! ও, তবে কোনো ভাবনা নেই। সে ভারী অভিমানী—ত হোক, কই তুমি তো অভিমান করে থাকতে পারনি। পৌষের মাঝামাঝি একদিন সকালবেল হিমানী বললে—ঠাকুরপো, আজ ভাই বিদায়ের দিন। আজ আর আমার জালা-যন্ত্রণ কিছু নেই। মনে হচ্ছে আজই দিনশেষের সঙ্গে সঙ্গে— হিমানী হাসিমুখে কথাটা আরম্ভ করেছিল, কিন্তু শেষ করবার আগেই তার দুই চোখ দিয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তার হাত ছু-খানা আমার হাতের মধ্যে নিয়ে দেখলুম বরফের মতন ঠাণ্ডা। নাড়ী—একেবারে শেষ অবস্থা ! তার জন্য কয়েকদিন থেকে একটা ঝি রাখা হয়েছিল । তার তদ্বিরে হিমানীকে রেখে আমি ছুটলুম মতিলালের সেই খবরের কাগজের আপিসে। সেখানে গিয়ে দেখি মতিলাল একটা চেয়ারে উবু হয়ে বসে বন বন ক’রে কি লিখে চলেছে। দু-পাশে দু-জন কম্পোজিটার দাড়িয়ে আছে। একখানা কাগজ শেষ হোতেই একজন সেটা তার হাত থেকে একরকম টেনে নিয়ে চলে গেল। সেই ফুরসতে একবার মুখ তুলে আমাকে দেখে সে বললে—কি খবর ? বললুম—বৌদির অবস্থা খুর খারাপ বলে মনে হচ্ছে। শীগগীর চল, তোমাকে ডাকতে এসেছি। মতিলাল ততক্ষণে আর একখানা কাগজ টেনে লিখতে স্বঙ্ক ক’রে দিলে। তার কাও দেখে বললুম—কি, কথার चबांब निऋ न ८य दफ़ ? মতিলাল হেসে লিখতে-লিখতেই বলতে লাগল— ইংলণ্ডের প্রধান মন্ত্রীর মস্ত একটা ভুল ধরে ফেলা গেছে— তারই একটা জবাব আর জেনারেল ফ্রেঞ্চের সমরনৈতিক চালের আর একটা মারাত্মক রকমের ক্রটি—তার ওপরে খানিকট মন্তব্য লিখতেই হবে—মনিবের হুকুম। আজকে কিছু পাবার আশা আছে, লেখাগুলো যদি শেষ না ক’রে যাই তা হ’লে সে-গুড়েও বালি পড়বে। তুমি বরং হিমানীর কাছে গিয়ে বোসো—আমি আসচি। তখুনি আবার ছুটলুম হিমানীর কাছে। আমায় দেখে সে জিজ্ঞাসা করলে—কোথায় গিয়েছিলে ? বললুম—এইখানেই গিয়েছিলুম একটু— এদিকে বারোটা বেজে গেল তবুও মতিলালের দেখা নেই। আমি ব্যস্ত হচ্ছি দেখে হিমানী বললে—সে ঠিক আসবে—আমারই একটু কাজে গেছে। আরও কিছুক্ষণ কাটবার পর হিমানী হঁাপাতে স্থাপতে বললে—ঠাকুরপে তুমি বাড়ী থেকে চট্‌ ক’রে ঘুরে এস। যাও, আজকে আর আমার অবাধ্য হয়ে না। সেখান থেকে বেরিয়ে মতিলালের আপিসের দিকে ছুটলুম। সেখানে গিয়ে দেখি মতিলাল নেই। ঘণ্টাখানেক আগে সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে । নিজের বাসাতে এসে খেয়ে-দেয়ে যখন তাদের সেখানে গিয়ে পৌছলুম তখন তিনটে বেজে গিয়েছে। গিয়ে দেখি হিমানীকে একখানা লাল চওড়া পাড়ের শাড়ী পরানো হয়েছে, তার মাথায় একরাশ সিছর, পায়ে আলতা, পা থেকে গল অবধি ফুলে ঢাকা । খাটের কাছে গিয়ে দেখি হিমানীর একখানা হাত মতিলালের হাতে, দুটি চোখ স্থিরভাবে মতিলালের দিকে চেয়ে আছে, আর তার দুই গাল বয়ে অবিরল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমাকে দেখে মতিলাল বললে—এই, বোধ হয় মিনিট-পাচেক হ’ল কণ্ঠ রুদ্ধ হয়েছে। সেদিন দিনের আলো নিভে যাবার সঙ্গে-সঙ্গে হিমুনীর অঙ্গ হিম হ’য়ে গেল । হিমানী মারা যাবার পরের দিন থেকে মতিলাল খবরের কাগজের চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে সারাদিন বসে